Wednesday, February 14, 2018

Blog Administrator

আল মালহামা



আল মালহামা হল একটি যুদ্ধ। একটি অত্যন্ত তীব্র ও ভয়ঙ্কর মহাযুদ্ধ। আল মালাহীম হল পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক যুদ্ধের সম্মীলনে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ। একটি দীর্ঘমেয়াদী সংঘাত। যা বছরের পর বছর ধরে চলবে। এটা হল অনেকগুলো ছোট যুদ্ধের সম্মীলনে একটি বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, আল মালাহীম সংঘঠিত হবে মুসলিম এবং আর রোমানদের মধ্যে। কারা এই “রোমান”? রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-এর সময়ে “রোমান” বলতে কোন রাজনৈতিক সত্ত্বা বা শক্তিকে বোঝানো হতো না বরং একটি জাতিকে বোঝানো হতো সেই সময়ের রোমানরা ছিল – ইউরোপিয়ানরা সুতরাং “রোমান” নামটি প্রযোজ্য হবে ইউরোপ এবং এর বর্ধিত অংশগুলোর জন্য উত্তর আমেরিকা (আমেরিকা, কানাডা) ও অস্ট্রেলিয়া। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলছেন রোমান এবং মুসলিমদের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ চলবে, এবং এর নাম আল মালাহীম এবং এসব ঘটনাবলী সংঘঠনের সময়েই আল-মাহদীর আবির্ভাব ঘটবে এবং ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এসবই ঘটবে আল-মালাহীমের সময়। সুবহান’আল্লাহ, আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি পশ্চিমা বিশ্ব রোমানদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছে এবং আল মালাহীমের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে, আর মুসলিমরা এখনো ঘুমাচ্ছে, আলোচনা আর শান্তির গালগল্প বিশ্বাস করে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
.
ইউরোপীয়ানরা খ্রিস্টান ধর্মের একটি বিকৃত রূপ পেয়েছিল। তাঁরা কখনোই ঈসা [আলাইহিস সালাম] – এর প্রকৃত ধর্মে ঈমান আনেনি। তাঁরা শুরুতে ছিল মুশরিক আর তারপর তাঁরা খ্রিস্টান ধর্মের এমন একটি রূপের অনুসারী হয়েছে যা শিরক। তাঁদের অবস্থা প্রাচ্যের খ্রিস্টানদের মতো না, যারা এক সময় ঈসা [আঃ] সত্যিকার অনুসারী ছিল। দীর্ঘদিন ধরে তাওহীদের আলো থেকে দূরে অন্ধকার ও অজ্ঞানতার মধ্যে ইউরোপ বসবাস করছে। ইউরোপিয়ানরা বুনিয়াদি ভাবে একটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ ধর্মকে বিকৃত করেছে। আমি খ্রিস্টান ধর্মের যেই বিকৃত রূপ তাঁরা অনুসরণ করে তাঁর কথা বলছি যেটা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একটি ধর্ম “কেউ তোমার একগালে আঘাত করলে তুমি অপর গাল পেতে দাও” [বাইবেলঃ ম্যাথিউ ৫:৩৮]। এর চাইতে বেশি শান্তিপ্রিয় হওয়াতো সম্ভব না। আর আরব ও প্রাচ্যের খ্রিস্টানরা এরকমটাই ছিলো, তাঁরা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় ছিল। যদিও তাঁরা ইতিমধ্যেই তাঁদের ধর্মে ত্রিত্ববাদ এবং শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছিলো। কিন্তু ইউরোপ, এই শান্তিপ্রিয় ধর্মের প্রকৃতিই বদলে দিয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মকে পৃথিবীর ইতিহাসে সবচাইতে বেশি রক্তপাত ঘটানোর জন্য দায়ী ধর্মে পরিণত করার কৃতিত্ব ইউরোপীয়ানদেরই প্রাপ্য। বর্তমান পৃথিবীর বুকে এমন কোন ধর্ম নেই যা মানব ইতিহাসে এই ধর্মের চাইতে বেশি রক্ত ঝরিয়েছে এবং এ সম্পর্কিত সংখ্যাগুলো নিজেরাই এর স্বপক্ষে সাক্ষ্য দেয় ক্রুসেডের সময় কতো মুসলিমকে খ্রিষ্ট ধর্মের নামে হত্যা করা হয়ছিলো? ইউরোপিয়ানদের নিজেদের আভ্যন্তরিক ধর্ম যুদ্ধে কতো মানুষ মারা গিয়েছে? ইউরোপীয়ানদের ধর্ম যুদ্ধে শত শত লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে আর ইউরোপীয়ানরা এমন এক কাজে সফল হয়েছে যা করতে আর কেউ সক্ষম হয় নি, যে, তাঁরা তিনটি মহাদেশের আদি অধিবাসীদের পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম কিছু আগে কখনো ঘটেনি। তাঁরা উত্তর আমেরিকা, দক্ষিন আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীদের নিশ্চিহ্ন করেছে। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার খাতিরে তাঁরা অতি অল্প সংখ্যক আদিবাসীদের বাঁচিয়ে রেখেছে অতীতের স্মারক হিসেবে আর বাকি সবাইকে শেষ করে দিয়েছে। আজ যেসব আদিবাসী এবং নেটিভ আমেরিকানরা বেচে আছে, সেটা হল গবেষণার স্বার্থে।
.
ইউরোপ এমন এক সত্ত্বা যা শয়তানের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবার যোগ্যতা রাখে। কারণ ইসলামের সাথে লড়াই করার জন্য শয়তান সবচাইতে খারাপদেরকেই খুঁজছে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] – এর হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি কিছু নির্দিষ্ট ঘটনা প্রবাহের মাধ্যমে এই দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হবে, যার শুরুতে মুসলিমরা থাকবে খুবই দুর্বল আর এই যুদ্ধ শেষ হবে মুসলিমদের দ্বারা পুরো দুনিয়া শাসিত হবার মাধ্যমে। এটা হবে সবচেয়ে মারাত্মক ফিতানের সময় আবার একই সাথে সবচেয়ে বেশি বরকতময় সময়। এই সময়েই আল মাহদী এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] আসবেন এবং এই সময়েই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এখন একথাগুলোর অর্থ এই না যে সব রোমানরাই ইসলামের শত্রু হবে। কারণ ইসলাম প্রতিনিয়ত মানুষের হৃদয় জয় করে নিচ্ছে। এই ব্যাপারটা খুবই কৌতুহল উদ্দীপক যে যদিও রোমানরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করছে এবং আমরা হাদীস থেকে জানি রোমান আর্মি মুসলিমদেরকে ওইসব রোমানদের হস্তান্তর করতে বলবে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। যদিও তাঁদের বর্ণ এবং জাতীয়তা ভিন্ন তাও তাঁরা আমাদের ভাই, কারণ এখন তাঁরা মুসলিম এবং ইসলাম প্রতি আনুগত্য অন্য যেকোন পরিচয়ের চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ ঘটনা সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত আছে। এবং এ ব্যাপারে বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহীহ হাদীস বর্ণিত আছে, যেমন মুসলিম শরীফের একটি হাদীস হলঃ রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- রোমানরা তোমাদের আক্রমণ করবে এবং আস শামের আল আমাকে তাঁবু খাটাবে (অবস্থান গ্রহণ করবে)। মদিনা থেকে একটি বাহিনী তাঁদের মোকাবেলা করতে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেন – “এবং তাঁরা হবে তাঁদের সময়কার শ্রেষ্ঠ মুমিন” এবং এই মুসলিম বাহিনী তাঁদের অবস্থান গ্রহণ করবে, এবং রোমানরা তাঁদের বলবে – “ আমাদের লোকদের আমাদের হাতে তুলে দাও”, অর্থাৎ ওইসব রোমান যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং মুসলিমরা বলবে, “ আমরা কখনোই আমাদের ভাইদের তোমাদের হাতে তুলে দেবো না”। সুতরাং উভয় দল যুদ্ধ যুদ্ধ করবে, মুসলিম বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ হার স্বীকার করে পালিয়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আল্লাহ্‌ কখনোই তাঁদের তাওবাহ কবুল করবেন না”। জিহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে যাওয়া কবীরা গুনাহর একটি [সাহীহ বুখারী – কিতাব ৫১, হাদীসঃ২৮]। জিহাদের ময়দান থেকে পালানো সাতটি কবীরা গুনাহর একটি। “আল মু’বিকাত” – “মুবিক” অর্থ এমন কিছু যা পূর্বের সব আমল ধ্বংস করে দেয়। তাই আপনি সারা জীবন আল্লাহ-র আনুগত্য করার পর যদি মাত্র একটি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যান, তাহলে আপনি আপনার পূর্বের সকল আমল হারাবেন। সুতরাং আল্লাহ্‌ এই একতৃতীয়াংশের তাওবাহ কখনো কবুল করবেন না। “এবং এই বাহিনীর এক-তৃতীয়াংশ নিহত হবে, এবং তাঁরা হবে আল্লাহ-র নিকট শ্রেষ্ঠ শহীদ” “এবং অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – এই এক তৃতীয়াংশ বিজয় লাভ করবে এবং কোন ফিতনাই তাঁদের দমাতে পারবে না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তাঁরা অগ্রসর হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবে”। কনস্টান্টিনোপল হল ইস্তামবুল। অর্থাৎ ইস্তাম্বুল দু’বার বিজিত হবে। প্রথম ইস্তাম্বুল বিজিত হয়েছিলো মুহাম্মাদ আল ফাতীহ-এর সময় এবং আবার বিজিত হবে, নতুন করে আল মালহামার সময়। অর্থাৎ আস শাম পর্যন্ত সব এলাকা রোমানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইতিমধ্যেই সেখানে পশ্চিমাদের আর্মি বেইস আছে। শুধু সেখানেই না, সব জায়গাতেই তাঁদের আর্মি বেইস ছড়িয়ে আছে। তো মুসলিমরা যখন কনস্টান্টিনোপল জয় করবে এবং গানীমাহ ভাগাভাগি করতে থাকবে। তখন তাঁরা একটি কন্ঠ শুনতে পাবে যা ঘোষণা করবে মাসীহ আদ-দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটেছে, তাই তাঁরা আবার আস শামে ফিরে যাবে এবং সেখানে গিয়ে বুঝতে পারবে ঘোষণাটা মিথ্যা ছিল। এটা হবে একটা মিথ্যা গুজব। কিন্তু তখন ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] অবতরন করবেন এবং এই সময়েই আদ-দাজ্জাল আবির্ভূত হবে এবং ঈসা [আলাইহিস সালাম] নিজ হাতে তাঁকে হত্যা করবেন [সাহীহ মুসলিম, কিতাব ৪, হাদীস নং ৬৯২৪]।
এটা হল, কনস্টান্টিনোপল বিজয়, দাজ্জালের আবির্ভাব এবং ঈসা বিন মারইয়াম [আলাইহিস সালাম] এর অবতরন সম্পর্কিত একটি হাদীস। একই রকম আরেকটি হাদীস আছে যা এটার সাথে অত্যন্ত সাদৃশ্যপূর্ণ। তৃতীয় আরেকটি হাদীস হল, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “একটা সময় আসবে যখন ইরাক চারদিক থেকে অবরুদ্ধ হবে এবং অবরোধকারীরা কোন অর্থ বা খাবার ইরাকের অভ্যন্তরে ঢুকতে দেবে না”। সাহাবারা রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু ওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই লোকেরা কারা যারা ইরাক অবরোধ করবে?” রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন- “আল আযম”। আল আযম বলতে অমুসলিম, অনারবদের বোঝানো হয়, আল-আযম – হল তাঁরা যারা আরবী বলতে পারে না। সুতরাং অনারবরা এই নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধ জারি করবে এবং রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- “এবং তারপর আস-শাম”…সিরিয়া, জর্ডান, ফিলিস্তিন এবং লেবানন আস-শামের অন্তর্ভুক্ত এবং এর কেন্দ্র হল জেরুসালেম, ফিলিস্তিন, এটাই হল আস শামের কেন্দ্রবিন্দু। ভুলবশত আস শামকে শুধু সিরিয়া হিসেবে অনুবাদ করা হয়, কিন্তু এই পুরো অঞ্চলটা মিলে আস শাম, এবং এর কেন্দ্রে আল কুদস। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- আস শাম একটি অবরোধ এর মধ্যে দিয়ে যাবে। যার ফলে কোন খাবার অথবা অর্থ সেখানে প্রবেশ করতে পারবে না। সুতরাং সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন – “ এর জন্য কারা দায়ী হবে”। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] জবাব দিলেন – “আর রুম” – রোমানরা। এবং তারপর রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বললেন – আমার উম্মাহর মধ্যে একজন খলীফা থাকবে যে হিসাব ছাড়াই মানুষের মাঝে অর্থ-সম্পদ বিলিয়ে দেবে। আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আর রুমের আলোচনায় কেন আমি এই হাদিসটি বর্ণনা করছি। কারণ হল, প্রথমত এই মুহুর্তে ইরাক একটি নিষেধাজ্ঞা এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই অবরোধ জারি করেছে জাতিসংঘ। অর্থাৎ এর জন্য শুধু রোমানরা দায়ী না, দায়ী সবাই। কিন্তু তারপরেই রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – “আস শামের উপর আরেকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে” এবং এটা করবে রোমানরা। অনেক উলামা আছেন যারা মনে করেন, ইরাকের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহ হল আল মালহীমের সূচনার ভূমিকা, কারণ এর শুরুটা হয়েছে ইরাকের মাধ্যমে এবং তারপর এটা সিরিয়ার দিকে অগ্রসর হবে, এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি আমরা আল মালাহীম নামের এই যুদ্ধগুলোর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, আল্লাহু আলাম, এই সবই অনুমান, আমরা এ ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত হয়ে কিছু বলতে পারবো না। কিন্তু ইরাকে এখন যা হচ্ছে সেটা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত, কারণ এটাই হয়তোবা উম্মাহর জন্য একটি অত্যন্ত কঠিন পরীক্ষার শুরু, এটা ভাববেন না এটা আরামদায়ক কোন ভ্রমণ হবে। প্রত্যেক প্রজন্মকেই কোন না কোন বিপর্যয় অতিক্রম করতে হয়।
.
প্রতিটি প্রজন্মের ক্ষেত্রেই এটা ঘটে, কিন্তু কখনো কখনো আপনি শুধুমাত্র দর্শক ভূমিকায় থাকেন এবং অন্য কেউ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আমাদের বাপ-দাদারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করছেন কিন্তু তাঁরা এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেনেনি। তাঁরা মাঠের বাইরে থেকে এই যুদ্ধের ঘটনাপ্রবাহ প্রত্যক্ষ করেছেন। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হল এবং আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম এই যুদ্ধের সাক্ষী হলেও তাঁরা এর দ্বারা সরাসরি প্রভাবিত হন নি। কিন্তু বর্তমানে আমারা যেই পর্যায়ে প্রবেশ করছি তাতে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে মুসলিমদেরকেই। এর আগে মুসলিমদের ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের কিন্তু এখন মুসলিমরা এই সঙ্ঘাতের একদম প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। আগে তাঁরা শুধু হাত গুটিয়ে দেখছিলো, কিন্তু এখন মুসলিমরাই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ করছে। সুতরাং ভবিষ্যতে যাই ঘটুক না কেন সেটা আমাদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে, কারণ ভবিষ্যতের সকল ঘটনাবলীই ঘটবে মুসলিম উম্মাহকে কেন্দ্র করে। সব কিছুর কেন্দ্রে থাকবে মুসলিম ভূখণ্ডগুলো। আপনার যারা সেসময় খবর দেখেছেন তাঁদের মনে থাকার কথা, আজ থেকে পনেরো –বিশ বছর আগে কালে ভদ্রে ইসলাম কিংবা মুসলিমরা খবরের শিরোনাম হতো। আর আজ দেখুন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কোন না কোন ভাবে খবরে শুধু ইসলাম এবং মুসলিমদের কথাই আলোচিত হচ্ছে। সেটা ভালো সংবাদ হোক কিংবা খারাপ। কারণ এখন আমারা ঘটনাপ্রবাহের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছি, অতএব যাই ঘটুক না কেন তা আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে। এখন এই অনুমান যদি সত্যি হয়, যে মুসলিম উম্মাহ তাঁর ইতিহাসের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করছে। এমন এক অধ্যায় যার ঠিক পরেই আগমন ঘটবে উম্মাহর দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের। তাহলে আপনার, আমার সকলের নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন মাঠের বাইরে নিস্ক্রিয়ভাবে না বসে থেকে, মূল ঘটনাপ্রবাহের একেবারে কেন্দ্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করি। কেন? কেন সাহাবারা সবচাইতে সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রজন্ম?
সাহাবারা সম্মানিত এবং সর্বাপেক্ষা উত্তম প্রজন্ম কারণ তারাই সেই প্রজন্ম যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যখন তাবে’ঈনরা আসলেন তখন তাঁদের জন্য ইতিমধ্যেই সবকিছু প্রস্তুত ছিলো। ফলে তাঁরা ইলম শিক্ষা করা এবং দেওয়ার প্রতি মনোনিবেশ করতে পেরেছিলেন। সাহাবারা কিন্তু এই বিলাসিতার সুযোগ পান নি। সাহাবাদের দিন কেটেছিল এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আরেক যুদ্ধক্ষেত্রে, এক বিপর্যয় থেকে আরেক বিপর্যয়ের মোকাবেলায়। সাহাবাদের অভিনব বৈশিষ্ট্য হল, তাঁরা ছিলেন সংখ্যালঘু যারা স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাবে’ঈনরা স্রোতের বিপরীতে যেতে হয় নি, কিন্তু সাহাবাদের স্রোতের বিপরীতে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো। সব কিছু, সারা দুনিয়া সাহাবাদের বিপক্ষে ছিল, এমনও সময় ছিল যে সাহাবারা ঘরের বাইরে যেতে আতঙ্কিত বোধ করতেন, যেমন খন্দকের যুদ্ধের সময় এরূপ অবস্থা হয়েছিলো। সাহাবারা স্বতন্ত্র কারণ তারাই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন। এখন সাহাবাদের তৈরি সেই ভবন ভেঙ্গে গেছে। তাই আজ নতুন এক প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে এই ভবন পুনঃনির্মাণের। তাই আমাদের প্রজন্মের সামনে সুযোগ আছে আমলের দিক দিয়ে সাহাবা কেরাম [রাঃ] –এর সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী প্রজন্ম হবার।
রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] একটি হাদীসে বলেছেন- রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, মুসনাদ ইমাম আহমেদ [হাদীস ১/৩৩৩] এবং আত তাবারানী আল মুজাম আল কাবীর [১১০২৯] এ বর্ণিত হয়েছে, “ইয়েমেনের আদ’আন আব’ইয়ান থেকে বারো হাজার সৈন্যর উত্থান ঘটবে, তাঁরা সংখ্যায় হবে ১২,০০০”। রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, “তাঁরা আমার এবং তাঁদের মধ্যবর্তী সকল লোকের মধ্যে শ্রেষ্ঠ”। অর্থাৎ ইসলামের সম্পূর্ণ ইতিহাসে এই প্রজন্ম হবে সাহাবা [রাঃ]-এর পরেই সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম। সুতরাং বুঝতেই পারছেন এ প্রজন্ম হবে অত্যন্ত সম্মানিত এবং গুরুত্বপূর্ণ এক প্রজন্ম। তাঁরা হবে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান, কারন রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন – মুসনাদে আহমাদ [৩/১৩০], আত-তীরমীযী [হাদীস নং ২৮৭৩] এবং আহমাদ [৪/৩১৯] –এ বর্ণিত হয়েছে, “আমার উম্মাহ বৃষ্টির মতো, তুমি জানবে না এটি আঝোরে কখন ঝরবে, হোক তা শুরু কিংবা শেষ”।
.
এই উম্মাহর শুরু হয়েছিলো রাসূল্ললাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম]-কে দিয়ে এবং এই উম্মাহর শেষ হবে ঈসা [আলাইহিস সালাম]-কে সাথে নিয়ে। সুতরাং আপনি যদি এই ঘটনাপ্রবাহে অংশগ্রহনের কোন সুযোগ পান, তাহলে নিজে ব্যাক্তিগতভাবে এতে অংশ নিন, এবং আপনার সন্তানকে এজন্য প্রস্তুত করুন। আপনি কিংবা আপনার পরের প্রজন্ম যদি এই স্বর্ণযুগের অংশ হতে চায়, তাহলে আপনার উচিত এটা নিশ্চিত করা যে আপনারা ময়দানের একেবারে মাঝখানে আছেন। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না মাঠের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিস্ক্রিয় দর্শক হতে। সুতরাং আজকের সকল মুসলিম, বিশেষ করে তরুণদের জন্য এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যেন তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে। আল্লাহ্‌ আপনার কাছে যে কোরবানি দাবী করবেন, আপনি তাঁর জন্য তৈরী থাকুন। আমরা কোন সাধারণ সময়ে বসবাস করছি না। এটা একটা অভিনব এবং মহাগুরুত্ববহ যুগ। এবং এই গুরুতর ঘটনাগুলোতে হয় আপনি অথবা আপনার পরবর্তী প্রজন্ম অংশগ্রহণ করবে। এবং এজন্য আল্লাহ-র পক্ষ থেকে মহাপুরষ্কার দান করা হবে, তাই আপনি যেন এই পুরষ্কারের ভাগীদার হতে পারেন সেটা নিশ্চিত করুন। এটা নিশ্চিত করুন আপনি যেন এই পুরষ্কারের একটা অংশ হলেও পান। একবার চিন্তা করে দেখুন, আপনার সামনেই এসব ঘটছে কিন্তু আপনি এতে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না – এর চাইতে বড়ো অপচয় এর কি হতে পারে ?আপনি কি বরকতয় স্বর্ণযুগে বেচে থাকার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও হাত গুটীয়ে মাঠের বাইরে বসে থাকবেন? চিন্তা করে দেখুন যারা পরের দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন সেই সাহাবারা কি রকম আক্ষেপ করতেন, কারণ তাঁরা আরো আগে ইসলাম গ্রহণ করেন নি। তাঁরা কেন একদিন আগে মুসলিম হলেন না, তাঁরা এটা নিয়ে পর্যন্ত আক্ষেপ করতেন। আবারো বলছি এটা অনুমান, কিন্তু যদি এক শতাংশ সম্ভাবনাও থাকে এরকম ঘটার তাহলে আপনি এই সুযোগ হারানোর ঝুকি নিতে চাইবেন না। আর এই দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য আপনার কি কি প্রয়োজন? দুটো জিনিসঃ ১। থাবা’ত এবং ২। তাযকীয়া
.
প্রথমত। দৃঢ়সংকল্পতা
.
আপনাকে পর্বতের মতো দৃঢ় হতে হবে। কোন কিছুই যেন আপনাকে নড়াতে, বদলাতে না পারে। আপনার ঈমান শক্ত হতে হবে যার শেকড় আপনার হৃদয়ের গভীরে প্রোথিত। এটা হল এক নম্বর। কারণ এক্ষেত্রে পুরষ্কার যতো বড়ো, ফিতান ও এর থেকে ঝুঁকিও ততোটাই মারাত্মক। ব্যাপারটা ব্যবসার মতো, অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসাগুলোতে ঝুকির হারও বেশি হয়। অর্থাৎ একদিকে যেমন অনেক লাভের সম্ভাবনা থাকে তেমনিভাবে অনেক সম্পদ হারাবারও ঝুঁকি থাকে। সুতরাং আপনি অনেক ‘আযর [পুরষ্কার] পেতে পারেন, কিন্তু আপনি যদি ভুল করেন তবে তাঁর জন্য মারাত্মক মাশুল দিতে হবে।
.
দ্বিতীয়ত। আপনার যা প্রয়োজন হবে তা হল, তাযকীয়া
.
আত্মত্যাগের স্পৃহা। আল্লাহ্‌-র জন্য যাই প্রয়োজন তা ত্যাগ করার জন্য আপনার প্রস্তুত হতে হবে। এটা হতে পারে আপনার নিজের জীবন, আপনার সময়, সম্পদ, পরিবার হতে পারে আপনি যেই ইসলামী দলের সদস্য সেটা আপনাকে ত্যাগ করতে হবে হতে পারে যে উলেমাদের আপনি ভালোবাসেন তাঁদের ত্যাগ করতে হচ্ছে। যেকোন কিছু ঘটতে পারে। আপনি জানেন না কি ঘটবে। কারণ এটা হল এমন এক সময় যখন একজন ব্যক্তি সকালে বিশ্বাসী থাকবে কিন্তু রাত হতে হতে কাফিরে পরিণত হবে। সে মুসলিম হিসেবে ঘুমাতে যাবে কিন্তু জেগে উঠবে মুশরিক হিসেবে। তাই কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নেয়া যাবে না। আল্লাহ্‌ আপনার কাছে যা চান সেটা উৎসর্গ করার জন্য আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। নিজেকে আল্লাহ-র পথের একজন কর্মী হিসেবে ভাবতে শিখুন, আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করবেন, আর ফলাফল আল্লাহ্‌-র হাতে ছেড়ে দেবেন। এবং আপনার রব’ আপনার কাছে যাই চাইবেন, আপনি সেটা দিতে প্রস্তুত থাকবেন। আমি এটা বলছি কারণ আত্মত্যাগ অনেক ক্ষেত্রেই শুধু দুনিয়াবী বস্তু যেমন –সময়, অর্থ, সম্পদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। এমনো হতে পারে যে আপনার শেইখ,তিনি যেই হোন, ভুল পথে আছেন। এরকম হলে, আপনি কি তাঁর অনুসরণ করবেন? নাকি আপনি আল্লাহু সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা বলেছেন সেটার অনুসরণ করবেন? তাই এই দুরূহ সময়ে আমাদের যা প্রয়োজন তা হল, নূর – যা আমাদের অন্ধকারের মধ্যে পথ দেখাবে। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আওয়ালাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন, কিতাব আল ফিতান ওয়া আল মালাহীম, সুনান আবু দাউদ, কিতাব ৩৫, নম্বর ৪২৪৬ –এ, রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এই ফিতানকে গভীর রাতের ঘোরতর অন্ধকারের সাথে তুলনা করেছেন। এই ফিতানের অন্ধকার এতো ঘন যে আপনি কিছু দেখতে পাবেন না। তাহলে কিভাবে আপনি এর মাঝে হাটবেন? কিভাবে সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দেবেন? এ অবস্থায় সঠিক দিক নির্দেশনা জন্য আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো থাকতে হবে। এবং আপনার হৃদয়ে এই আলো তৈরি করার উপায় হল, আজ থেকেই আপনার ঈমানকে সুদৃঢ় করার জন্য কাজ শুরু করা। কারণ আমাদেরকে প্রচুর প্রতারণা এবং মিথ্যাচারের মুখোমুখি হতে হবে, এজন্যই একে “ফিতনা” বলা হয়। ফিতনা যখন আসে, তখন সবকিছু খুব ঝাপসা, অস্পস্ট এবং কুয়াশাচ্ছন্ন থাকে, আর যখন ফিতনা দূর হয় তখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ততোক্ষনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু যতোক্ষন ফিতনা বিদ্যমান থাকে ততোক্ষণ কোন কিছু পরিষ্কার দেখা সম্ভব হয় না। তাই আপনার হৃদয়ে ঈমানের আলো, আল্লাহ-র পক্ষ থেকে নূর থাকতে হবে।
.
তাই ভাই-বোনেরা আপনারা প্রস্তুতি নিন, নিজেদের তৈরী করুন, উদ্যোগী হোন। কোন কিছুকেই নিশ্চিত হিসেবে ধরে নিবেন না। দৈনন্দিন জীবনের আরাম-আয়েশে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন না। নিজেকে প্রস্তুত করুন। যে সময় আসছে তাঁর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন, বিশেষ করে ঈমানের দিক দিয়ে, কারণ আপনি যদি প্রত্যক্ষ ভাবে এ ঘটনাবলীর সাক্ষী নাও হন, আজ হল সেই সময় যখন উম্মাহ বিশ্বমঞ্চের কেন্দ্রে অবস্থান করছে । সুতরাং বর্তমানে দুনিয়াতে যাই ঘটছে সেটা কোন না কোন ভাবে আমাদের উপর প্রভাব ফেলবে এবং এই বিপর্যয়ের সময় আপনার সুদীর্ঘ পথ একাকী পাড়ি দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ এমনো অবস্থা দেখা দিতে পারে যে আপনার আশেপাশেও কেউই সত্যের পথে অগ্রসর হতে রাজী না, একাকী পথচলার মতো দৃঢ়তা এবং সক্ষমতা আপনার অর্জন করতে হবে।
.
আমরা যখন ফিতনার সময়ের আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ভাবছি তখন আমরা উদাহরণ হিসেবে সিয়ামের কথা চিন্তা করতে পারি। ফাযরের আযানের আগেই আমাদের সাহরী খেতে হয়। মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আকবার” বলা মাত্র সময় শেষ। তাই ফজরের আগে যদি আপনি সাহরী না খান [প্রস্তুত না হন] তাহলে একবার ফিতনা শুরু হয়ে গেলে আপনার ক্ষুধার্ত থাকতে হবে। তাই সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা না করে তাড়াতাড়ি সাহরী খেয়ে নিন। কুর’আনে আল্লাহ্‌ আযযা ওয়াজাল বলেছেন, “যেদিন আপনার পালনকর্তার কোন নিদর্শন আসবে, সেদিন এমন কোন ব্যক্তির বিশ্বাস স্থাপন তার জন্য ফলপ্রসূ হবে না, যে পূর্ব থেকে বিশ্বাস স্থাপন করেনি অথবা স্বীয় বিশ্বাস অনুযায়ী কোনরূপ সৎকর্ম করেনি। আপনি বলে দিন, অপেক্ষা করো, আমরাও অপেক্ষমান”। (সূরা আন’আম ১৫৮) আল্লাহ্‌র চিহ্নসমূহ যখন প্রকাশিত হয়ে যাবে তখন ঈমান এনে কারো লাভ হবে না, যদি না সে আগেই ঈমান এনে থাকে ও সৎকর্ম করে। আপনি যদি আগেই ইমান না এনে থাকেন তাহলে ফিতানের সময় উপস্থিত হলে আপনি ঈমান আনতে পারবেন না, কারণ ততক্ষনে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। একমাত্র ঈমান আনার পরেই আপনি এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও অগ্রসর হতে পারবেন। সুতরাং আগামীকালের জন্য অপেক্ষায় না থেকে এখনী আপনার সাহরি গ্রহণ করুন।
.
আল মালাহীমের সাথে সম্পর্কিত পরবর্তী চিহ্ন হল, কিতালুল ইয়াহুদঃ মুসলিম এবং আল ইয়াহুদের মধ্যে যুদ্ধ। ইস্রাইল রাস্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই সংঘর্ষের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপিত হয়েছে সাহাবাদের এই ব্যাপারটা বুঝতে কষ্ট হয়েছিলো। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন [আল হায়তামী, মাজমা আল যাওয়াইদভুল এবং ইবনে হাজর আল আসকালানী] “আল ইয়াহুদের সাথে তোমাদের একটি যুদ্ধ হবে, তোমরা জর্ডান নদির পশ্চিম পাড়ে থাকবে আর ইয়াহুদরা থাকবে নদীর পূর্ব পাশে”। সাহাবাদের এই হাদিসটি বুঝতে সমস্যা হচ্ছিলো, কারণ সেই সময় ইহুদীরা শক্তিশালী ছিলো না আর তখন মুসলিমরা জর্ডান পর্যন্ত পৌঁছেনি। তাই জর্ডানে তখন কোন মুসলিম ছিল না। হাদিসটির বর্ণনাকারী বলেছেন, জর্ডান নদী কোথায় আমি তাই জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম], এমন ঘটনার কথা বলছিলেন যেই ঘটনার সংঘটনের জায়গার নামই আমরা জানতাম না। রাসূলুল্লাহ [সাল্লাললাহু আলাইহী ওয়া সাল্লাম] বলেছেন- এই জায়গায় [জর্ডান নদী] তোমরা যুদ্ধ করবে। ইন শা আল্লাহ্‌, ইস্রাইল, “বৃহত্তর ইস্রাইল” গঠনে ব্যর্থ হবে।আজ তাঁদের যে সীমান্ত আছে তাঁরা এর চাইতে বেশি আর অগ্রসর হতে পারবে না। কারণ বর্তমানে তাঁদের সীমান্ত একেবারে জর্ডান নদীর তীরে এবং এখানেই যুদ্ধ সংঘটিত হবে এবং এই যুদ্ধের ফল হবে আন নাসর লিল মুমীনীন মুমিনরা বিজয় লাভ করবে। এই হাদীসে আরো একটি ব্যাপার উল্লেখিত আছে যা বেশ কৌতুহলউদ্দীপক। এটা হবে এমন এক যুদ্ধ যা সাক্ষ্য দেবে শুধু যারা যুদ্ধ করছে তারাই না, এমনকি প্রকৃতিও এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। গাছ ও পাথর মুসলিমকে ডেকে বলবে “আমার পেছনে এক ইহুদী লুকিয়ে আছে…”। এই গাছ ও পাথরগুলো যখন মুসলিমদের ডাকবে তখন তাঁরা আমাদের কি বলে সম্বোধন করবে? তাঁরা কি বলবে – “হে ফিলিস্তিনি’? অথবা “হে মিশরী”? বা “হে পাকিস্তানী”? – তাঁরা কি বলবে? তাঁরা বলবে “হে মুসলিম!” পাথরও জানবে আপনি মুসলিম কিন্তু আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন সেটা সে জানবে না। কারণ সে শুধু ঈমানকেই চিনতে পারবে।
.
সুতরাং যে যুদ্ধ “লা ইলাহা ইল্লাললাহ”-র পতাকার নিচে হয় না, সেই যুদ্ধ ব্যর্থ। বিজয় তখনই আসবে যখন এটা পরিষ্কার হবে যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই এবং পরিষ্কার হবে যে আপনার একমাত্র পরিচয় হল, আপনি একজন মুসলিম, একমাত্র তখনই মুসলিমরা বিজয় অর্জন করবে।
-----
লিখেছেনঃ Mohammad Ali Ahasan


ট্যাগ
মালহামা, মালাহীম, তাযকীয়া, রোম, রোমান, রোমক, ক্রুসেড, মহাযুদ্ধ

Read More
Blog Administrator

সত্যিকারের জঙ্গিবাদি কারা??



আল্লাহ্‌র দেয়া আদেশ, নিষেধ মেনে চলা ও নবী মোহাম্মদ সঃ এর দেখানো জীবন বিধানকে ইসলাম বলে। আর যারা আল্লাহ্‌র দেওয়া আদেশ, নিষেধ মেনে চলে তাদেরকে বলে মুসলিম।
--
শিরক হচ্ছে আল্লাহ্‌র সাথে কোন কিছুকে সমকক্ষ হিসেবে দার করানো। আর যারা এই কাজটা করে তারা হচ্ছে মুশরিক। এরা জাহান্নামী।
--
#জঙ্গিবাদি_কারা ??
বর্তমান পৃথিবীতে ইসলামের শত্রুরা মুসলিমদেরকে আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করতে বাধ্য করতেছে। আর এটা তারা করিতেছে অত্যন্ত সু-কৌশলে। একটা ছোট উধাহরন দেই।
-
বর্তমানে সকল মুসলিম দেশে গণতন্ত্রের নামে মদ, জুয়া, পতিতাবৃত্তি, নাচ-গান, বাধ্য যন্ত্র, পর্ণ, সুদ, ঘুষ, সমকামিতা, নারি-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, জিনা, বিবাহ বহিরভুত সম্পর্ক সবকিছুকেই হালাল করে দেয়া হয়েছে। আর এই সকল কাজকে হালাল করেছে আমাদের তথা কথিত নেতারা। অথচ আল্লাহ্‌ এই সব কাজকে হারাম করে দিয়েছেন।
-
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এখন আপনি কার নির্দেশ/হুকুম/আইন মানবেন ??
আপনার নেতার না আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্‌র ???
-
এখন আপনি যদি আল্লাহ্‌র আইন ও আল্লাহ্‌র হুকুম মেনে চলেন তাহলে আপনি মুসলিম ও আল্লাহ্‌র সৎ বান্দা হিসেবে বহাল থাকবেন। আর যদি আপনি আপনার নেতার তৈরিকৃত আইন মানেন এবং এর প্রতি অনুগত্য প্রকাশ করেন, তাহলে আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তার সাথে শিরক করলেন। আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তার আইনকে গ্রহন না করে আপনি আপনার নেতার তৈরি আইনকে মেনে নিলেন। এর মানে আপনি আপনার নেতাকে আল্লাহ্‌র চেয়েও আরও বড় মর্যাদা ও ক্ষমতার আসনে বসালেন।
-
এমন অবস্থায় যারা সৎ, হক এবং আল্লাহ্‌ যাদেরকে হক ও বাতিল বুঝার ক্ষমতা দিয়েছেন তারা অবশ্যই ঐ কুফর ও জালিম নেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। এবং আল্লাহ্‌র শত্রু ঐ জালিম নেতা যিনি আল্লাহ্‌র আইনকে বাতিল করে ফেরাউনের মত নিজে আইন তৈরি করে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। আর যারা যুদ্ধ করবে তারাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র কাছে হক মুসলিম। আর যারা ঐ কুফর ও জালিম নেতার আইন মেনে নিবে ওরাই আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করল।
--
আর বর্তমানে আমেরিকা সারা পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র দেওয়া আইনকে বাতিল করে দিয়ে নিজেরা আইন তৈরি করে সকল মুসলিম দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর মুসলিম নামধারী মুনাফিক নেতারাও তাদের সাহায্য করতেছে। আর যারা আমেরিকার ও মুনাফিক নেতাদের তৈরি আইনকে মানবেনা বলতেছে এবং এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছে (এখন পৃথিবীর নানা প্রান্তে লড়াই করতেছে)। আমেরিকা ও মুনাফিক নেতারা এদেরকে জঙ্গি, মৌলবাদি, সন্ত্রাসী বলে উপস্থাপন করে। মিডিয়ার কাজ হচ্ছে এদেরকে সারা পৃথিবীতে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া।
--
আর বর্তমানে কিছু অশিক্ষিত মূর্খ মুসলিম আছে যারা ইসলাম সম্বন্ধে একেবারেই কম জানে এরাও ঐ হক মুসলিমদের জঙ্গি বলে আমেরিকার সাথে তাল মিলাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমেরিকার যুদ্ধ মুসলিমদের জীবনের সাথে নয়, এই মুহূর্তে আমেরিকার যুদ্ধ মুসলিমদের ইমানের সাথে। আগে ইমান ধংস করা হবে, এর পর হত্যা করা হবে জঙ্গী আখ্যা দিয়ে।
--
আপনি যত বড় আলেমই হন না কেন, আমেরিকা আপনাকে কোটি টাকার চাকরী দিবে, বিনিময়ে আপনি শুধু আমেরিকার এই কুফরি সিস্টেমের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবেন। আমেরিকা আপনার কাছে এর বেশী কিছু চায় না। আপাদত আমেরিকা শুধু আপনার ইমানটা চায়।
-
আর আমেরিকার এই মানব রচিত কুফরি সিস্টেমের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করার মানে হচ্ছে #ইবলিশের পায়ে সিজদা করার সমান। এই কুফরি সিস্টেমে ইবলিশ যা চায় সব হালাল আর আল্লাহ্‌ যা চায় সব হারাম।
-
বর্তমানে বেশীরভাগ দেশের সরকার বা অথোরিটি এই কুফরি সিস্টেমে চলতেছে। যে এই কুফরি সিস্টেমের অথরিটিকে সাপোর্ট করবে বা এই অথোরিটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করবে সেই আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করল।
--
আশা করি সবাই বুঝতে পারবেন।

লিখেছেনঃ Umar Ibn Khattab


ট্যাগ
জঙ্গিবাদ, জঙ্গি, শিরক, গণতন্ত্র

Read More

Wednesday, January 24, 2018

Blog Administrator

দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ (দাজ্জাল আসছে প্রস্তুতি সম্পন্ন)



দাজ্জাল কবে আসবে

দাজ্জাল আসার পূর্বশর্ত ও শর্তের পূর্ণতা-

আমরা আগেই বলেছি যে দাজ্জালকে নিজেকে মিথ্যা মাসিহা বলে দাবি করতে হলে অবশ্যই তাকে  দাউদ (আ) সিংহাসন বসে, সোলাইমান (আ) এর মত পুরো দুনিয়া শাসন করতে হবে। আর তা করতে কিছু পূর্ব শর্ত পূর্ণ করতে হবে। এখন আলোচনা করি কিভাবে সেই শর্ত গুলো পূর্ণ হচ্ছে-

১. জেরুজালেম কে জেন্টাইল (যারা ইয়াহুদী নয়) শাসন থেকে মুক্ত করতে হবে

----জেরুজালেম থেকে ইয়াহুদীদের শাসন ছিনিয়ে তাদের কে সেখান থেকে বিতারিত করা হয়েছিল সর্বশেষ ৭০ খ্রিস্টাব্দে। তারপর দুই হাজার বছর ধরে খ্রিষ্টান ও মুসলিম রা জেরুজালেম শাসন করেছিল যথাক্রমে প্রায় ৭০০ ও ১২০০ বছর। কিন্ত সর্বশেষ ১ম বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে ১৯১৭ সালে জেরুজালেমকে মুসলমানদের থেকে ছিনিয়ে নেয় ব্রিটেন (আমরা সেই যুদ্ধ কে ইয়াহুদীদের প্রথম ক্রুসেড মনে করি) আর তারপর সবাই কে অবাক করে ব্রিটেন ব্যলফর ঘোষণা (Balfour Declaration) করে দুনিয়া কে জানিয়ে দেয় “আমরা জেরুজালেমকে ইয়াহুদীদের জাতীয় বাসস্থান হিসেবে তৈরি করে দিব”। আর সেই সময় থেকেই জেন্টাইল শাসন মুক্ত জেরুজালেম প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় যা শেষ হয় ১৯৪৮ সালে।

Balfour Declaration
২. সেখানে সকল ইয়াহুদীদের একত্র করতে হবে ঠিক যেমন সোলাইমান (আ) এর সময় ইয়াহুদীরা সেখানে একত্রে বসবাস করত।

------সেখানে ইয়াহুদীদেরকে একত্র করা শুরু করছিল ব্রিটেন যখন তারা ‘লীগ অফ নেশন’ প্রদত্ত সনদ বলে ১৯১৭-১৯৪৮ সাল পর্যন্ত পবিত্রভুমি শাসন করছিল। পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ইয়াহুদীদেরকে তারা এই সময় জেরুজালেমে নিয়ে আসে, আর মুসলমান নিধন করে তাদের বাসস্থান গড়ে দেই। তাই এই শর্তও পূরণ হয়েছে।

৩. দাউদ (আ)কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ইসরাইল রাস্ট্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।

-----১৯৪৮ সালে ১৪ মে’তে প্রায় ৩০০০ বছর পর ইয়াহুদী রাস্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের কোণঠাসা ব্রিটেন ‘ধাত্রী’ হিসেবে ইসরাইল নামক দেশ জন্ম দেই। এটা কি কোন কাকতালীয় ঘটনা যে ইয়াহুদীরা তাদের ভূমি আবার ৩ হাজার বছর পর ফিরে পেয়েছে?

৪. সোলাইমান আঃ এর সময় ইসরাইলের মানচিত্রে ইসরাইল যত বড়ছিল (Greater Israel) তত বড় হতে হবে, Temple of Solomon মানে হাইকল নির্মাণ করতে হবে।

----- সোলাইমান (আ)এর সময়-- নীল নদ থেকে ফুরাত নদীর মধ্য ভাগ পর্যন্ত আর খাইবার (মদীনার ১৫৩ কিমি উত্তরে) থেকে সিরিয়া পর্যন্ত --ছিল ইসরাইল রাস্ট্র। তারা এই Greater Israel খুব তারাতারি তৈরি করতে চাচ্ছে এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই পরিকল্পনা হলো অনেক গুলো দেশ বা জাতীয়তাবাদে এই ভূখন্ড গুলোকে ভাগ করে দিয়ে জাতীয়তাবাদ, শিয়া-সুন্নি লড়াই ও কিছু ভন্ড খাওয়ারিজ জিহাদি গ্রুপ তৈরি করে মধ্যপ্রাচ্যকে পঙ্গু করে দেয়া হবে, তারপর সুন্দর করে স্থল অভিযান চালিয়ে দখল করা হবে আর এই পরিকল্পনা কতটুকু এগিয়েছে তা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে তাকলেই বুঝা যায়।

Greater Israel Map
অনেক গুলো দেশ বা জাতীয়তাবাদে এই ভূখন্ড গুলোকে ভাগ করার পরিকল্পনা
হাইকল হলো সোলাইমান (আঃ)’র তৈরি মসজিদ ‘মসজিদে আকসা’ ইয়াহুদীরা একে হাইকল বলে। আর হাইকলের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল পবিত্রভুমি (বাইতুল মাকদিস) যা তারা ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইলের ৬ দিনের যুদ্ধে জয়ী হয়ে দখল করেছে। এখন শুধু তারা অপেক্ষা করছে মাসজিদে আকসা কে শহীদ করে হাইকল নির্মাণের। ইতি মধ্যে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করে মাসজিদে আকসাকে দুর্বল করে দেয়া হয়েছে।   


কথিত Temple of Solomon এর নকশা


মাসজিদে আকসা কে দুর্বল করার জন্য খোঁদাই কাজ চলছে
৫. ইসরাইল কে পুরা দুনিয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর হতে হবে ঠিক যেভাবে সোলাইমান (আ)’র সময় ছিল।

----এবং সর্বশেষে ইসরাইলকে সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাস্ট্র বা বর্তমান আমেরিকার মত হতে হবে। কিন্ত এত সহজে ৪ ও ৫ নং উদ্দেশ্য পূর্ণ করা যাবে না। তাই প্রয়োজন আর একটা যুদ্ধের -আর এই যুদ্ধ ইয়াহুদীরা বাধিয়ে দিবে। যাকে আমরা হাদিসের ভাষায় মালহামা (মহাযুদ্ধ) আর খ্রিষ্টানরা আরমোগেডান (Armageddon) বলে থাকে। (ইনশাআল্লাহ্‌ মালহামা নিয়ে একটা আলাদা পর্বে আলোচনা করবো)

শেষ এ এতটুকু বলবো তারা তাদের মাসিহের আগমনের জন্য বেশ সুন্দর প্রেক্ষাপট তৈরি করতেছে। কিন্ত মুসলমানদের এতে ভীত হওয়া চলবে না আমরা জানি পরিশেষে বিজয় মুসলমানদেরই হবে। আল্লাহ্‌ পবিত্র কুরআনে বলেছেন—

وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ

তারা করেছে তাদের ষড়যন্ত্র। আল্লাহর কাছে আছে ষড়যন্ত্রে প্রতিবিধান। যদিও তাদের ষড়যন্ত্র এমন হয় যে, এতে পাহাড়ও টলে যায়। (সূরা-ইব্রাহীম, আয়াত-৪৬)

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে। (সূরা আল-ইমরান, আয়াত-১৩৯) 

চলবে.........

''আল্লাহুম্মা আরেনি আল আশইয়া'আ কামা হিয়া'' (হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক জিনিসের আসল রূপ দেখাও যাতে বাহিরটা দেখে প্রতারিত না হই)

লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed

এই সিরিজের অন্যান্যঃ
ট্যাগ
দাজ্জাল, টেম্পল অব সলোমন, ইহুদী, ইসরাইল, সোলাইমান, মসজিদে আকসা, বাইতুল মাকদিস, জায়নিস্ট, জেরুজালেম

Read More
Blog Administrator

বর্তমান মুসলিম জাতির উপর চালিত নিপীড়নের সঙ্গে অতীতের বনী ইসরাইলের উপর পতিত খোদায়ী গজবের মিল রয়েছে



আন্তর্জাতিক খবর পড়ুয়া কোনো মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয় বর্তমানে আমাদের উপর যে সারা বিশ্বব্যাপী একপাক্ষিকভাবে অত্যাচার, নিপীড়ন চালানো হচ্ছে সেটাকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে সে বলবে "এইগুলা পরীক্ষা চলতেছে!

"অর্থাৎ, উদ্দেশ্যমূলকভাবে চালিত নিপীড়নটাকে এই জাতি "পরীক্ষা চলতেছে" ট্যাগ দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যাবে। সামান্য বোধশক্তি না থাকায় এরা বুঝেও উঠতে পারছে না শাস্তি আর পরীক্ষা এক নয়। আল্লাহ পরীক্ষা নেন মুমিন বা হুকুম অনুসরণকারী বান্দাদের। পরীক্ষার ফলে মুমিনদের মর্যাদা বাড়ে, তারা উপকৃত হন। অন্যদিকে গজব হচ্ছে ভিন্ন জিনিস। এর দ্বারা ধ্বংস হয়। শত শত বছর ধরে মার খাইয়ে, লাঞ্ছনা গঞ্জনা দিয়ে, নারীদের ধর্ষণ করিয়ে, দাস বানিয়ে আল্লাহ্‌ কারো পরীক্ষা নেন না।

আল্লাহ্‌ তায়ালা বনী ইজরায়েলীদেরকে সতর্ক করেছিলেন তাদের দুইবার ফ্যাসাদ সৃষ্টির বিষয়ে এবং দুইবারই তাদেরকে চরম শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্‌ তাঁর কথা রাখেন। প্রথম ঘটনাটি ঘটে খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে, যখন বখতে-নাসারের (Nebuchadnezzar) নেতৃত্বে ব্যাবীলনীয় এক বাহিনী জেরুজালেম অবরোধ করে, তারপর শহরটি পুড়িয়ে দেয়, এর অধিবাসীদের হত্যা করে, সুলাইমান (আ) কর্তৃক তৈরি করা মসজিদ ধ্বংস করে দেয় এবং ইহুদী জনসংখ্যার উৎকৃষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ অংশকে ক্রীতদাস হিসেবে ব্যাবীলনে নিয়ে যায়। যেভাবে আল্লাহ্‌ তায়ালা ঘোষণা করেছেন (বনী ইসরাইল ১৭:১৫-১৬) যে, তিনি সতর্কবাণী না পাঠিয়ে কোনো জনগোষ্ঠীকে ধ্বংস করেন না, ঠিক সেইভাবে নবী ইয়ারমিয়া (Jeremiah) বাইবেলে তাদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছিলেন (ইয়ারমিয়া ৩২:২৬)।


দ্বিতীয়বার, ঈসা (আ) কে ক্রুশবিদ্ধ করার পর যখন ইহুদীরা গর্ব করলো এবং তাঁকে হত্যার ক্রেডিট নিয়ে উল্লাসে ফেটে পড়লো তখন আবার তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি করা হয়। সেনাপতি টাইটাসের (Titus) এর নেতৃত্বে রোমান বাহিনী ৭০ খ্রিস্টাব্দে জেরুজালেম অবরোধ করে। টাইটাস জেরুজালেম শহর ধ্বংস করে দেয়, এর বাসিন্দাদের হত্যা করে ও পবিত্রভুমি থেকে অবশিষ্ট ইহুদীদের বহিষ্কার করে। পবিত্র মসজিদ আল আক্‌সা আবার ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় এবং রোমান সৈন্যরা সেটাকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে, গলিত স্বর্ণ পিন্ডের খোঁজে প্রতিটি পাথরকে এক এক করে আলগা করা হয়, ঠিক যেমনটি ঈসা (আ) সতর্কবাণী দিয়েছিলেন, “একটি পাথরও অপর পাথরের উপর লেগে থাকবে না; সব ভেঙ্গে ফেলা হবে।” ইহুদীদেরকে জেরুজালেম থেকে বহিষ্কারের লোমহর্ষক কাহিনী কোরআনে সুস্পষ্টরূপে তুলে ধরা হয়েছেঃ

"আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে।"

And We conveyed to the Children of Israel in the Scripture that, "You will surely cause corruption on the earth twice, and you will surely reach [a degree of] great haughtiness.

"অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই প্রথম সময়টি এল, তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল।"

So when the [time of] promise came for the first of them, We sent against you servants of Ours - those of great military might, and they probed [even] into the homes, and it was a promise fulfilled.

"অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম।"

"Then We gave back to you a return victory over them. And We reinforced you with wealth and sons and made you more numerous in manpower."

"তোমরা যদি ভাল কর, তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল, তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম, যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়, আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়, সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।"

[And said], "If you do good, you do good for yourselves; and if you do evil, [you do it] to yourselves." Then when the final promise came, [We sent your enemies] to sadden your faces and to enter the temple in Jerusalem, as they entered it the first time, and to destroy what they had taken over with [total] destruction.

"হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর, আমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের (সত্য গোপনকারী/হুকুম অমান্যকারী) জন্যে কয়েদখানা করেছি।"

[Then Allah said], "It is expected, [if you repent], that your Lord will have mercy upon you. But if you return [to sin], We will return [to punishment]. And We have made Hell, for the disbelievers, a prison-bed."

- [বনী ইসরাইল ১৭:৪-৮]


বনী ইসরাইল আল্লাহর শরীয়তকে ছেড়ে যখন অন্য শরীয়ত গ্রহণ করে, তাদের চোখে যখন আল্লাহর আয়াতের থেকে মানবসৃষ্ট জিনিস বেশী আকর্ষণীয় লাগে, তখন যারা আল্লাহর কথা বলে, আল্লাহর নিদর্শনের কথা বলে, আল্লাহর শরীয়তের কথা বলে, সেসব নবীদের তারা ঘৃণা করতে থাকে ও তাদের অত্যাচার নির্যাতন এমনকি হত্যাও করতে থাকে। এতোসব অকাম কুকামের ফলে ইহুদিদের উপর দুইবার এমন গজব নেমে এসেছিল যে, প্রায় দুই হাজার বছর ইহুদিরা পৃথিবীর যেখানেই গেছে, যেখানেই আশ্রয়ের আশায় ছুটে গেছে, সেখানেই তাদের উপর নেমে এসেছে নিপীড়ন, লাঞ্ছনা গঞ্জনা। আজ বিশ্বময় মুসলিম জাতির ঐ একই অবস্থা চলছে।


বনী ইসরাইল মিশরে দাসত্ব করতে করতে ভুলে গিয়েছিল স্বাধীনতা কাকে বলে। তারা সারাদিন গাধার মত ফেরাউনের জমিতে কৃষিকাজ করাকেই বিরাট সম্মানজনক পেশা ভাবতো। আল্লাহপাক যখন মূসা (আ) কে পাঠিয়ে তাদেরকে স্বাধীন জীবন দান করলেন আর মান্না ও সালওয়াকে তাদের খাদ্য হিসেবে পাঠালেন, তারা এই স্বাধীন জীবনযাপনে সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। তাদের চোখে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী জীবনযাপনের চেয়ে ফেরাউনের শরীয়ত অনুযায়ী জীবনযাপনই বেশী আকর্ষণীয় ছিল। তারা স্বাধীনতাকে ছেড়ে গোলামির জীবনযাপনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়ে পড়লো।

"আর তোমরা যখন বললে, হে মূসা, আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না। কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর, তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয়, তরকারী, কাকড়ী, গম, মসুরি, পেঁয়াজ প্রভৃতি। মূসা (আঃ) বললেন, তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও, তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ। আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা। তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এমন হলো এ জন্য যে, তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত। তার কারণ, তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী।" [সুরা বাকারাঃ ৬১]

And (remember) when you said: “O Moses! We cannot endure one kind of food. So invoke your Lord for us to bring forth for us of what the earth grows, of its herbs and its cucumbers and its garlic, its lentils and its onions”. He said: “Will you exchange that which is better (higher) for that which is worse (lower)”? Go down to the settled country (Egypt) and you shall find what you want (ask for). And abasement and humiliation were brought down (branded) upon them, and they incurred the Wrath of Allah, because they disbelieved in the Signs (Verses) of Allah and killed the Prophets wrongfully; this was so because they disobeyed and exceeded the limits.

বর্তমান ইউরোপীয় ছাঁচের আধুনিক সভ্যতায় মুসলমানরাও স্বাধীন জীবনযাপন ত্যাগ করে গোলামির জীবনযাপনের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হচ্ছে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে ভালো চাকর হয়ে সম্মানজনক চাকরির আশায়। ৯টা থেকে ৫টার কর্পোরেট জীবন মুসলিমদের চিন্তাশক্তিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে, তাকে টাকার পূজারি বানিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী শিক্ষার নামে আরেক শিক্ষা সিস্টেম থেকে দু'কলম আরবী শিখে ধর্মব্যবসায়তে নিজেদেরকে সঁপে দিচ্ছে। যাচ্ছে তাই ফতোয়া দিয়ে মানুষকে পথভ্রষ্ট করছে, নামায পড়িয়ে, দোয়া ফুঁকে, জানাযা পড়িয়ে বিনিময়ে নিয়ে পকেট পুরছে।   বিশ্বে কী ঘটছে, কেন ঘটছে তা বোঝার আগ্রহ এই জাতি হারিয়ে ফেলেছে। দিনরাত টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে, ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে ছুটতে ছুটতে, প্রতিযোগিতা করতে করতে এরা মহাশয়তান ইবলিশ দ্বারা ব্রেইনওয়াশড হয়ে গেছে। তাদের কাছে প্রচলিত শয়তানী সিস্টেমের জীবনই গৌরবের জীবন। যদি এখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যা করছ তা গোলামী, তবে তারা এটাকে কৌতুক ভেবে হাসবে। কারণ তারা গোলামির জীবনকেই সম্মানজনক ক্যারিয়ার ভাবছে। এটাই তাদের কাছে এখন স্মার্টনেস।


আমরা যদি বর্তমান আধুনিক সভ্যতার দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই, পৃথিবীর সব দেশে ইউরোপীয় শরীয়ত চলছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, আইন-আদালত, সংস্কৃতি সব কিছুতেই ইউরোপীয়দের শরীয়ত, যার হুবহু কপিপেস্ট করা হয়েছে ফেরাউনের শরীয়ত থেকে। মুসলিম দেশগুলোতেও একই হাল। এই ফেরাউনের শরীয়তকে সভ্যতা ভেবে মুসলমানরা একে আঁকড়ে ধরেছে। রাসুলাল্লাহ (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, এমন সময় আসবে যখন মুসলমানরা অন্য জাতির অনুসরণ করতে করতে এ পর্যন্ত যাবে যে, ঐ জাতি যদি গুইসাপের গর্তে প্রবেশ করে তাহলে আমার জাতিও তাই করবে। ওই জাতি যদি মায়ের সাথে ব্যাভিচার করে আমার জাতিও তাই করবে। আজ তাই করা হচ্ছে। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ করতে গিয়ে আজ এই জাতির বাঁচা-মরার প্রশ্ন, অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের প্রশ্ন উপস্থিত হয়েছে। তবুও এই জাতির বিবেকবোধ উদয়ের নামগন্ধ নেই।

এরা ইউরোপীয় সুদী অর্থনীতিকে হালাল বানিয়ে নিয়েছে। সিস্টেমের সঙ্গে খাপ খাওয়ার জন্য সুদী ব্যাংকের ইসলামী ভার্সন আবিষ্কার করে ফেলেছে। ঠিক যেমন বনী ইসরাইলের আলেম উলেমারা তাদের কিতাবের বাক্য বদলিয়ে সুদী সিস্টেম বসিয়ে নিয়েছিলো। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। আল্লাহ্‌র হুকুম অমান্য করায় অতীতের বনী ইসরাইলের মতই আজ দুনিয়াব্যাপী মুসলিম নামধারী জাতিটির উপর লানত নাযিল হয়েছে। বনী ইজরায়েলের মত তারাও আজ মালাউন জাতিতে পরিণত হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, ভারত, বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রতিটি কোণায় এই জাতি মার খাচ্ছে, তাদের ঘর-বাড়ি, মসজিদ মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে মাতৃভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে, অনাহারে অর্ধাহারে রাখা হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, পানিতে ডুবিয়ে মারা হচ্ছে। বনী ইসরাইলের সাথে যা যা হয়েছিলো এ যেনো ঠিক সে ইতিহাসেরই সুস্পষ্ট পুনরাবৃত্তি!

লিখেছেনঃ Mridul Islam


ট্যাগ
বনী ইসরাইল, ইহুদী, জেরুজালেম

Read More
Blog Administrator

দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্ব-মেসিয়ানিক এইজঃ (ইয়াহুদি এস্কেটলোজি)




আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ) বলেছেন- “অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে  থাকা ব্যক্তি দাঁড়ানো বক্তির চেয়ে এবং দাঁড়ানো ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান  ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক  নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে এগিয়ে যাবে সে ফিতনায় জড়িত হয়ে পড়বে  এবং ধ্বংস হবে। আর যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে বাঁচার কোন আশ্রয় পাবে সে যেন  তথায় আশ্রয় গ্রহণ করে”। 
                      -(বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, মুসলিম শরিফ, নুয়াইম বিন হাম্মাদ -৩৪২)

আমরা বলতে পারি এই যুগে, একজন ঘরে বা  মসজিদে অবস্থানকারী ব্যক্তি, রাস্তা-বাজার-অফিসমুখী ব্যক্তি থেকে; অফিসে  সময় কাটানো ব্যক্তি, শপিং মলে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তির চেয়ে; ঘরে অবস্থান করা  ব্যক্তি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম বা ফিতনা  থেকে বেশি নিরাপদ। এখানে উত্তম মানে ফিতনার ব্যাপকতা ও চাপ তার কাছে  অপেক্ষাকৃত কম পৌছবে বা নিরাপদ থাকবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা পাহাড়ে  হিজরতকারী, গ্রামে বসবাসকারী অপেক্ষা; এবং গ্রামে বসবাসকারী, শহরে  বসবাসকারী অপেক্ষা ফিতনা থেকে অধিক নিরাপদ।

এভাবেই আমরা বলতে  পারি, যে ব্যক্তি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে না সে মোবাইল ব্যবহারকারী  অপেক্ষা; আবার সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারী, এন্ড্রয়েড বা স্মার্ট ফোন  ব্যবহারকারী অপেক্ষা; এবং স্মার্ট ফোন ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট ব্যবহারকারী  অপেক্ষা ফিতনা থেকে অধিক নিরাপদ থাকবে। 

বর্তমান যুগে ইনেকটিভ  বা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি, সক্রিয় বা একটিভ ব্যক্তি অপেক্ষা; সহজ সরল  জীবন- যাপনকারীরা, ব্যয়বুহুল জীবন- যাপনকারীর চেয়ে উত্তম। অপেক্ষাকৃত  অনাধুনিক ব্যক্তিরা, আধুনিক ব্যক্তি থেকে; সমাজে কম মেলামেশাকারীরা, বেশি  মেলামেশাকারী ব্যক্তিদের চেয়ে; স্বল্প শিক্ষিতরা, দুনিয়াবী উচ্চ শিক্ষিতদের  অপেক্ষা ফিতনা থেকে বেশি নিরাপদ। তথা যে যত বেশী দুনিয়াবী কর্মের প্রতি  ক্রিয়াশীল সে তত বেশী ফিতনার নিকটবর্তী। 

ফিতনার অনেক প্রকার  রয়েছে এই যুগে প্রতিদিন নিত্যনতুন এক ফিতনারর আবির্ভাব ঘটে এবং সবার মাঝে  ছড়িয়ে পরে। মাস চারেক আগে Prisma নামে একটি ফোটো এডিটিং এপ্লিকেশন রিলিজ  হয়েছিল, এবং প্রথম দুই সপ্তাহেই এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে বাংলাদেশের মত  একটা দেশের সাধারণ মানুষরা তো বটেই এমনকি অনেক দ্বীনদার শ্রেনীর, আলেমরাও  নিজের প্রোফাইল পিকে প্রিসমা ইফেক্ট ব্যবহার করে। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের  প্রায় ৫০% কে দেখেছি একটি হলেও প্রিসমা ইফেক্টের ছবি আপলোড করতে। এটা  ভালো-মন্দ সে বিতর্কে যাব না তবে এটা এক প্রকারের ফিতনা। এভাবেই আমাদের  মাঝে সেলফি জনপ্রিয় হয়েছিল, এটার অবস্থায় নাই বা বললাম। খেয়াল করুন কিভাবে  ফিতনা বৃষ্টির মত করে আমাদের উপর পতিত হচ্ছে এবং আমাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে  যাচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ফিতনা আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে।

পূর্বে, টিভিতে খেলা দেখার ফতোয়ার বিষয়ে শুধু খেলাকেই মুখ্য হিসেবে  বিবেচনা করা হত। বর্তমানে খেলার সাথে নাচ গান, চেয়ারিং গার্লস, খেলার মাঝে  অশ্লীল বিজ্ঞাপন ইত্যাদি হাজারো জিনিস জুড়ে যাচ্ছে। এখন খেলা দেখা যাবে কি  না এই ফতোয়া দিতে গিয়ে মুখ্য খেলা কেই গৌণ মনে করে, নাচ-গান, অশ্লীলতাকে  প্রাধান্যদিয়ে খেলা দেখার ফতোয়া দেয়া হয়। এভাবে আমরা বুঝতে পারি কয়েক বছরের  ব্যবধানেই ফিতনা আমাদেরকে কতটা গ্রাস করছে। কয়েকমাস যাবৎ একধরনের হেয়ার  স্টাইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- মাথার উপরে চুল রেখে, পিছনে এবং কানের উপরে এই  তিন দিক থেকে চুল ছোট করে ছাটাই করার।  হাদিসের ভাষ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে এমন  চুল কাটা হারাম স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও হাজারো তরুণ, যুবকরা নির্দ্বিধায় এই  হেয়ার স্টাইল রেখে চলছে। বিভিন্ন নতুন নতুন নেশা এসে যুবকদেরকে ধ্বংস করে  দিয়েছে। পর্ণগ্রাফী আজ প্রতিটা ফোনের মাধ্যমে প্রতিটা কিশোরদের হাতে পৌঁছে  গেছে। ১০ বছরের শিশু ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করছে।   

এছাড়া বাস্তব  জীবনে এমন লক্ষ লক্ষ জানা-অজানা ফিতনা আছে। অনেক গুলো আমারা ফিতনা হিসেবে  চিনতেও পারি না। মানুষ সারাদিনে এইরকম ফিতনার মাঝে আবদ্ধ থাকে। কিছু থেকে  বাঁচার চেষ্টা করে কিছুতে তার অগোচরেই জড়িয়ে পরে।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,নবী করীম (ﷺ) বলেন-“অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ক্রমাগত ফেতনা  আসার আগে-ই যা আমল করার -করে ফেলো।! মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে,বিকালে  কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে,সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ  লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।” -(মুসলিম-৩২৮)

আজ  মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিরক'এ জড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ ভণ্ডামি বা অজ্ঞতার  দরুন কেউ দুর্বল ইমানের কারনে। হালালাইজড এর যুগে আল্লাহ যা হারাম করেছেন  তা হালাল করা হচ্ছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যা হালাল করেছেন তা  হারাম করা হচ্ছে। সুদকে হালাল করা হয়েছে। মিথ্যা মতবাদকে হালাল করা হয়েছে  এমনকি মদকেও হালাল করা হচ্ছে, ব্যাভিচারকে বিয়ের নাম দিয়ে হালাল করা হচ্ছে।  সহজ জান্নাত লাভের আশায় কোন খারেজীদলে যোগ দিয়ে সহজে জাহান্নামী হয়ে  যাচ্ছে। সুদে জড়িয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূলের  বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লিখাচ্ছে। মানুষ ধর্মীয় আহকাম-ফরজ-ইমান-কুর’আন-সুন্নাহ  ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে-নাজেনে, সজ্ঞানে-অজ্ঞানে, ঠাট্টা-মশকরায় পরিহাস বা  বিদ্রুপপূর্ণ কথা বলে নিজের অজান্তেই কাফির হয়ে যাচ্ছে। 

কেন এমন  হচ্ছে? আমরা কোথায় চলছি? এই ছোট ছোট ফিতনা আমাদের কি, বড় ফিতনার দিকে নিয়ে  যাবে না? এগুলোতেই আমরা দুর্বল, কিভাবে ইমান ধরে রাখবো, যখন প্রকাশ হবে  মহাফিতনার।

মেসিয়ানিক এইজ- ১ (ইয়াহুদি এস্কেটলোজি)



ইয়াহুদিদের বিশ্বাসে দাজ্জালী যুগ

বর্তমান সেকুলার যুগে বেশির ভাগ মানুষই ধর্ম থেকে দূরে আছে শুধু মাত্র  ব্যতিক্রম হল ইয়াহুদিরা, প্রায় প্রত্যেক ইয়াহুদি তাদের ধর্ম বিশ্বাসে একদম  সিদ্ধহস্ত। দাজ্জালে বিশ্বাস ইয়াহুদিদের জন্য ঈমানের একটি অপরিহার্য শর্ত।  ‘বিশ্বাসের ১৩ টি মূলনীতি’ (13 principles of faith) এর ১২ নাম্বারে  মাসিহার আগমনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে হয় যে, ‘আমি  মাসিহার আগমনের পুরোপুরি বিশ্বাস করি,যদি তিনি আসতে বিলম্ব করেন তবুও আমি  প্রতিদিন তার আসার প্রতীক্ষা করি’। ইয়াহুদিদের মূল ইবাদাতের নাম হল এমিদাহ।  এই ইবাদতে তারা প্রতিদিন তিন বার চার্চে দাড়িয়ে ১৯টি রহমতের জন্য  প্রার্থনা করে। সেখানে ১০, ১৪, ১৫ ও ১৭ নং বিষয় যথাক্রমে নির্বাসিত  ইয়াহুদিদেরকে পবিত্রভূমিতে ফিরিয়ে আনা, ইসরাইল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা,  অতিশীঘ্রই দাজ্জালের আগমন এবং হাইকোলের পুনঃনির্মাণের জন্য প্রভুর নিকট  প্রার্থনা করা হয়।  (To Pray as a Jew- Rabbi Hayim Halevy) (Principle 12  of Rambam's 13 Principles of Faith) 

এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে  দাজ্জালের আগমন প্রত্যাশীরা তার জন্য ধাপে ধাপে মঞ্চ নির্মাণ করছে। তাদের  ধর্ম গ্রন্থের বাণী তারা অবশ্য পালন করেই যাবে, সত্য-মিথ্যা নিয়ে ভাববে না।  দাজ্জাল নিয়ে তাদের বিশ্বাস-

“রাজা মসীহ ভবিষ্যতের কোন এক সময়ে  আসবেন। তিনি দাউদের রাজত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। দাউদ ও সোলাইমানের মত এক  মহান রাজা হবেন তিনি। হাইকল নির্মাণ করে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসরাইলিকে  একত্র করবেন এবং প্রাচীন আইন পুনরায় কায়েম করবেন।”  -এটাই হবে মাসিহা ও মেসিয়ানিক যুগ  
                                          -(Mishneh Torah, Hilchot Melachim XI – XII)

মেসিয়ানিক এইজ বা মাসীহার যুগ কেমন হবে, তাওরাতে স্পষ্ট ভাবে ইসায়াহ বইতে  বর্ণনা করা হয়েছে। এই যুগকে ইয়াহুদিরা অহ’লাহম হা’বা অর্থাৎ মাসীহার যুগ,  আসন্ন বিশ্ব, সোনালি যুগ এবং চির শান্তির যুগ ইত্যাদি প্রভৃতি শব্দে অভিহিত  করে থাকে। ইসায়াহ বইতে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের নাম হল ‘চিরন্তন শান্তি’  উল্লেখ্য যে আমরা মুসলিমরা মনে করি চিরন্তন শান্তি হবে জান্নাতে কিন্তু  ইয়াহুদিরা মনে করে দাজ্জালের যুগ হবে চিরন্তন শান্তির যুগ। এটা হবে অফুরন্ত  এবং চিরন্তন। যাইহোক সেখানে দাজ্জালের সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে-

“সেই চরম দিনগুলিতে এমনটি ঘটবে, প্রভুর গৃহের পর্বত পর্বতশ্রেণীর চূড়ায়  প্রতিষ্ঠিত হবে, উঁচু হয়ে উঠবে সমস্ত উপপর্বতের চেয়ে, তখন সকল দেশ তার কাছে  ভেসে আসবে।.....তিনি দেশে ও গোত্রদের মধ্যে চলা দ্বন্দ্বের বিচার সম্পাদন  করবেন (দুই দেশের মধ্যে বিচার করে যুদ্ধের অবসান), বহু জাতির বিবাদ মিটিয়ে  দেবেন। তারা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ  করবে। তারা তাদের তরবারি থেকে লাঙলের ফলা তৈরি করবে এবং বর্শার ফলা দিয়ে  কাটারি বানাবে। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে তরবারি ধরবে না। পরস্পরের  মধ্যে লড়াই বন্ধ হবে। তারা কখনও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবে না।”                                                                   -(ইসায়াহ ২:  ১-৪)

এছাড়াও বলা হয়েছে মাসিয়ার আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তে যুদ্ধ ও  সংগ্রাম হবে, মানুষ যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।- (এজেকিয়েল ৩৮:১৬)  মালহামার সময়ে, বিশ্ববাসী ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার  পরেই দাজ্জালের আগমন হবে, যুদ্ধ শেষে মানুষরা শান্তি খুঁজে ফিরবে  অন্যায়-হত্যা-যুলুম ইত্যাদি থেকে রেহাই পেতে চাইবে। কোন উদ্ধারকর্তা  ত্রাণকর্তাকে খুঁজে বেড়াবে। এই যুদ্ধ-নৈরাজ্যের শেষের দিকেই দাজ্জাল  ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হবে। দাজ্জাল তার অনুসারীদের নিয়ে ইসরাইল থেকে  পুরো বিশ্বে শাসন কায়েম করবে, সকল দেশ তার কাছে নত হবে। সে হবে এক মহান  মিলিটারি লিডার, এবং সুবিচারক সে সকল যুদ্ধের অবসান ঘটাবে সকল  জাতি-গোত্র-রাস্ট্রের মধ্যে হওয়া দ্বন্দ্বের মীমাংসা করাবে।   

ইসায়াহ’র অনুচ্ছেদ ১১- ‘দাউদের সেই বংশধর’ এ দাজ্জাল সম্পর্কে  আরো বলা হয়েছে-

“যেসের মূলকান্ড থেকে (দাউদের পিতার বংশধর থেকে) এক শিশু জন্ম হবেন; তার  শিকর থেকে এক নবাঙ্কুর আংকুরিত হবেন। আর প্রভুর আত্মা এই বালকটির ওপরে ভর  করবে। এই আত্মা বালকটিকে জ্ঞান,বুদ্ধি,পথনির্দেশ এবং শক্তি দেবে। এই আত্মা  বালকটিকে প্রভুকে জানার এবং তাঁকে সম্মান করার শিক্ষা দেবে। প্রভুর প্রতি  সমীহ দ্বারা বালকটি অনুপ্রাণিত হবে। সে বাইরের চেহারা দিয়ে কোন কিছু বিচার  করবে না। কোন কিছু শোনার ভিত্তিতে সে রায় দেবে না। সে সততা ও ধার্মিকতার  সঙ্গে দীন-দরিদ্রদের বিচার করবে। সে ন্যাযের সঙ্গে দেশের দীনহীনদের বিভিন্ন  বিষয়ের নিষ্পত্তি করবে। সুবিচার,ধার্মিকতাই এই শক্তির অন্যতম উৎস হবে।  তিনি নিজ মুখের লাঠি দ্বারা দেশ আঘাত করবেন, নিজ ওষ্ঠের ফুঁৎকারে দুর্জনকে  বধ করবেন। সে সময় নেকড়ে বাঘ এবং মেষশাবক এক সঙ্গে শান্তিতে বাস করবে। বাঘ  এবং ছাগল ছানা এক সঙ্গে শান্তিতে শুয়ে থাকবে। বাছুর,সিংহ এবং ষাঁড়  একসঙ্গে শান্তিতে বাস করবে। এমনকি সাপও মানুষকে দংশন করবে না। একটা শিশুও  নির্ভয়ে কেউটে সাপের গর্তের ওপর খেলা করতে পারবে। বিষাক্ত সাপের গর্তের  মধ্যেও সে নির্দ্বিধায হাত দিতে পারবে”।                             
                                                                    -(ইসায়াহ ১১: ১-৮)

দাজ্জালের কিছু গুণাবলীর কথা উল্লেখ হয়েছে এখানে, প্রভুর আত্না, প্রভুর  জ্ঞান ও বিচক্ষণতা, প্রভুর উপদেশ প্রদানের ক্ষমতা, প্রভুর শক্তি ও ভয় তার  মধ্যে ভর করবে। অর্থাৎ ইয়াহুদিদের বিশ্বাস আল্লাহর জ্ঞান, শক্তি, ক্ষমতা  তথা আল্লাহ নিজেই দাজ্জালের উপর ভর করবেন। (নাউযুবিল্লাহ মিন হাযা) আমরা  মুসলিমরা জানি দাজ্জাল সর্বশেষ নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করবে। উক্ত চরণে  আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি ইয়াহুদিরাও এভাবেই তাকে আল্লাহ বলে মেনে নিবে। 
  
দ্বাদশ শতাব্দীর ইয়াহুদি রাবাই মুসা বিন মায়মুন (Maimonides) বর্ণনা করেন-

..এবং তখন, কেউ ক্ষুধার্ত রবে না, কোণ যুদ্ধ হবেনা, থাকবে না কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা কেউ কোন অহংকারীর ভয়ে শঙ্কিত হবে না। ভালো জিনিস থাকবে  অপরিমিত, লাবণ্যটা কমনীয়তা দিয়ে ভরে যাবে বিশ্ব। প্রভুকে চেনাই হবে মানুষের এক মাত্র কাজ। বিশেষ করে ইসরাইলের জনগণরা পাবে বিচক্ষণতা, তারা ঈশ্বরের  সকল গুপ্ত রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে। 
যেভাবে বলা হয়েছে  (ইসাইয়া ১১: ০৯)-  “তারা আমার পবিত্র পর্বতের (জেরুজালেমের) কোন স্থানেই অনিষ্ট বা ক্ষতিকর  কিছুই আর ঘটাবে না, কারন সমুদ্র যেমন জলরাশিতে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী হবে  প্রভুজ্ঞানে পরিপূর্ণ” 
                                                (Mishneh Torah, Laws of Kings 12:5) 

ইতিমধ্যে ইয়াহুদের বিশ্বাসে দাজ্জালি যুগ সম্পর্কে আমাদের একটি স্বচ্ছ  ধারণ হয়েছে। তাই এই চরণ গুলোর ব্যাখ্যা নিস্প্রোজনীয়। ২ হাজার বছর পরে  ইসরাইল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা কোন আকস্মিক ঘটনা বা কাকতালীয় বিষয় নয় বরং  এটি মেসিয়ানিক যুগের প্রারম্ভ ঘোষণা করছে। ইং সা আল্লাহ পরবর্তী পর্বে  দালিলিক ভাবে এটা প্রমান করব।

দানব ইসরাইল অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর  হামলা করছে, প্রতিরোধে কিশোর বালকরা পাথর ছুড়ে মারছে, ঠিক এমনি ভাবে  দাউদ  আলাহিস সালাম দানব জালুতকে গাওফন বানিয়ে পরপর তিনটা পাথর ছুড়ে হত্যা  করেছিল।

তাওরাতে ইসরাইল রাষ্ট্র ও ইয়াহুদিদের পুনঃআগমন

“সেদিন এমনটি ঘটবে, প্রভু আপন জনগণের অবশিষ্টাংশকে, অর্থাৎ অ্যাসিরিয়া ও  মিশরে, পাথ্রোস, ইথিওপিয়া ও এলামে, সিনার, হামাত ও সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জে  যারা বেঁচে রয়েছে, সেখান থেকে তাদের মুক্ত করে আনবার জন্য আবার হাত  বাড়াবেন। আর তিনি সমস্ত লোকদের জন্য ‘নিশানা/ পতাকা’তুলবেন। ইস্রায়েল ও  ইয়াহুদা থেকে বিতাড়িত লোক যারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে  ছিন্নমূলের মতো বাস করছিল তাদের তিনি একত্রিত করবেন”।                                                                                  -(ইসায়াহ ১১: ১০-১২)

“ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইসরাইল প্রত্যর্পণ করবে”     -(যিহিস্কিল ১৬:৫৫)

“তোমাদের ঈশ্বর,তোমাদের প্রতি করুণা করবেন। প্রভু আবার তোমাদের মুক্ত  করবেন। তিনি তোমাদের যেসব জাতির মধ্যে পাঠিয়ে ছিলেন সেখান থেকে আবার  ফিরিয়ে আনবেন। এমন কি তোমরা যদি পৃথিবীর দূরতম প্রান্তেও গিয়ে  থাকো,প্রভু,সেখান থেকেও তোমাদের সংগ্রহ করবেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের যেদেশ  ছিল,প্রভু সেই দেশে তোমাদের ফিরিয়ে আনবেন এবং সেই দেশ তোমাদের অধিকারে  আসবে। প্রভু তোমাদের মঙ্গল করবেন এবং পূর্বপূরুষদের চাইতেও তোমরা অধিক হবে।  তোমাদের জাতির লোকসংখ্যা এমন বৃদ্ধি পাবে যা আগে কখনও হয়নি”।                                                                             (Book of  Deuteronomy 30:3-5)

অর্থাৎ দাজ্জালের কাঙ্ক্ষিত সময়ে প্রভু একটি  দেশ কায়েম করবেন, দেশের থাকবে একটি পতাকা,এবং চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা  ইয়াহুদিদেরকে নিসানা (বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্র) অর্থাৎ চিহ্নিত ভূমি ও  পতাকার তলে জড়ো করবেন। দাজ্জালের পথ পরিষ্কার করে দাজ্জালের অনুসারীরা  ইতিমধ্যে ইসরাইল নামক নিসান প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষের  দেশে ফিরে এসেছে, এখন ইসরাইল তাদের অধিকারে, তাদের সংখ্যা আগের চাইতে অনেক  বেশী। প্রভু তাদের মঙ্গল করেছেন, আজ তারা পরমাণু বোমার অধিকারী ও পুরো  বিশ্ব পরোক্ষ ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। পূর্বে ইয়াহুদিরা জেরুজালেম থেকে  দু-বার বিতারিত হয়েছিল। প্রথমবার বখতেনাসার এবং পরের বার টাইতাস দ্বারা  যথাক্রমে ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং সর্বশেষ ৭০ খ্রিস্টাব্দে। টাইটাস  জেরুজালেমে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, হাইকলে সোলাইমানি (টেম্পল অফ সলোমোন)  সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। পবিত্র কুর’আনে স্পষ্ট ভাবে  সুরা বনী ইসরাইলে এই ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।

“আমি বনী ইসরাঈলকে  কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি  করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে। অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই  প্রথম সময়টি এল,তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর  যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত  ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের  বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম,তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা  সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে  পরিণত করলাম। তোমরা যদি ভাল কর,তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে  তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল,তখন অন্য বান্দাদেরকে  প্রেরণ করলাম,যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়,আর মসজিদে ঢুকে পড়ে  যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়,সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ  চালায়”।  
                                                        (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৪-৭)

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া  তাআ’লা পরের আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি আবারো ইয়াহুদিদের উপর  দয়া করে জেরুজালেমে জড়ো করবেন কিন্তু যদি তারা আবারো আল্লাহর আদেশের  অবজ্ঞা করে অত্যাচারী, সীমালংঘন ও যুলুম করে তাহলে তাদেরকে আবারো একই ভাবে  দমন করে চিরস্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।

“হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর,আমিও  পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের জন্যে কয়েদখানা করেছি”।                                                       -(সুরা  বনী ইসরাইল, আয়াত -৮)

তারা আবার ফিরে এসে সীমালংঘন করছে আল্লাহ  অচিরেই ইসা আলাহিস সালামের সময় তাদেরকে পুনরায় ধ্বংস করবেন । দাজ্জালের  মৃত্যুর পরে ইয়াহুদিকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠানো হবে। এমনকি  গাছ পাথর কথা বলে তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা ইয়াহুদিদেরকে ধরিয়ে দিবে। পুরো  ঘটনাটি হাদিসে এসেছে-

“রাসূল  (ﷺ) একদা আমাদের সামনে আলোচনা করছিলেন। তার আলোচনার অধিকাংশই ছিলো দাজ্জাল  সম্পর্কে।…..আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন-একদা ইসা আলাইহিস সালাম বলবেনঃ (বাইতুল মাক্বদিসের) দরোজা খোলো। তখন দরজা খোলা হবে।তার পেছনে থাকবে দাজ্জাল এবং দাজ্জালের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহুদি। তাদের প্রত্যেকেই থাকবে  তলোয়ারধারী এবং মোটা চাদর পরিহিত। দাজ্জাল যখন ইসা আলাইহিস সালাম কে দেখবে  তখনই সে চুপসে বা গলে যাবে যেমনভাবে গলে যায় পানিতে লবণ এবং সে ভাগতে শুরু  করবে।তখন তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে একটি কঠিন মার রয়েছে যা  তুমি কখনো এড়াতে পারবে না। অতঃপর ইসা আলাইহিস সালাম তাকে পূর্ব দিকের লুদ্দ  নামক গেইটের পাশেই হত্যা করবেন।আর তখনই ইয়াহুদিরা পরাজিত হবে।এ দুনিয়াতে  আল্লহা তাআলার যে কোন সৃষ্টির পিছনে কোন ইয়াহুদি লুকিয়ে থাকলে আল্লাহ তাআলা  সে বস্তুকে কথা বলার শক্তি দিবেন এবং বস্তটি তার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে  বলে দিবে। চাই তা পাথর,গাছ,দেয়াল কিংবা যে কোন পশুই হোক না কেন। কিন্তু  গারক্বদ নামক গাছটি। সে তো তাদেরই গাছ। তাই সে তাদের ব্যাপারে মুসলমানদেরকে  কিছুই বলবে না”। 
                                                          -(ইবনু মাজাহ হাদীস নং-৪০৭৭) 

“….তখন  মুসলমানরা ইহুদিদেরকে হত্যা করবে। এমনকি যে কোন ইহুদি কোন গাছ বা পাথরের  পেছনে লুকিয়ে থাকলে সে গাছ বা পাথর বলবে- হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দাহ!এই  যে ইহুদি আমার পিছনে লুকিয়ে আছে। আসো তাকে হত্যা করো। কিন্তু গারক্বাদ  নামক গাছটি। সে তো তাদেরই গাছ। তাই সে তাদের ব্যাপারে মুসলমানদেরেকে কিছুই  বলবে না”।            
                                           -(বুখারী,হাদীস নাং-২৯২৬,মুসলিম,হাদীস নং-২৯২২)


বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রই হল দাজ্জালের মঞ্চ  

ইসায়াহ’র পরের চরনে বলা হয়েছে-

“এই সময় ইফ্রযিমের (ইস্রায়েলের) ঈর্ষা দূর হবে। ইফ্রযিম আর ইয়াহুদার  ঈর্ষা করবে না। ইয়াহুদার আর কোন শত্রু থাকবে না।বরং তারা মিলে পশ্চিম দিকে  উড়ে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের পিঠে নেমে পড়বে, তারা মিলে পুবদেশের সম্পদ লুট  করবে; এদোম ও মোয়াবের উপরে হাত বাড়াবে, এবং আম্মোনীয়েরা তাদের বশ্যতা  স্বীকার করবে।”                                             -(ইসায়াহ ১১: ১৩-১৬)

সোলাইমান আলাহিস সালামের  ইন্তেকালের পরে ইয়াহুদিরা তাঁর রাজ্যকে দুই ভাগ করে। একটি হল ইয়াহুদ  (ফিলিস্তিনের দক্ষিণে) আরেকটি হল ইসরাইল (ফিলিস্তিনের উত্তরে)। ইয়াহুদিদের  ১২ টি গোত্রে মধ্যে এই দুটি গোত্র ছিল সবচেয়ে বড়। ইফ্রযিম হল ইউসুফ আলাহিস  সালাম এর বংশধর আর ইয়াহুদিরা হল ইউসুফ আলাহিস সালাম এর ভাই ইয়াহুদার বংশধর।  বনী ইউসুফ (ইফ্রযিমরা) ইউসুফ আলাহিস সালামের বংশধর হওয়ায় অহংকার করত এবং  দাউদ ও সোলাইমান আলাহিমুস সালাম ইয়াহুদীদের বংশ থেকে হওয়ায় ইয়াহুদরাও  অহংকার করত। এভাবেই এদের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকতো। এরা রাজ্যের সাথে সাথে  ধর্ম এবং পণ্ডিতদের কেও   পৃথক করে নিয়েছিল। এই লম্বা এবং কঠিন শত্রুতার  অবসান হওয়া ছিল অনেকটা অসম্ভব। মাসীহা (ইসা আলাহিস সালাম হলেন দাউদ আলাহিস  সালাম এর বংশ থেকে, তাদের মাসীহা দাজ্জালও একই বংশ থেকে আসবে বলে তারা মনে  করে) তাই উক্ত চরণে বলা হয়েছে প্রভু, মাসীহার সময়ে এই শত্রুতার অবসান করে  দিবেন এবং তারা এক সাথে পশ্চিম ফিলিস্তিনে উড়ে গিয়ে হামলা করবে। পূর্ব  দিকের রাজাদের ভূমিতে গিয়ে সম্পদ লুট করবে বিশেষ করে এদোম, মোয়াব ও  আম্মোনীয়র উপরে হাত বাড়াবে অর্থাৎ যথাক্রমে বর্তমান জর্ডান, সৌদি আরব ও  সিরিয়া তাদের বশ্যতা স্বীকার করবে।

খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সনে ইয়াহুদিদের ১২ গোত্রের অবস্থান
এখন এটাই হচ্ছে, ইয়াহুদা  এবং ইসরাইল গোত্রদ্বয় মিলে পশ্চিমে অবস্থিত ফিলিস্তিনে উড়ে গিয়ে বিমানের  মাধ্যমে গাজায় বোমা ফালাচ্ছে এবং পূর্ব দিকে জর্ডানে সীমানা লঙ্ঘিত করছে।  অচিরেই তারা জর্ডান, সিরিয়া, ইরাক ও সৌদি আরবে ঢুকে লুট-তারাজ চালাবে।    

গতবছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াহুদিকে পৃথিবীর সকল দেশ ছেড়ে ইসরাইলে  ফিরে আসার অনুরোধ করেছিল। ইসরাইলের অভিবাসন মন্ত্রী জেইফ এরকিনি বিদেশে  বাসকারী সকল ইয়াহুদিকে আহবান করেছিলেন- “ঘরে আসো, পুরো ইউরোপ জুড়ে  জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে তাই ঘরে আস”। শুধু মাত্র ইউরোপের ইয়াহুদিদের  অভিবাসন প্রকল্পের জন্য ৪৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে  ইসরাইলি সরকার। 

বর্তমান যুগের সাথে এখন আমরা যদি তাদের  প্রত্যাশিত দাজ্জালি যুগ মিলিয়ে দেখি আশা করি আমরা সবাই স্পষ্ট হতে পারবো  যে, আমরা এখন কোন সময়ে বসবাস করছি, কি হতে চলছে এবং স্বীকার করবো ২ হাজার  বছর পরে ইসরাইলীদের সকল বৈরিতার অবসান করে ইসরাইল রাষ্ট্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা  করে, পৃথিবীর চতুর্দিক থেকে এসে জড়ো হয়ে, ফিলিস্তিনের উপর নির্যাতন ও পুরো  মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা কোন আকস্মিক বা কাকতালীয় ঘটনা নয় বরং  ২৮০০ বছর পূর্বের হযরত আল-ইয়াসা’আ আলাইহিস সালামের ভবিষৎবাণীকে পূরণ করার  পরিকল্পনার অংশ। অবশ্যই উপর্যুক্ত দলিল পাওয়ার পরও, যারা মনে করেন এটা  আকস্মিক কিংবা ইসরাইল রাষ্ট্রের সাথে দাজ্জালের আগমনের কোন সম্পর্ক নেই,  তবে তাদেরকে অবশ্যই আলোচিত সম্পূর্ণ ঘটনার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা  দাড় করাতে হবে, অন্যথায় উপর্যুক্ত মতকে বাতিল করা যাবে না। পাশাপাশি এটাও  মেনে নিতে হবে যে, এই ইসরাইল রাষ্ট্রই দাজ্জালের মঞ্চ এবং সে অচিরেই, খুবই  নিকটবর্তী সময়ে আমাদের মাঝে আগমন করতে যাচ্ছে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।

দাজ্জাল নিয়ে এক রাবাইয়ের ভবিষ্যৎবানী 

যুগে যুগে বহু ইয়াহুদি পণ্ডিত তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে মাসিয়াহ’র আগমনের ও  দাজ্জালী যুগের সঠিক সময় নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। ইয়াহুদিদের মাঝে সবচেয়ে  জনশ্রুত ও গ্রহণযোগ্য এমন রাবাইদের মধ্যে অন্যতম হলেন রাবাই জুদাহ বেন  সেমুয়্যাল । ১২ শতাব্দীতে এই জার্মান রাবাই বাইবেলের গুননা ও ভবিষৎবাণীর  চরণের সাহায্যে দাজ্জালের সময়ের ভবিষৎবাণী করেন। এটি পঞ্চাশ জয়ন্তীর  দৈববাণী (The Prophecy of Ten Jubilees) নামে পরিচিত। রাবাই জুদাহ বেন  সেমুয়্যাল বলেন-

“তুর্করা (উসমানীয় খিলাফত) জেরুজালেম দখল করবে,  জেরুজালেমে তাদের শাসন হবে ৮ জুবলি পর্যন্ত। তারপর জেরুজালেম শাসনহীন বা  নো-ম্যান ল্যান্ড হিসেবে থাকবে ১ জুবলি। নবম জুবলির সমাপ্তিতে জেরুজালেম  পুনরায় ইয়াহুদিদের দখলে আসবে। এরপরেই (১ যুবলির পরে) মেসিয়ানিক যুগের  প্রারম্ভ হবে”।                                               -(March, 2008 in Israel Today on page 18) 



জুদাহ  বেন সেমুয়্যাল ১২১৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পুরো ৩০০ বছরে পরে ১৫১৭  সালে তুর্করা (উসমানি খিলাফত) মামলুক সালতানাতকে পরাজিত করে জেরুজালেম দখল  করে। এখান থেকে শুরু হয় সেমুয়্যালের দৈববাণী। ১৯১৭ সালে ইংল্যান্ডের কাছে  পরাজিত হয়ে জেরুজালেম উসমানি খিলাফতের বেদখল হয়। জেরুজালেমে উসামানিরা পুরো  ৮ জুবলি (৫০*৮=৪০০ বছর) রাজত্ব করেছিল। এর পরের এক জুবলি বা ৫০ বছর  (১৯১৭-১৯৬৭) বেদখল ও বিতর্কিত ভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ছিল।  ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেও জেরুজালেম ইসরাইলের অংশ ছিল না।  ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইলের ৬ দিনের যুদ্ধ শেষে ইসরাইল জেরুজালেম দখল করে। এটা  এমন ভাবে থাকবে এক জুবলি (৫০ বছর) অর্থাৎ ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এর পরের  জুবলিতে কি হবে সেমুয়্যাল তা স্পষ্ট করেনি তবে তার ছাত্ররা বলে এর পরের  জুবলিতেই মাসিহার আগমন হবে। সেমুয়্যালের ৮ শত বছর আগের সকল দৈব্যবাণী  অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছে ও হচ্ছে এবং হবে বলে ইয়াহুদিরা বিশ্বাস করে। তার  ছাত্ররা যখন তাকে জিজ্ঞাস করল, ‘এই অন্তর্দৃষ্টি আপনি কোথায় পেলেন?’  সেমুয়্যালে বলল- “নবী এলিজাহ (ইলিয়াস আলাহিস সালাম) প্রতীয়মান হয়ে (এই সকল  বিষয় গুলো) অনাবৃত করছেন”  

উল্লেখ্য যে, ইয়াহুদিদের মধ্যে অনেক  দল-উপদল রয়েছে। বিশেষ করে শেষ যামানা বিষয়ে এরা ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসে  বিশ্বাসী । কিছু এমন রয়েছে যারা দাজ্জাল আসবে বলে বিশ্বাস করে না, কিছু  ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তেমনি কিছু ইয়াহদি উপরিল্লিখিত  বিষয়কে অস্বীকার করে। রাবাই সেমুয়্যালেরও নিজস্ব আলাদা বিশ্বাস ছিল।

ইয়াহুদী এস্কেটেলোজি'র সমাপ্তি পর্ব

“সে দাউদের বংশধর হবে” (ইসায়াহ ১১:১) “সে সোলাইমানের বংশ থেকে আসবে” ( ১  বংশধর ২২:৮-১০) (২ বংশধর ৭:১৮) 

অর্থাৎ সে দাউদ আলাহিস সালামের পুত্র  সোলাইমান আলাইহিস সালামের বংশধর হবে।  অনেক রাবাই বলেন দাজ্জালের পূর্ণ নাম  হল ‘মাসিহা বিন ডেবিড’

“তিনি মৃত্যুকে চিরকালের মতই বিলুপ্ত  করবেন; স্বয়ং পরমেশ্বর প্রভু সকলের মুখ থেকে মুছে দেবেন অশ্রুজল, তাঁর আপন  জাতির অপমান গোটা পৃথিবী থেকে দূর করে দেবেন, কারন স্বয়ং প্রভুই একথা  বললেন”।  (ইসায়াহ ২৫: ০৮) 
“প্রভু যাদের মুক্তিকর্ম সাধন করলেন, তারা ফিরে  আসবে, হর্ষধ্বনি তুলতে তুলতে তারা সিয়োনে প্রবেশ করবে; তাদের মাথা হবে  চিরন্তন আনন্দে বিভূষিত; সুখ ও আনন্দ হবে তাদের সহচর; শোক ও কান্না তখন  পালিয়ে যাবে”। (ইসায়াহ ৫১: ১১) 

অর্থাৎ তখন কোন রোগ বালাই থাকবে না  কেউ মৃত্যুবরণ করবে না, ইয়াহুদিরা চিরন্তন সুখ শান্তিতে থাকবে। ইয়াহুদিরা  হল আল্লাহর মনোনীত জাতি, বাকি সবাই হল অজ্ঞ, উম্মি, নিকৃষ্ট এবং ইয়াহুদিদের  অধীনস্ত। ইয়াহুদিরা এটা কঠোর ভাবে বিশ্বাস করে যে, ইসমাইল আলাইহিস সালামের  মাতা ছিলেন একজন দাসী এবং তার সকল বংশধররা উম্মী অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞান এবং  নবী’র সোহবত ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া  সাল্লামকে উম্মীদের নবী বলে অভিহিত করত।

“যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, সে সকল দেশরা পরিতাপ করবে” (ইসায়াহ ৫২: ১৩- ৫৩:৫) মন্তব্য নিস্প্রজনীয়
“সেই দিনগুলিতে সর্বজাতির সর্বভাষার দশ দশ পুরুষ এক এক ইয়াহুদী পুরুষের  পোশাক টেনে ধরে একথা বলবেঃ আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পরমেশ্বর আপনাদের সঙ্গে  আছেন। আমরা কি এসে আপনার সঙ্গে উপাসনা করতে পারি?” (জাখারিয়া ৮:২৩) ইয়াহুদি  ধর্মকে সবাই একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে মেনে নিবে।- (জেফানিয়া ১৪: ৯; মিখা  ৪: ২-৩) 

অর্থাৎ পুরো বিশ্ববাসী ইয়াহুদিদের থেকে আধ্যাত্মিক ও  ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইবে, স্বীকার করবে যে তারাই প্রভুরে একমাত্র  মনোনিত জাতি। আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ইয়াহুদিরা মনে করে এই সময়ে  প্রত্যেক ইয়াহুদির ২৮ শত দাস-দাসি থাকবে।

“ধ্বংস হয়ে যাওয়া  ইসরাইল প্রত্যর্পণ করবে” (যিহিস্কিল ১৬:৫৫) “যুদ্ধাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে  দেয়া হবে” (যিহিস্কিল ৩৯:০৯) “সে হবে শান্তির দূত” (ইসায়াহ ৫২: ০৭)

যুদ্ধের শেষে শান্তির দূত হিসেবে সে আসবে, তত সময়ে ইসরাইলের প্রত্যর্পণ হয়ে  যাবে এবং সকল যুদ্ধাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হবে। অবশ্য যদি ইসরাইল ছাড়াও  মুসলিমদের কাছে অস্ত্র থাকে বিশেষ করে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তবে  ইসরাইল পুরো বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না তাই দাজ্জালের আগমনের আগেই  পাকিস্তানের পরমাণু হাতিয়ার ধ্বংস হতে হবে।

মেসিয়ানিক যুগে “দাজ্জাল প্রাচীন আইন পুনরায় কায়েম করবেন”। -(Mishneh Torah, Hilchot Melachim XI – XII)

সে যুগে দাউদ আলাহিস সালাম এর সময়ের সকল আইন পুনরায় চালু হবে। দাউদ  আলাইহিস সালামের হাইকোলে শুধু স্বর্ণমুদ্রা গ্রহণ করা হয় তাই কাগুজে  মুদ্রাকে ছুড়ে ফেলে স্বর্ণ ও রুপ্য মুদ্রার প্রচলন করা হবে। এটা সত্যি  মুসলিমদের জন্য লজ্জার বিষয় যে, ইয়াহুদিরা বিশ্ববাসীকে বাস্তব ও ইসলাম  সম্মত মুদ্রার দিকে নিয়ে যাবে অন্যদিকে মুসলিমরা কাগুজে মুদ্রাকে আঁকড়িয়ে  ধরে আছে।
“সে (দাজ্জাল) বন্ধ্যা জমি থেকে প্রচুর পরিমাণে ফসল ফলাবে”
-(যিহিস্কিল ৩৬:২৯-৩০) (এমস ০৯:১৩-১৫) (ইসায়াহ ৫১:০৩)

উপর্যুক্ত ইয়াহুদিদের কিছু কিছু ধারনা সাথে হাদিসে বর্ণিত দাজ্জালে সাথে  মিল রয়েছে। সে নিজেকে প্রভু বলে দাবী করবে এবং প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদন  করাবে। হাদিসে এসেছে,

“দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি  ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি  বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে,যমিন ফসল উৎপন্ন  করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং  পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে।.........দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে  তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের  ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে”                                                                                                                                                                          
                                                        -(মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান) 

“দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত  করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ  সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ হে সন্তান! তুমি  তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক”                                                                                             
                                                -(সহীহুল জামে আস্-সাগীর,হাদীছ নং-৭৭৫২)

এছাড়াও ইয়াহুদিদের দাজ্জালের সম্পর্কের বিশ্বাসের সাথে কিছুটা ইমাম মাহদি,  ইসা আলাহিস সালাম এবং তত সময়ের বর্ণনার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। মেসিয়ানিক  যুগের শেষে তা উপস্থাপন করা হবে ইন সা আল্লাহ।

কেন ইহুদিদের এই অবস্থা ?

ইহুদিরা চরম অহংকারী জাতি, মুসা আলাহিস সালাম এর মত এক বড় নবী তাদের সাথে থাকা সত্ত্বেও তারা ১২টি দলে বিভক্ত ছিল, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত। এই ইহুদিরা নিজেদেরকেই একমাত্র আল্লাহর মনোনিত জাতি মনে করে এবং বাকি সকল জাতি তাদের মুখাপেক্ষী। এরা সীমালংঘনকারীও বটে। এত নবী আল্লাহ তাদের কাছে পাঠিয়েছেন তারা তবুও সীমালংঘন করত এমনি কি অনেক নবী রাসুলকে হত্যাও করেছে। ঈসা আলাহিস সালাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আসবেন এমন অনেক তথ্য পূর্বের নবী ও কিতাবের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হয়েছিল। অনেক তথ্য এরা নিজের মত করে পরিবর্তন করে নিয়েছিল। (অবশ্য কিয়ামতের আগে ঈসা আলাহিস সালাম এসে আমির বা খলিফা হবেন) তবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ যখন পূর্বে প্রেরণ করেছিলেন তখন ইহুদিরা মিলিয়ে দেখল তিনি তো দাউদ আলাহিস সালামের রাজত্ব কায়েম করলেন না এবং রোমানের জুলুম থেকে ইহুদিদের উদ্ধার এবং রোমানদেরকে দাস বানান নি অর্থাৎ এ একজন ভণ্ড (নাউযুবিল্লাহ)। এবং পরে রাসুল   (ﷺ)   কে তারা যখন দেখল ইসমাইল আলাহিস সালামের বংশ ধর থেকে তখন তারা অহংকার করে শেষ নবীকেও অস্বীকার করল। তখন থেকে তারা তাদের সেই বিকৃত তথ্য নিয়ে আসন্ন মাসিহার অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করলেন তারা বার বার সীমালঙ্ঘন করলো। এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে যখন দাজ্জাল ও ঈসা আলাইহিস সালাম একসাথে অবস্থান করবেন কিন্তু ইয়াহুদিরা দাজ্জালের অনুসরণ করবে। অর্থাৎ বলা যায় তাদের অহংকার ও সীমালংঘনের শাস্তির জন্য আল্লাহ তাদেরকে একটি গোলক ধাঁধাঁ বা বিভ্রমে ফেলেছেন। যারা প্রত্যক্ষ ভাবে এতে জড়িত ছিল তাদের জন্য এটা শাস্তি আর পরোক্ষ বা রাসুল  (ﷺ)  এর যুগ থেকে বর্তমান ইয়াহুদির জন্য এটি একটি পরীক্ষা।

.....চলবে (বি ইযনিল্লাহ)

লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed

এই সিরিজের অন্যান্যঃ
ট্যাগ
দাজ্জাল, মাসীহা, ইহুদি, ঈসা, কিতাবুল ফিতান, ইসরাইল, জেরুজালেম, দাজ্জালের ফিতনা

Read More
Blog Administrator

সমাজতন্ত্র, পুঁজিবাদ বনাম ইসলামের অর্থব্যবস্থা



সমাজতন্ত্রের নীতি হলো জনসাধারনের সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে তুলে নেওয়া। পুঁজিবাদেরও নীতি সেইম, দেশের ও জাতির সম্পদ সংখ্যালঘিষ্ঠ মানুষের হাতে ব্যাংকিং প্রভৃতি সিস্টেমের মাধ্যমে পুঞ্জিভূত করা। যার ফলভোগ করে অতি অল্পসংখ্যক লোক এবং তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষকে বঞ্চিত করে বিরাট ধনী হয়ে যায়। হাতে গোণা কতকগুলি কোটিপতির সৃষ্টি হয়, বাকি জনসাধারণ জীবনের প্রাথমিক মৌলিক প্রয়োজনগুলি থেকেও বঞ্চিত হয়। এই ব্যবস্থা যতটুকু পরিধিতে প্রয়োগ করা হবে ততটুকু পরিধিতেই অই ফল হবে। একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রে এ ব্যবস্থা প্রয়োগ করলে যেমন অই রাষ্ট্রের জনসাধারনের ভীষণ দারিদ্রের বিনিময়ে মুষ্টিমেয় কোটিপতি সৃষ্টি হবে ঠিক তেমনি সমাজতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা পৃথিবীময় প্রয়োগ করলে কয়েকটি ভৌগোলিক রাষ্ট্র বিপুল ধনী হয়ে যাবে আর অধিকাংশ রাষ্ট্র চরম দারিদ্রের মধ্যে পতিত হবে। আজ পৃথিবীব্যাপী পুঁজিবাদের জয়জয়কার, এবং আমেরিকা তথা পশ্চিমারা হলো এর বাহক। ব্যাংক, আইএমএফ প্রভৃতির মাধ্যমে তারা অর্থনীতিকে নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে তারা জন্মগতভাবে ধনী আর বাকি বিশ্ব জন্মগতভাবে গরীব। একটি ভৌগোলিক রাষ্ট্রের সম্পদ যেমন সীমিত- তেমনি পৃথিবীর সম্পদও সীমিত। সীমিত যেকোনো জিনিসকেই কোথাও একত্রিত করা, পুঞ্জিভূত করা মানেই অন্যস্থানে অভাব সৃষ্টি করা। একটা রাষ্ট্রের ভেতরেই হোক, আর সমস্ত পৃথিবীতেই হোক, সেইটার সম্পদ যা মানবজাতির মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কথা, সেটাকে যদি কোথাও জড়ো করা হয় তবে অন্যত্র স্থানে অভাব সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর ভ.ই. লেনিনের ভাস্কর্য নামিয়ে তার উপর আক্রোশ মেটাচ্ছে সাম্যবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বলী রাশিয়ার ক্ষুব্ধ জনতা।
অন্যদিকে ইসলামের অর্থনীতির ভিত্তি হলো স্রষ্টাকে ভয় করতঃ সম্পদকে মানুষের মাঝে দ্রুত চালিত করা, কোথাও সঞ্চিত হতে না দেওয়া। পুঁজিবাদ যেখানে বলে সম্পদ খরচ না করে সঞ্চয় করো, সবার সঞ্চয় একত্র করো, পুঞ্জিভূত করো (ব্যাংকে), সেখানে আল্লাহ্‌ বলেনঃ

"হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। যারা স্বর্ণ-রৌপ্য সঞ্চয় করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে ব্যয় করে না, তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও ।”- (সূরা আত তাওবাঃ ৩৪)

O you who have believed, indeed many of the scholars and the monks devour the wealth of people unjustly and avert [them] from the way of Allah . And those who hoard gold and silver and spend it not in the way of Allah - give them tidings of a painful punishment.

অর্থাৎ ইসলামের অর্থনীতি পুঁজিবাদী অর্থনীতির ঠিক বিপরীত। একটায় বলে সঞ্চয় করো, অন্যটা বলে ব্যয় করো। সমাজতন্ত্রী সাম্যবাদী অর্থনীতি ব্যাক্তিগত মালিকানা নিষিদ্ধ করে জাতির সম্পদ রাষ্ট্রের হাতে পুঞ্জিভূত করে। ইসলাম সম্পদে ব্যাক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত তো করেই, রাষ্ট্রের হাতে সম্পদ পুঞ্জিভূত করতেও নিষেধ করে। কারণ একটা জাতির বা বা সমগ্র পৃথিবীতে সম্পদ যথাযথভাবে বন্টনের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে ব্যয় করা, সঞ্চয় নয়। একজনের হাত থেকে আরেকজনের হাতে সম্পদ যত দ্রুত হস্তান্তর হতের থাকবে তত বেশী সংখ্যক লোক অই সম্পদ থেকে লাভবান হতে থাকবে। যেমন ধরেন একটা ২ টাকার নোট, এই নোটটা যার হাতেই পড়লো সে যথাশীঘ্রই সম্ভব সেটা খরচ করে ফেলল। খরচ করার পদ্ধতিটা হতে পারে দান করা, কিছু কেনা, ধার দেওয়া অথবা কোনো ব্যবসাতে বিনিয়োগ করা ইত্যাদি। অই নোটটা যদি সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দশজন লোকের হাত বদলায় তবে একদিনে তা দশজন লোককে লাভবান করবে। আর যদি এক'শ জনের হাত বদলায় তবে এক'শ জনকে লাভবান করবে। অর্থাৎ এই ২ টাকা পরিমাণ সম্পদটা যত দ্রুত গতিতে সমাজের মধ্যে চালিত হবে তত বেশী সংখ্যক লোককে লাভবান করবে; তত বেশী সংখ্যক লোক অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে এবং পরিণতিতে সমস্ত সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত করবে, সম্পদশালী করবে। কিন্তু অই একই ২ টাকার নোট যদি সমস্ত দিনে কোনো হস্তান্তর না হয়ে কোনো লোকের পকেটে বা কোনো ব্যাংকের ভল্টে পড়ে থাকে তাহলে নোটটির আর কোনো মূল্য থাকে না। তার আসল মূল্য তখন হয়ে যায় এক টুকরা বাজে ছেঁড়া কাগজের সমান। কারণ সারাদিনে সেটা সমাজের মানুষের কোনো উপকার করতে পারে না। ওটা নিস্ফল, উৎপাদনহীন।

অনেকে বলতে পারেন, ব্যাংকে জমা রাখা পুঁজি তো বিনিয়োগ করা হয় এবং তা উৎপাদনে কাজে লাগে। ঠিক কথা, কিন্তু ব্যাংকে জমা করা পুঁজি বিনিয়োগের গতি স্বাধীন মুক্ত হস্তান্তরের চেয়ে কম, কোনো তুলনাই হয় না। ব্যাংকের সম্পদ বিনিময় করতে বহু তদন্ত, আঈন কানুন লাল ফিতার দৌরাত্ম এবং তারপরেও অই বিনিয়োগের সুফল ভোগ করে সমাজের একটি বিশেষ শ্রেণীর মানুষ। শুধু ঐ শ্রেণীটি- যারা ইতোমধ্যেই সম্পদশালী, জনসাধারনের অনেক ঊর্ধ্বে। আবার, ব্যাংক তো আর হাজী মহসিন না যে পুঁজি ধার চাইলেই দিয়ে দেয়। যে লোক দেখাতে পারবে যে, তার আগে থেকেই যথেষ্ঠ সম্পদ আছে, কিন্তু তার আরো চাই, ব্যাংক শুধু তাকেই পুঁজি ধার দেয়। যার কিছু নেই, যে ব্যাংকের নিকট যথেষ্ঠ পরিমাণ সম্পদ বন্ধক দিতে পারবে না তাকে ব্যাংক পুঁজি ধার দেবে না। অর্থাৎ তাদের নীতি হলো তৈলাক্ত মাথায় তেল দেওয়া, ধনীকে আরো ধনী করা, গরীবকে আরো গরীব করা।


ইসলাম এ ধরনের নীতিকে বর্জন করে। এর অর্থব্যবস্থা সমস্ত সম্পদকে যত দ্রুত সম্ভব গতিশীল করে দেয় এবং অর্থনীতিকে মুক্ত করে দেয়। আল্লাহ্‌ তায়ালা একদিকে যেমন অর্থনৈতিক প্রচেষ্টা অর্থাৎ ব্যবসা বাণিজ্য, শিল্পকে উৎসাহিত করেছেন, তেমনি ক্রমাগত বহুবার বলেছেন খরচ করো, ব্যয় করো।

"তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে যে, তারা কি ব্যয় করবে? তাদেরকে বলে দাও, যা তোমাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত (তাই ব্যয় করো)"–(সূরা আল বাকারাঃ ২১৯)

And they ask you what they should spend. Say, "The excess [beyond needs]."

উদ্দেশ্য, সেই গতিশীল সম্পদের নীতি। পরিণাম, সমাজের সর্বস্তরে সম্পদের সুষ্ঠু বিচরণ ও দারিদ্রের ইতি।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এই নীতি অর্থাৎ সম্পদকে দ্রুত গতিশীল করে দিলে সম্পদের এমন সুষ্ঠু বন্টন হয়ে মানুষের দারিদ্র লুপ্ত হবে, তার প্রমাণ কি?

এর প্রমাণ দেখতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ১৩০০ বছর আগে। এই অর্থনীতি যখন প্রয়োগ করা হয়েছিলো তখন কি ফল হয়েছিলো তা ঘেঁটে দেখতে হবে। শেষ নবী মুহম্মদ (স) এর মাধ্যমে যে শেষ জীবন বিধান স্রষ্টা প্রেরণ করেছিলেন তা মানবজাতির একাংশ গ্রহণ ও সমষ্টিগত জীবনে কার্যকরী করার ফলে জীবনের সবচেয়ে দু'টি অংশ নিরাপত্তা ও অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পূর্ণ নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, মানুষ রাতে শোওয়ার সময় ঘরের দরজা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতো না, রাস্তায় ধনসম্পদ ফেলে রাখলেও পরে যেয়ে তা যথাস্থানে পাওয়া যেতো, স্বর্ণের দোকান খোলা রেখে মানুষ নামাযে যেতো। চুরি, ডাকাতি, হত্যা, রাহাজানী প্রায় নির্মূল হয়ে গিয়েছিলো, আদালতে মাসের পর মাস কোনো অপরাধ সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা জমা হতো না। আর অর্থনৈতিক দিক থেকে মানুষ সবচ্ছল হয়ে গিয়েছিলো, এই সবচ্ছলতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিলো যে, মানুষ যাকাত ও সদকা দেওয়ার জন্য পয়সা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতো কিন্তু সেই টাকা গ্রহণ করার মত লোক পাওয়া যেতো না। শহরে নগরে লোক না পেয়ে মানুষ মরুভুমির অভ্যন্তরে যাকাত গ্রহীতা খুঁজে বেড়াতো। তাও না পেয়ে শেষ পর্যন্ত সরাইখানা গুলোতে দান করে আসতো। এটা ইতিহাস। মানবরচিত কোনো জীবন ব্যবস্থাই এর একটি ভগ্নাংশও মানবজাতিকে কখনো উপহার দিতে পারে নি, পারবেও না।


স্রষ্টা প্রদত্ত এই গতিশীল ও সহযোগিতামূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে বর্তমান মানবসমাজ তাদের নিজেদের বানানো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গ্রহণ করে শির্‌কে পতিত হয়েছে। ফলাফল হয়েছে এই যে, তাদের দেহ থেকে আত্মা পৃথক হয়ে সবাই আত্মাহীন জানোয়ারে পরিণত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে উচ্চশ্রেণী ও নিম্নশ্রেণীর। পুঁজিবাদী স্থিতিশীল অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সম্পদশালীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে স্বর্গীয় আরাম আয়েসে বাস করছে, অন্যদিকে সম্পদহীনরা করছে ভিক্ষাবৃত্তি। সম্পদ বাড়ানোর প্রতিযোগীতায় সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্য হতে সহযোগীতার সম্পর্ক উধাও হয়ে ঠকানোর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। চিকিৎসক, শিক্ষক, আঈনজীবী প্রভৃতি মহৎ পেশার লোকজন সেবাকে ধান্দায় পরিণত করেছেন। কখনো কোনো মানুষ মায়ের গর্ভ থেকে চোর, ডাকাত, অন্যায়কারী, দুর্নীতিবাজ ইত্যাদি হয়ে জন্মায় না। কিন্তু অন্যায় অর্থনৈতিক সমাজ ব্যবস্থার প্রভাবে তারা ধীরে ধীরে অপরাধী চরিত্রের হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও মানুষ তখন সৎ কাজ করতে পারে না। প্রতিষ্ঠিত এই অন্যায় অবিচারমূলক সিস্টেমকে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাটি চ্যালেইঞ্জ করতে পারে তা হলো স্রষ্টাপ্রদত্ত ইসলামের (শান্তি) শাশ্বত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করা মানে শোষণ ও নৈরাজ্যকে ডেকে আনা, যা আমরা বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চশমা দিয়ে প্রত্যক্ষ করছি।

পুঁজিবাদী অর্থনীতির ব্যর্থতার ফল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালস্ট্রীট বিক্ষোভ যার মূল স্লোগান ছিলো, "পৃথিবীর তাবৎ সম্পদ ১% মানুষের নিকট কুক্ষিগত, বঞ্চিত বাকি ৯৯%"

লিখেছেনঃ Mridul Islam


ট্যাগ
সমাজতন্ত্র ও ইসলাম, পুঁজিবাদ, ইসলাম অর্থনীতি 

Read More