আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু (ﷺ) বলেছেন- “অচিরেই বিভিন্ন রকম ফিতনার আবির্ভাব ঘটবে। ফিতনার সময় বসে থাকা ব্যক্তি দাঁড়ানো বক্তির চেয়ে এবং দাঁড়ানো ব্যক্তি পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তির চেয়ে এবং পায়ে হেঁটে চলমান ব্যক্তি আরোহী ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক নিরাপদ থাকবে। যে ব্যক্তি ফিতনার দিকে এগিয়ে যাবে সে ফিতনায় জড়িত হয়ে পড়বে এবং ধ্বংস হবে। আর যে ব্যক্তি ফিতনা থেকে বাঁচার কোন আশ্রয় পাবে সে যেন তথায় আশ্রয় গ্রহণ করে”।
-(বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান, মুসলিম শরিফ, নুয়াইম বিন হাম্মাদ -৩৪২)
আমরা বলতে পারি এই যুগে, একজন ঘরে বা মসজিদে অবস্থানকারী ব্যক্তি, রাস্তা-বাজার-অফিসমুখী ব্যক্তি থেকে; অফিসে সময় কাটানো ব্যক্তি, শপিং মলে ঘুরে বেড়ানো ব্যক্তির চেয়ে; ঘরে অবস্থান করা ব্যক্তি, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি অপেক্ষা উত্তম বা ফিতনা থেকে বেশি নিরাপদ। এখানে উত্তম মানে ফিতনার ব্যাপকতা ও চাপ তার কাছে অপেক্ষাকৃত কম পৌছবে বা নিরাপদ থাকবে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে বা পাহাড়ে হিজরতকারী, গ্রামে বসবাসকারী অপেক্ষা; এবং গ্রামে বসবাসকারী, শহরে বসবাসকারী অপেক্ষা ফিতনা থেকে অধিক নিরাপদ।

বর্তমান যুগে ইনেকটিভ বা নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি, সক্রিয় বা একটিভ ব্যক্তি অপেক্ষা; সহজ সরল জীবন- যাপনকারীরা, ব্যয়বুহুল জীবন- যাপনকারীর চেয়ে উত্তম। অপেক্ষাকৃত অনাধুনিক ব্যক্তিরা, আধুনিক ব্যক্তি থেকে; সমাজে কম মেলামেশাকারীরা, বেশি মেলামেশাকারী ব্যক্তিদের চেয়ে; স্বল্প শিক্ষিতরা, দুনিয়াবী উচ্চ শিক্ষিতদের অপেক্ষা ফিতনা থেকে বেশি নিরাপদ। তথা যে যত বেশী দুনিয়াবী কর্মের প্রতি ক্রিয়াশীল সে তত বেশী ফিতনার নিকটবর্তী।
ফিতনার অনেক প্রকার রয়েছে এই যুগে প্রতিদিন নিত্যনতুন এক ফিতনারর আবির্ভাব ঘটে এবং সবার মাঝে ছড়িয়ে পরে। মাস চারেক আগে Prisma নামে একটি ফোটো এডিটিং এপ্লিকেশন রিলিজ হয়েছিল, এবং প্রথম দুই সপ্তাহেই এত বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে বাংলাদেশের মত একটা দেশের সাধারণ মানুষরা তো বটেই এমনকি অনেক দ্বীনদার শ্রেনীর, আলেমরাও নিজের প্রোফাইল পিকে প্রিসমা ইফেক্ট ব্যবহার করে। আমার ফ্রেন্ড লিস্টের প্রায় ৫০% কে দেখেছি একটি হলেও প্রিসমা ইফেক্টের ছবি আপলোড করতে। এটা ভালো-মন্দ সে বিতর্কে যাব না তবে এটা এক প্রকারের ফিতনা। এভাবেই আমাদের মাঝে সেলফি জনপ্রিয় হয়েছিল, এটার অবস্থায় নাই বা বললাম। খেয়াল করুন কিভাবে ফিতনা বৃষ্টির মত করে আমাদের উপর পতিত হচ্ছে এবং আমাদের সকলকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র ফিতনা আমাদের মাঝে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে।
পূর্বে, টিভিতে খেলা দেখার ফতোয়ার বিষয়ে শুধু খেলাকেই মুখ্য হিসেবে বিবেচনা করা হত। বর্তমানে খেলার সাথে নাচ গান, চেয়ারিং গার্লস, খেলার মাঝে অশ্লীল বিজ্ঞাপন ইত্যাদি হাজারো জিনিস জুড়ে যাচ্ছে। এখন খেলা দেখা যাবে কি না এই ফতোয়া দিতে গিয়ে মুখ্য খেলা কেই গৌণ মনে করে, নাচ-গান, অশ্লীলতাকে প্রাধান্যদিয়ে খেলা দেখার ফতোয়া দেয়া হয়। এভাবে আমরা বুঝতে পারি কয়েক বছরের ব্যবধানেই ফিতনা আমাদেরকে কতটা গ্রাস করছে। কয়েকমাস যাবৎ একধরনের হেয়ার স্টাইল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে- মাথার উপরে চুল রেখে, পিছনে এবং কানের উপরে এই তিন দিক থেকে চুল ছোট করে ছাটাই করার। হাদিসের ভাষ্যে প্রত্যক্ষ ভাবে এমন চুল কাটা হারাম স্পষ্ট থাকা সত্ত্বেও হাজারো তরুণ, যুবকরা নির্দ্বিধায় এই হেয়ার স্টাইল রেখে চলছে। বিভিন্ন নতুন নতুন নেশা এসে যুবকদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। পর্ণগ্রাফী আজ প্রতিটা ফোনের মাধ্যমে প্রতিটা কিশোরদের হাতে পৌঁছে গেছে। ১০ বছরের শিশু ৪ বছরের শিশুকে ধর্ষণ করছে।
এছাড়া বাস্তব জীবনে এমন লক্ষ লক্ষ জানা-অজানা ফিতনা আছে। অনেক গুলো আমারা ফিতনা হিসেবে চিনতেও পারি না। মানুষ সারাদিনে এইরকম ফিতনার মাঝে আবদ্ধ থাকে। কিছু থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কিছুতে তার অগোচরেই জড়িয়ে পরে।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত,নবী করীম (ﷺ) বলেন-“অন্ধকার রাত্রির ন্যায় ক্রমাগত ফেতনা আসার আগে-ই যা আমল করার -করে ফেলো।! মানুষ তখন সকালে মুমিন থাকবে,বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন থাকবে,সকালে কাফের হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের আশায় নিজের ঈমানকে সে বিক্রি করে দেবে।” -(মুসলিম-৩২৮)
আজ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শিরক'এ জড়িয়ে যাচ্ছে। কেউ ভণ্ডামি বা অজ্ঞতার দরুন কেউ দুর্বল ইমানের কারনে। হালালাইজড এর যুগে আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করা হচ্ছে এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা যা হালাল করেছেন তা হারাম করা হচ্ছে। সুদকে হালাল করা হয়েছে। মিথ্যা মতবাদকে হালাল করা হয়েছে এমনকি মদকেও হালাল করা হচ্ছে, ব্যাভিচারকে বিয়ের নাম দিয়ে হালাল করা হচ্ছে। সহজ জান্নাত লাভের আশায় কোন খারেজীদলে যোগ দিয়ে সহজে জাহান্নামী হয়ে যাচ্ছে। সুদে জড়িয়ে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নাম লিখাচ্ছে। মানুষ ধর্মীয় আহকাম-ফরজ-ইমান-কুর’আন-সুন্নাহ ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে-নাজেনে, সজ্ঞানে-অজ্ঞানে, ঠাট্টা-মশকরায় পরিহাস বা বিদ্রুপপূর্ণ কথা বলে নিজের অজান্তেই কাফির হয়ে যাচ্ছে।
কেন এমন হচ্ছে? আমরা কোথায় চলছি? এই ছোট ছোট ফিতনা আমাদের কি, বড় ফিতনার দিকে নিয়ে যাবে না? এগুলোতেই আমরা দুর্বল, কিভাবে ইমান ধরে রাখবো, যখন প্রকাশ হবে মহাফিতনার।
মেসিয়ানিক এইজ- ১ (ইয়াহুদি এস্কেটলোজি)

ইয়াহুদিদের বিশ্বাসে দাজ্জালী যুগ
বর্তমান সেকুলার যুগে বেশির ভাগ মানুষই ধর্ম থেকে দূরে আছে শুধু মাত্র ব্যতিক্রম হল ইয়াহুদিরা, প্রায় প্রত্যেক ইয়াহুদি তাদের ধর্ম বিশ্বাসে একদম সিদ্ধহস্ত। দাজ্জালে বিশ্বাস ইয়াহুদিদের জন্য ঈমানের একটি অপরিহার্য শর্ত। ‘বিশ্বাসের ১৩ টি মূলনীতি’ (13 principles of faith) এর ১২ নাম্বারে মাসিহার আগমনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাদেরকে সাক্ষ্য দিতে হয় যে, ‘আমি মাসিহার আগমনের পুরোপুরি বিশ্বাস করি,যদি তিনি আসতে বিলম্ব করেন তবুও আমি প্রতিদিন তার আসার প্রতীক্ষা করি’। ইয়াহুদিদের মূল ইবাদাতের নাম হল এমিদাহ। এই ইবাদতে তারা প্রতিদিন তিন বার চার্চে দাড়িয়ে ১৯টি রহমতের জন্য প্রার্থনা করে। সেখানে ১০, ১৪, ১৫ ও ১৭ নং বিষয় যথাক্রমে নির্বাসিত ইয়াহুদিদেরকে পবিত্রভূমিতে ফিরিয়ে আনা, ইসরাইল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, অতিশীঘ্রই দাজ্জালের আগমন এবং হাইকোলের পুনঃনির্মাণের জন্য প্রভুর নিকট প্রার্থনা করা হয়। (To Pray as a Jew- Rabbi Hayim Halevy) (Principle 12 of Rambam's 13 Principles of Faith)
এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে দাজ্জালের আগমন প্রত্যাশীরা তার জন্য ধাপে ধাপে মঞ্চ নির্মাণ করছে। তাদের ধর্ম গ্রন্থের বাণী তারা অবশ্য পালন করেই যাবে, সত্য-মিথ্যা নিয়ে ভাববে না। দাজ্জাল নিয়ে তাদের বিশ্বাস-
“রাজা মসীহ ভবিষ্যতের কোন এক সময়ে আসবেন। তিনি দাউদের রাজত্বকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবেন। দাউদ ও সোলাইমানের মত এক মহান রাজা হবেন তিনি। হাইকল নির্মাণ করে, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইসরাইলিকে একত্র করবেন এবং প্রাচীন আইন পুনরায় কায়েম করবেন।” -এটাই হবে মাসিহা ও মেসিয়ানিক যুগ
-(Mishneh Torah, Hilchot Melachim XI – XII)
মেসিয়ানিক এইজ বা মাসীহার যুগ কেমন হবে, তাওরাতে স্পষ্ট ভাবে ইসায়াহ বইতে বর্ণনা করা হয়েছে। এই যুগকে ইয়াহুদিরা অহ’লাহম হা’বা অর্থাৎ মাসীহার যুগ, আসন্ন বিশ্ব, সোনালি যুগ এবং চির শান্তির যুগ ইত্যাদি প্রভৃতি শব্দে অভিহিত করে থাকে। ইসায়াহ বইতে দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের নাম হল ‘চিরন্তন শান্তি’ উল্লেখ্য যে আমরা মুসলিমরা মনে করি চিরন্তন শান্তি হবে জান্নাতে কিন্তু ইয়াহুদিরা মনে করে দাজ্জালের যুগ হবে চিরন্তন শান্তির যুগ। এটা হবে অফুরন্ত এবং চিরন্তন। যাইহোক সেখানে দাজ্জালের সময় সম্পর্কে বলা হয়েছে-
“সেই চরম দিনগুলিতে এমনটি ঘটবে, প্রভুর গৃহের পর্বত পর্বতশ্রেণীর চূড়ায় প্রতিষ্ঠিত হবে, উঁচু হয়ে উঠবে সমস্ত উপপর্বতের চেয়ে, তখন সকল দেশ তার কাছে ভেসে আসবে।.....তিনি দেশে ও গোত্রদের মধ্যে চলা দ্বন্দ্বের বিচার সম্পাদন করবেন (দুই দেশের মধ্যে বিচার করে যুদ্ধের অবসান), বহু জাতির বিবাদ মিটিয়ে দেবেন। তারা নিজেদের মধ্যে লড়াইয়ের সময় অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ করবে। তারা তাদের তরবারি থেকে লাঙলের ফলা তৈরি করবে এবং বর্শার ফলা দিয়ে কাটারি বানাবে। এক জাতি অন্য জাতির বিরুদ্ধে তরবারি ধরবে না। পরস্পরের মধ্যে লড়াই বন্ধ হবে। তারা কখনও যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেবে না।” -(ইসায়াহ ২: ১-৪)
এছাড়াও বলা হয়েছে মাসিয়ার আসার ঠিক পূর্বমুহূর্তে যুদ্ধ ও সংগ্রাম হবে, মানুষ যুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।- (এজেকিয়েল ৩৮:১৬) মালহামার সময়ে, বিশ্ববাসী ইতিহাসে সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ প্রত্যক্ষ করার পরেই দাজ্জালের আগমন হবে, যুদ্ধ শেষে মানুষরা শান্তি খুঁজে ফিরবে অন্যায়-হত্যা-যুলুম ইত্যাদি থেকে রেহাই পেতে চাইবে। কোন উদ্ধারকর্তা ত্রাণকর্তাকে খুঁজে বেড়াবে। এই যুদ্ধ-নৈরাজ্যের শেষের দিকেই দাজ্জাল ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হবে। দাজ্জাল তার অনুসারীদের নিয়ে ইসরাইল থেকে পুরো বিশ্বে শাসন কায়েম করবে, সকল দেশ তার কাছে নত হবে। সে হবে এক মহান মিলিটারি লিডার, এবং সুবিচারক সে সকল যুদ্ধের অবসান ঘটাবে সকল জাতি-গোত্র-রাস্ট্রের মধ্যে হওয়া দ্বন্দ্বের মীমাংসা করাবে।
ইসায়াহ’র অনুচ্ছেদ ১১- ‘দাউদের সেই বংশধর’ এ দাজ্জাল সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে-
“যেসের মূলকান্ড থেকে (দাউদের পিতার বংশধর থেকে) এক শিশু জন্ম হবেন; তার শিকর থেকে এক নবাঙ্কুর আংকুরিত হবেন। আর প্রভুর আত্মা এই বালকটির ওপরে ভর করবে। এই আত্মা বালকটিকে জ্ঞান,বুদ্ধি,পথনির্দেশ এবং শক্তি দেবে। এই আত্মা বালকটিকে প্রভুকে জানার এবং তাঁকে সম্মান করার শিক্ষা দেবে। প্রভুর প্রতি সমীহ দ্বারা বালকটি অনুপ্রাণিত হবে। সে বাইরের চেহারা দিয়ে কোন কিছু বিচার করবে না। কোন কিছু শোনার ভিত্তিতে সে রায় দেবে না। সে সততা ও ধার্মিকতার সঙ্গে দীন-দরিদ্রদের বিচার করবে। সে ন্যাযের সঙ্গে দেশের দীনহীনদের বিভিন্ন বিষয়ের নিষ্পত্তি করবে। সুবিচার,ধার্মিকতাই এই শক্তির অন্যতম উৎস হবে। তিনি নিজ মুখের লাঠি দ্বারা দেশ আঘাত করবেন, নিজ ওষ্ঠের ফুঁৎকারে দুর্জনকে বধ করবেন। সে সময় নেকড়ে বাঘ এবং মেষশাবক এক সঙ্গে শান্তিতে বাস করবে। বাঘ এবং ছাগল ছানা এক সঙ্গে শান্তিতে শুয়ে থাকবে। বাছুর,সিংহ এবং ষাঁড় একসঙ্গে শান্তিতে বাস করবে। এমনকি সাপও মানুষকে দংশন করবে না। একটা শিশুও নির্ভয়ে কেউটে সাপের গর্তের ওপর খেলা করতে পারবে। বিষাক্ত সাপের গর্তের মধ্যেও সে নির্দ্বিধায হাত দিতে পারবে”।
-(ইসায়াহ ১১: ১-৮)
দাজ্জালের কিছু গুণাবলীর কথা উল্লেখ হয়েছে এখানে, প্রভুর আত্না, প্রভুর জ্ঞান ও বিচক্ষণতা, প্রভুর উপদেশ প্রদানের ক্ষমতা, প্রভুর শক্তি ও ভয় তার মধ্যে ভর করবে। অর্থাৎ ইয়াহুদিদের বিশ্বাস আল্লাহর জ্ঞান, শক্তি, ক্ষমতা তথা আল্লাহ নিজেই দাজ্জালের উপর ভর করবেন। (নাউযুবিল্লাহ মিন হাযা) আমরা মুসলিমরা জানি দাজ্জাল সর্বশেষ নিজেকে আল্লাহ বলে দাবী করবে। উক্ত চরণে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি ইয়াহুদিরাও এভাবেই তাকে আল্লাহ বলে মেনে নিবে।
দ্বাদশ শতাব্দীর ইয়াহুদি রাবাই মুসা বিন মায়মুন (Maimonides) বর্ণনা করেন-
..এবং তখন, কেউ ক্ষুধার্ত রবে না, কোণ যুদ্ধ হবেনা, থাকবে না কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা কেউ কোন অহংকারীর ভয়ে শঙ্কিত হবে না। ভালো জিনিস থাকবে অপরিমিত, লাবণ্যটা কমনীয়তা দিয়ে ভরে যাবে বিশ্ব। প্রভুকে চেনাই হবে মানুষের এক মাত্র কাজ। বিশেষ করে ইসরাইলের জনগণরা পাবে বিচক্ষণতা, তারা ঈশ্বরের সকল গুপ্ত রহস্য হৃদয়ঙ্গম করতে পারবে।
যেভাবে বলা হয়েছে (ইসাইয়া ১১: ০৯)- “তারা আমার পবিত্র পর্বতের (জেরুজালেমের) কোন স্থানেই অনিষ্ট বা ক্ষতিকর কিছুই আর ঘটাবে না, কারন সমুদ্র যেমন জলরাশিতে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী হবে প্রভুজ্ঞানে পরিপূর্ণ”
(Mishneh Torah, Laws of Kings 12:5)
ইতিমধ্যে ইয়াহুদের বিশ্বাসে দাজ্জালি যুগ সম্পর্কে আমাদের একটি স্বচ্ছ ধারণ হয়েছে। তাই এই চরণ গুলোর ব্যাখ্যা নিস্প্রোজনীয়। ২ হাজার বছর পরে ইসরাইল রাষ্ট্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা কোন আকস্মিক ঘটনা বা কাকতালীয় বিষয় নয় বরং এটি মেসিয়ানিক যুগের প্রারম্ভ ঘোষণা করছে। ইং সা আল্লাহ পরবর্তী পর্বে দালিলিক ভাবে এটা প্রমান করব।
![]() |
দানব ইসরাইল অস্ত্রে সুসজ্জিত হয়ে নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের উপর হামলা করছে, প্রতিরোধে কিশোর বালকরা পাথর ছুড়ে মারছে, ঠিক এমনি ভাবে দাউদ আলাহিস সালাম দানব জালুতকে গাওফন বানিয়ে পরপর তিনটা পাথর ছুড়ে হত্যা করেছিল। |
তাওরাতে ইসরাইল রাষ্ট্র ও ইয়াহুদিদের পুনঃআগমন
“সেদিন এমনটি ঘটবে, প্রভু আপন জনগণের অবশিষ্টাংশকে, অর্থাৎ অ্যাসিরিয়া ও মিশরে, পাথ্রোস, ইথিওপিয়া ও এলামে, সিনার, হামাত ও সমুদ্রের দ্বীপপুঞ্জে যারা বেঁচে রয়েছে, সেখান থেকে তাদের মুক্ত করে আনবার জন্য আবার হাত বাড়াবেন। আর তিনি সমস্ত লোকদের জন্য ‘নিশানা/ পতাকা’তুলবেন। ইস্রায়েল ও ইয়াহুদা থেকে বিতাড়িত লোক যারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ছিন্নমূলের মতো বাস করছিল তাদের তিনি একত্রিত করবেন”। -(ইসায়াহ ১১: ১০-১২)
“ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইসরাইল প্রত্যর্পণ করবে” -(যিহিস্কিল ১৬:৫৫)
“তোমাদের ঈশ্বর,তোমাদের প্রতি করুণা করবেন। প্রভু আবার তোমাদের মুক্ত করবেন। তিনি তোমাদের যেসব জাতির মধ্যে পাঠিয়ে ছিলেন সেখান থেকে আবার ফিরিয়ে আনবেন। এমন কি তোমরা যদি পৃথিবীর দূরতম প্রান্তেও গিয়ে থাকো,প্রভু,সেখান থেকেও তোমাদের সংগ্রহ করবেন। তোমাদের পূর্বপুরুষদের যেদেশ ছিল,প্রভু সেই দেশে তোমাদের ফিরিয়ে আনবেন এবং সেই দেশ তোমাদের অধিকারে আসবে। প্রভু তোমাদের মঙ্গল করবেন এবং পূর্বপূরুষদের চাইতেও তোমরা অধিক হবে। তোমাদের জাতির লোকসংখ্যা এমন বৃদ্ধি পাবে যা আগে কখনও হয়নি”। (Book of Deuteronomy 30:3-5)
অর্থাৎ দাজ্জালের কাঙ্ক্ষিত সময়ে প্রভু একটি দেশ কায়েম করবেন, দেশের থাকবে একটি পতাকা,এবং চার দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইয়াহুদিদেরকে নিসানা (বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্র) অর্থাৎ চিহ্নিত ভূমি ও পতাকার তলে জড়ো করবেন। দাজ্জালের পথ পরিষ্কার করে দাজ্জালের অনুসারীরা ইতিমধ্যে ইসরাইল নামক নিসান প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। তারা তাদের পূর্বপুরুষের দেশে ফিরে এসেছে, এখন ইসরাইল তাদের অধিকারে, তাদের সংখ্যা আগের চাইতে অনেক বেশী। প্রভু তাদের মঙ্গল করেছেন, আজ তারা পরমাণু বোমার অধিকারী ও পুরো বিশ্ব পরোক্ষ ভাবে তাদের নিয়ন্ত্রণে। পূর্বে ইয়াহুদিরা জেরুজালেম থেকে দু-বার বিতারিত হয়েছিল। প্রথমবার বখতেনাসার এবং পরের বার টাইতাস দ্বারা যথাক্রমে ৫৮৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং সর্বশেষ ৭০ খ্রিস্টাব্দে। টাইটাস জেরুজালেমে অনেক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়, হাইকলে সোলাইমানি (টেম্পল অফ সলোমোন) সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়। পবিত্র কুর’আনে স্পষ্ট ভাবে সুরা বনী ইসরাইলে এই ঘটনা আলোচনা করা হয়েছে।
“আমি বনী ইসরাঈলকে কিতাবে পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে, তোমরা পৃথিবীর বুকে দুবার অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং অত্যন্ত বড় ধরনের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে। অতঃপর যখন প্রতিশ্রুতি সেই প্রথম সময়টি এল,তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে। অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচে-কানাচে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুয়িয়ে দিলাম,তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম। তোমরা যদি ভাল কর,তবে নিজেদেরই ভাল করবে এবং যদি মন্দ কর তবে তাও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন দ্বিতীয় সে সময়টি এল,তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম,যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয়,আর মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার ঢুকেছিল এবং যেখানেই জয়ী হয়,সেখানেই পুরোপুরি ধ্বংসযজ্ঞ চালায়”।
(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৪-৭)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ’লা পরের আয়াতে স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, ভবিষ্যতে তিনি আবারো ইয়াহুদিদের উপর দয়া করে জেরুজালেমে জড়ো করবেন কিন্তু যদি তারা আবারো আল্লাহর আদেশের অবজ্ঞা করে অত্যাচারী, সীমালংঘন ও যুলুম করে তাহলে তাদেরকে আবারো একই ভাবে দমন করে চিরস্থায়ী জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।
“হয়ত তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রূপ কর,আমিও পুনরায় তাই করব। আমি জাহান্নামকে কাফেরদের জন্যে কয়েদখানা করেছি”। -(সুরা বনী ইসরাইল, আয়াত -৮)
তারা আবার ফিরে এসে সীমালংঘন করছে আল্লাহ অচিরেই ইসা আলাহিস সালামের সময় তাদেরকে পুনরায় ধ্বংস করবেন । দাজ্জালের মৃত্যুর পরে ইয়াহুদিকে খুঁজে খুঁজে হত্যা করে জাহান্নামে পাঠানো হবে। এমনকি গাছ পাথর কথা বলে তাদের পিছনে লুকিয়ে থাকা ইয়াহুদিদেরকে ধরিয়ে দিবে। পুরো ঘটনাটি হাদিসে এসেছে-
“রাসূল (ﷺ) একদা আমাদের সামনে আলোচনা করছিলেন। তার আলোচনার অধিকাংশই ছিলো দাজ্জাল সম্পর্কে।…..আলোচনার এক পর্যায়ে তিনি বললেন-একদা ইসা আলাইহিস সালাম বলবেনঃ (বাইতুল মাক্বদিসের) দরোজা খোলো। তখন দরজা খোলা হবে।তার পেছনে থাকবে দাজ্জাল এবং দাজ্জালের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ইহুদি। তাদের প্রত্যেকেই থাকবে তলোয়ারধারী এবং মোটা চাদর পরিহিত। দাজ্জাল যখন ইসা আলাইহিস সালাম কে দেখবে তখনই সে চুপসে বা গলে যাবে যেমনভাবে গলে যায় পানিতে লবণ এবং সে ভাগতে শুরু করবে।তখন তিনি বলবেনঃ তোমার জন্য আমার পক্ষ থেকে একটি কঠিন মার রয়েছে যা তুমি কখনো এড়াতে পারবে না। অতঃপর ইসা আলাইহিস সালাম তাকে পূর্ব দিকের লুদ্দ নামক গেইটের পাশেই হত্যা করবেন।আর তখনই ইয়াহুদিরা পরাজিত হবে।এ দুনিয়াতে আল্লহা তাআলার যে কোন সৃষ্টির পিছনে কোন ইয়াহুদি লুকিয়ে থাকলে আল্লাহ তাআলা সে বস্তুকে কথা বলার শক্তি দিবেন এবং বস্তটি তার সম্পর্কে মুসলমানদেরকে বলে দিবে। চাই তা পাথর,গাছ,দেয়াল কিংবা যে কোন পশুই হোক না কেন। কিন্তু গারক্বদ নামক গাছটি। সে তো তাদেরই গাছ। তাই সে তাদের ব্যাপারে মুসলমানদেরকে কিছুই বলবে না”।
-(ইবনু মাজাহ হাদীস নং-৪০৭৭)
“….তখন মুসলমানরা ইহুদিদেরকে হত্যা করবে। এমনকি যে কোন ইহুদি কোন গাছ বা পাথরের পেছনে লুকিয়ে থাকলে সে গাছ বা পাথর বলবে- হে মুসলিম! হে আল্লাহর বান্দাহ!এই যে ইহুদি আমার পিছনে লুকিয়ে আছে। আসো তাকে হত্যা করো। কিন্তু গারক্বাদ নামক গাছটি। সে তো তাদেরই গাছ। তাই সে তাদের ব্যাপারে মুসলমানদেরেকে কিছুই বলবে না”।
-(বুখারী,হাদীস নাং-২৯২৬,মুসলিম,হাদীস নং-২৯২২)

বর্তমান ইসরাইল রাষ্ট্রই হল দাজ্জালের মঞ্চ
ইসায়াহ’র পরের চরনে বলা হয়েছে-
“এই সময় ইফ্রযিমের (ইস্রায়েলের) ঈর্ষা দূর হবে। ইফ্রযিম আর ইয়াহুদার ঈর্ষা করবে না। ইয়াহুদার আর কোন শত্রু থাকবে না।বরং তারা মিলে পশ্চিম দিকে উড়ে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের পিঠে নেমে পড়বে, তারা মিলে পুবদেশের সম্পদ লুট করবে; এদোম ও মোয়াবের উপরে হাত বাড়াবে, এবং আম্মোনীয়েরা তাদের বশ্যতা স্বীকার করবে।” -(ইসায়াহ ১১: ১৩-১৬)
সোলাইমান আলাহিস সালামের ইন্তেকালের পরে ইয়াহুদিরা তাঁর রাজ্যকে দুই ভাগ করে। একটি হল ইয়াহুদ (ফিলিস্তিনের দক্ষিণে) আরেকটি হল ইসরাইল (ফিলিস্তিনের উত্তরে)। ইয়াহুদিদের ১২ টি গোত্রে মধ্যে এই দুটি গোত্র ছিল সবচেয়ে বড়। ইফ্রযিম হল ইউসুফ আলাহিস সালাম এর বংশধর আর ইয়াহুদিরা হল ইউসুফ আলাহিস সালাম এর ভাই ইয়াহুদার বংশধর। বনী ইউসুফ (ইফ্রযিমরা) ইউসুফ আলাহিস সালামের বংশধর হওয়ায় অহংকার করত এবং দাউদ ও সোলাইমান আলাহিমুস সালাম ইয়াহুদীদের বংশ থেকে হওয়ায় ইয়াহুদরাও অহংকার করত। এভাবেই এদের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই থাকতো। এরা রাজ্যের সাথে সাথে ধর্ম এবং পণ্ডিতদের কেও পৃথক করে নিয়েছিল। এই লম্বা এবং কঠিন শত্রুতার অবসান হওয়া ছিল অনেকটা অসম্ভব। মাসীহা (ইসা আলাহিস সালাম হলেন দাউদ আলাহিস সালাম এর বংশ থেকে, তাদের মাসীহা দাজ্জালও একই বংশ থেকে আসবে বলে তারা মনে করে) তাই উক্ত চরণে বলা হয়েছে প্রভু, মাসীহার সময়ে এই শত্রুতার অবসান করে দিবেন এবং তারা এক সাথে পশ্চিম ফিলিস্তিনে উড়ে গিয়ে হামলা করবে। পূর্ব দিকের রাজাদের ভূমিতে গিয়ে সম্পদ লুট করবে বিশেষ করে এদোম, মোয়াব ও আম্মোনীয়র উপরে হাত বাড়াবে অর্থাৎ যথাক্রমে বর্তমান জর্ডান, সৌদি আরব ও সিরিয়া তাদের বশ্যতা স্বীকার করবে।
![]() |
খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ সনে ইয়াহুদিদের ১২ গোত্রের অবস্থান |
গতবছর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াহুদিকে পৃথিবীর সকল দেশ ছেড়ে ইসরাইলে ফিরে আসার অনুরোধ করেছিল। ইসরাইলের অভিবাসন মন্ত্রী জেইফ এরকিনি বিদেশে বাসকারী সকল ইয়াহুদিকে আহবান করেছিলেন- “ঘরে আসো, পুরো ইউরোপ জুড়ে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে তাই ঘরে আস”। শুধু মাত্র ইউরোপের ইয়াহুদিদের অভিবাসন প্রকল্পের জন্য ৪৬ মিলিয়ান মার্কিন ডলারের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ইসরাইলি সরকার।
বর্তমান যুগের সাথে এখন আমরা যদি তাদের প্রত্যাশিত দাজ্জালি যুগ মিলিয়ে দেখি আশা করি আমরা সবাই স্পষ্ট হতে পারবো যে, আমরা এখন কোন সময়ে বসবাস করছি, কি হতে চলছে এবং স্বীকার করবো ২ হাজার বছর পরে ইসরাইলীদের সকল বৈরিতার অবসান করে ইসরাইল রাষ্ট্র পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে, পৃথিবীর চতুর্দিক থেকে এসে জড়ো হয়ে, ফিলিস্তিনের উপর নির্যাতন ও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করা কোন আকস্মিক বা কাকতালীয় ঘটনা নয় বরং ২৮০০ বছর পূর্বের হযরত আল-ইয়াসা’আ আলাইহিস সালামের ভবিষৎবাণীকে পূরণ করার পরিকল্পনার অংশ। অবশ্যই উপর্যুক্ত দলিল পাওয়ার পরও, যারা মনে করেন এটা আকস্মিক কিংবা ইসরাইল রাষ্ট্রের সাথে দাজ্জালের আগমনের কোন সম্পর্ক নেই, তবে তাদেরকে অবশ্যই আলোচিত সম্পূর্ণ ঘটনার একটি আলাদা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দাড় করাতে হবে, অন্যথায় উপর্যুক্ত মতকে বাতিল করা যাবে না। পাশাপাশি এটাও মেনে নিতে হবে যে, এই ইসরাইল রাষ্ট্রই দাজ্জালের মঞ্চ এবং সে অচিরেই, খুবই নিকটবর্তী সময়ে আমাদের মাঝে আগমন করতে যাচ্ছে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
দাজ্জাল নিয়ে এক রাবাইয়ের ভবিষ্যৎবানী
যুগে যুগে বহু ইয়াহুদি পণ্ডিত তাদের ধর্মগ্রন্থ থেকে মাসিয়াহ’র আগমনের ও দাজ্জালী যুগের সঠিক সময় নির্ণয় করার চেষ্টা করেন। ইয়াহুদিদের মাঝে সবচেয়ে জনশ্রুত ও গ্রহণযোগ্য এমন রাবাইদের মধ্যে অন্যতম হলেন রাবাই জুদাহ বেন সেমুয়্যাল । ১২ শতাব্দীতে এই জার্মান রাবাই বাইবেলের গুননা ও ভবিষৎবাণীর চরণের সাহায্যে দাজ্জালের সময়ের ভবিষৎবাণী করেন। এটি পঞ্চাশ জয়ন্তীর দৈববাণী (The Prophecy of Ten Jubilees) নামে পরিচিত। রাবাই জুদাহ বেন সেমুয়্যাল বলেন-
“তুর্করা (উসমানীয় খিলাফত) জেরুজালেম দখল করবে, জেরুজালেমে তাদের শাসন হবে ৮ জুবলি পর্যন্ত। তারপর জেরুজালেম শাসনহীন বা নো-ম্যান ল্যান্ড হিসেবে থাকবে ১ জুবলি। নবম জুবলির সমাপ্তিতে জেরুজালেম পুনরায় ইয়াহুদিদের দখলে আসবে। এরপরেই (১ যুবলির পরে) মেসিয়ানিক যুগের প্রারম্ভ হবে”। -(March, 2008 in Israel Today on page 18)

জুদাহ বেন সেমুয়্যাল ১২১৭ সালে মারা যান। তার মৃত্যুর পুরো ৩০০ বছরে পরে ১৫১৭ সালে তুর্করা (উসমানি খিলাফত) মামলুক সালতানাতকে পরাজিত করে জেরুজালেম দখল করে। এখান থেকে শুরু হয় সেমুয়্যালের দৈববাণী। ১৯১৭ সালে ইংল্যান্ডের কাছে পরাজিত হয়ে জেরুজালেম উসমানি খিলাফতের বেদখল হয়। জেরুজালেমে উসামানিরা পুরো ৮ জুবলি (৫০*৮=৪০০ বছর) রাজত্ব করেছিল। এর পরের এক জুবলি বা ৫০ বছর (১৯১৭-১৯৬৭) বেদখল ও বিতর্কিত ভূমি হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ছিল। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেও জেরুজালেম ইসরাইলের অংশ ছিল না। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইলের ৬ দিনের যুদ্ধ শেষে ইসরাইল জেরুজালেম দখল করে। এটা এমন ভাবে থাকবে এক জুবলি (৫০ বছর) অর্থাৎ ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এর পরের জুবলিতে কি হবে সেমুয়্যাল তা স্পষ্ট করেনি তবে তার ছাত্ররা বলে এর পরের জুবলিতেই মাসিহার আগমন হবে। সেমুয়্যালের ৮ শত বছর আগের সকল দৈব্যবাণী অক্ষরে অক্ষরে সত্য হয়েছে ও হচ্ছে এবং হবে বলে ইয়াহুদিরা বিশ্বাস করে। তার ছাত্ররা যখন তাকে জিজ্ঞাস করল, ‘এই অন্তর্দৃষ্টি আপনি কোথায় পেলেন?’ সেমুয়্যালে বলল- “নবী এলিজাহ (ইলিয়াস আলাহিস সালাম) প্রতীয়মান হয়ে (এই সকল বিষয় গুলো) অনাবৃত করছেন”
উল্লেখ্য যে, ইয়াহুদিদের মধ্যে অনেক দল-উপদল রয়েছে। বিশেষ করে শেষ যামানা বিষয়ে এরা ভিন্ন ভিন্ন বিশ্বাসে বিশ্বাসী । কিছু এমন রয়েছে যারা দাজ্জাল আসবে বলে বিশ্বাস করে না, কিছু ইসরাইল রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে, তেমনি কিছু ইয়াহদি উপরিল্লিখিত বিষয়কে অস্বীকার করে। রাবাই সেমুয়্যালেরও নিজস্ব আলাদা বিশ্বাস ছিল।
ইয়াহুদী এস্কেটেলোজি'র সমাপ্তি পর্ব
“সে দাউদের বংশধর হবে” (ইসায়াহ ১১:১) “সে সোলাইমানের বংশ থেকে আসবে” ( ১ বংশধর ২২:৮-১০) (২ বংশধর ৭:১৮)
অর্থাৎ সে দাউদ আলাহিস সালামের পুত্র সোলাইমান আলাইহিস সালামের বংশধর হবে। অনেক রাবাই বলেন দাজ্জালের পূর্ণ নাম হল ‘মাসিহা বিন ডেবিড’
“তিনি মৃত্যুকে চিরকালের মতই বিলুপ্ত করবেন; স্বয়ং পরমেশ্বর প্রভু সকলের মুখ থেকে মুছে দেবেন অশ্রুজল, তাঁর আপন জাতির অপমান গোটা পৃথিবী থেকে দূর করে দেবেন, কারন স্বয়ং প্রভুই একথা বললেন”। (ইসায়াহ ২৫: ০৮)
“প্রভু যাদের মুক্তিকর্ম সাধন করলেন, তারা ফিরে আসবে, হর্ষধ্বনি তুলতে তুলতে তারা সিয়োনে প্রবেশ করবে; তাদের মাথা হবে চিরন্তন আনন্দে বিভূষিত; সুখ ও আনন্দ হবে তাদের সহচর; শোক ও কান্না তখন পালিয়ে যাবে”। (ইসায়াহ ৫১: ১১)
অর্থাৎ তখন কোন রোগ বালাই থাকবে না কেউ মৃত্যুবরণ করবে না, ইয়াহুদিরা চিরন্তন সুখ শান্তিতে থাকবে। ইয়াহুদিরা হল আল্লাহর মনোনীত জাতি, বাকি সবাই হল অজ্ঞ, উম্মি, নিকৃষ্ট এবং ইয়াহুদিদের অধীনস্ত। ইয়াহুদিরা এটা কঠোর ভাবে বিশ্বাস করে যে, ইসমাইল আলাইহিস সালামের মাতা ছিলেন একজন দাসী এবং তার সকল বংশধররা উম্মী অর্থাৎ ধর্মীয় জ্ঞান এবং নবী’র সোহবত ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে উম্মীদের নবী বলে অভিহিত করত।
“যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল, সে সকল দেশরা পরিতাপ করবে” (ইসায়াহ ৫২: ১৩- ৫৩:৫) মন্তব্য নিস্প্রজনীয়
“সেই দিনগুলিতে সর্বজাতির সর্বভাষার দশ দশ পুরুষ এক এক ইয়াহুদী পুরুষের পোশাক টেনে ধরে একথা বলবেঃ আমরা বুঝতে পেরেছি যে, পরমেশ্বর আপনাদের সঙ্গে আছেন। আমরা কি এসে আপনার সঙ্গে উপাসনা করতে পারি?” (জাখারিয়া ৮:২৩) ইয়াহুদি ধর্মকে সবাই একমাত্র সত্য ধর্ম হিসেবে মেনে নিবে।- (জেফানিয়া ১৪: ৯; মিখা ৪: ২-৩)
অর্থাৎ পুরো বিশ্ববাসী ইয়াহুদিদের থেকে আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতে চাইবে, স্বীকার করবে যে তারাই প্রভুরে একমাত্র মনোনিত জাতি। আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ইয়াহুদিরা মনে করে এই সময়ে প্রত্যেক ইয়াহুদির ২৮ শত দাস-দাসি থাকবে।
“ধ্বংস হয়ে যাওয়া ইসরাইল প্রত্যর্পণ করবে” (যিহিস্কিল ১৬:৫৫) “যুদ্ধাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হবে” (যিহিস্কিল ৩৯:০৯) “সে হবে শান্তির দূত” (ইসায়াহ ৫২: ০৭)
যুদ্ধের শেষে শান্তির দূত হিসেবে সে আসবে, তত সময়ে ইসরাইলের প্রত্যর্পণ হয়ে যাবে এবং সকল যুদ্ধাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হবে। অবশ্য যদি ইসরাইল ছাড়াও মুসলিমদের কাছে অস্ত্র থাকে বিশেষ করে পাকিস্তানের পরমাণু অস্ত্র তবে ইসরাইল পুরো বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না তাই দাজ্জালের আগমনের আগেই পাকিস্তানের পরমাণু হাতিয়ার ধ্বংস হতে হবে।
মেসিয়ানিক যুগে “দাজ্জাল প্রাচীন আইন পুনরায় কায়েম করবেন”। -(Mishneh Torah, Hilchot Melachim XI – XII)
সে যুগে দাউদ আলাহিস সালাম এর সময়ের সকল আইন পুনরায় চালু হবে। দাউদ আলাইহিস সালামের হাইকোলে শুধু স্বর্ণমুদ্রা গ্রহণ করা হয় তাই কাগুজে মুদ্রাকে ছুড়ে ফেলে স্বর্ণ ও রুপ্য মুদ্রার প্রচলন করা হবে। এটা সত্যি মুসলিমদের জন্য লজ্জার বিষয় যে, ইয়াহুদিরা বিশ্ববাসীকে বাস্তব ও ইসলাম সম্মত মুদ্রার দিকে নিয়ে যাবে অন্যদিকে মুসলিমরা কাগুজে মুদ্রাকে আঁকড়িয়ে ধরে আছে।
“সে (দাজ্জাল) বন্ধ্যা জমি থেকে প্রচুর পরিমাণে ফসল ফলাবে”
-(যিহিস্কিল ৩৬:২৯-৩০) (এমস ০৯:১৩-১৫) (ইসায়াহ ৫১:০৩)
উপর্যুক্ত ইয়াহুদিদের কিছু কিছু ধারনা সাথে হাদিসে বর্ণিত দাজ্জালে সাথে মিল রয়েছে। সে নিজেকে প্রভু বলে দাবী করবে এবং প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপাদন করাবে। হাদিসে এসেছে,
“দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে,যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে।.........দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে”
-(মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
“দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে? সে বলবে অবশ্যই মানব। এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক”
-(সহীহুল জামে আস্-সাগীর,হাদীছ নং-৭৭৫২)
এছাড়াও ইয়াহুদিদের দাজ্জালের সম্পর্কের বিশ্বাসের সাথে কিছুটা ইমাম মাহদি, ইসা আলাহিস সালাম এবং তত সময়ের বর্ণনার সাদৃশ্য পাওয়া যায়। মেসিয়ানিক যুগের শেষে তা উপস্থাপন করা হবে ইন সা আল্লাহ।
কেন ইহুদিদের এই অবস্থা ?
ইহুদিরা চরম অহংকারী জাতি, মুসা আলাহিস সালাম এর মত এক বড় নবী তাদের সাথে থাকা সত্ত্বেও তারা ১২টি দলে বিভক্ত ছিল, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত। এই ইহুদিরা নিজেদেরকেই একমাত্র আল্লাহর মনোনিত জাতি মনে করে এবং বাকি সকল জাতি তাদের মুখাপেক্ষী। এরা সীমালংঘনকারীও বটে। এত নবী আল্লাহ তাদের কাছে পাঠিয়েছেন তারা তবুও সীমালংঘন করত এমনি কি অনেক নবী রাসুলকে হত্যাও করেছে। ঈসা আলাহিস সালাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম আসবেন এমন অনেক তথ্য পূর্বের নবী ও কিতাবের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হয়েছিল। অনেক তথ্য এরা নিজের মত করে পরিবর্তন করে নিয়েছিল। (অবশ্য কিয়ামতের আগে ঈসা আলাহিস সালাম এসে আমির বা খলিফা হবেন) তবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ যখন পূর্বে প্রেরণ করেছিলেন তখন ইহুদিরা মিলিয়ে দেখল তিনি তো দাউদ আলাহিস সালামের রাজত্ব কায়েম করলেন না এবং রোমানের জুলুম থেকে ইহুদিদের উদ্ধার এবং রোমানদেরকে দাস বানান নি অর্থাৎ এ একজন ভণ্ড (নাউযুবিল্লাহ)। এবং পরে রাসুল (ﷺ) কে তারা যখন দেখল ইসমাইল আলাহিস সালামের বংশ ধর থেকে তখন তারা অহংকার করে শেষ নবীকেও অস্বীকার করল। তখন থেকে তারা তাদের সেই বিকৃত তথ্য নিয়ে আসন্ন মাসিহার অপেক্ষা করছে। আল্লাহ তাদেরকে পরীক্ষা করলেন তারা বার বার সীমালঙ্ঘন করলো। এবং চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে যখন দাজ্জাল ও ঈসা আলাইহিস সালাম একসাথে অবস্থান করবেন কিন্তু ইয়াহুদিরা দাজ্জালের অনুসরণ করবে। অর্থাৎ বলা যায় তাদের অহংকার ও সীমালংঘনের শাস্তির জন্য আল্লাহ তাদেরকে একটি গোলক ধাঁধাঁ বা বিভ্রমে ফেলেছেন। যারা প্রত্যক্ষ ভাবে এতে জড়িত ছিল তাদের জন্য এটা শাস্তি আর পরোক্ষ বা রাসুল (ﷺ) এর যুগ থেকে বর্তমান ইয়াহুদির জন্য এটি একটি পরীক্ষা।
.....চলবে (বি ইযনিল্লাহ)
লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed
এই সিরিজের অন্যান্যঃ
- দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ (দাজ্জাল আসছে প্রস্তুতি সম্পন্ন)
- দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্বঃ (নারী, Hyper Sexuality ও বর্তমান প্রজন্ম, এটা কি শেষ জামানা)
- দাজ্জালের মহা ফিতনা ও বর্তমান বিশ্ব (কাগুজে মুদ্রা, স্বর্ণের পাহাড়, ডলারের ফাঁদ, সুদের ছিটা)
ট্যাগ
|
দাজ্জাল, মাসীহা, ইহুদি, ঈসা, কিতাবুল ফিতান, ইসরাইল, জেরুজালেম, দাজ্জালের ফিতনা
|
2 comments
Write commentsexcellent analysis as well as informative. Good job bro...go ahed. May ALLAH bless you.
Replyদাজ্জালের ফিতনাসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টার্নেট, নেটওয়ার্ক, মোবাইল, টেলিভিশন, কম্পিউটার, বেতার, সামাজিক যোগাযোগ্মাধ্যম প্রভৃতি প্রভৃতি। একজন মুস্লিমের পক্ষে এসবের ব্যাবহার কখনই কাম্য নয়। এসবের ধারেকাছে যাওয়াও কখনই উচিত নয়।
Replyনিম্নে আমি কিছু নিবন্ধ তুলে ধরছি। আশা করি আপনারা বিষয়গুলোর যোগসুত্র ধরতে পারবেন এবং অন্যদের এ ব্যাপারে সতর্ক করবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ নিম্নোক্ত শেষ নিবন্ধ ব্যাতীত বাকিগুলোতে জীব ও জীবসদৃশ ছবি রয়েছে যা নিঃসন্দেহে পুরোপুরি হারাম। ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, দেখা সবই হারাম।
(১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, “(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সবচাইতে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা (প্রাণীর) ছবি বানায়।” সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশান অনুবাদ।
(২) আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে, আল্লাহ্ তাআ’লা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মাঝে (সেই মূর্তি বা ছবিতে) প্রাণ দিতে না পারে। আর তাতে সে কক্ষনো প্রাণ দিতে পারবে না।” সহীহ বুখারী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নং ২০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশান অনুবাদ।
(৩) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ‘আয়িশা (রাঃ) –এর নিকট কিছু পর্দার কাপড় ছিল, তা দিয়ে তিনি ঘরের এক দিকে পর্দা করেন। রসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে বললেনঃ আমার থেকে এটা সরিয়ে নাও, কেননা এর ছবিগুলো সলাতের মধ্যে আমাকে বাধা দেয়।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪২১)
(৪) আবূ ত্বালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ফেরেশতা ঐ ঘরে প্রবেশ করে না, যে ঘরে কুকুর থাকে এবং ঐ ঘরেও না, যে ঘরে ছবি থাকে।
লায়স (রহঃ) আবূ ত্বালহা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে (এ বিষয়ে) শুনেছি।(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১২)
উক্ত নিবন্ধসমূহঃ
https://bigganbortika.org/photo-lab/
https://bigganbortika.org/how-much-safe-we-are-virtually/
https://bigganbortika.org/why-facebook-shuted-down-their-ai/
https://bigganbortika.org/online-mining-is-a-spam/
https://bigganbortika.org/planning-of-bd-bank-robbery/
https://hudhudmail.wordpress.com/2020/03/02/%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%93-%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e%e0%a6%be%e0%a6%a8/