ভূমিকাঃ
যখন কোণ অনভিজ্ঞ চোখ আকাশে নক্ষত্রের দিকে তাকায় তখন সে শুধু সুন্দর মনোরম তারকার সৌন্দর্য দেখতে পায়। কিন্তু তারকা শুধু সৌন্দর্যের বস্তু নয়, এটা পথ প্রদর্শকেরও কাজ করে।
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ
“আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি” (সূরা মুলক-৫)
কুরআনে بِمَصَابِيحَ (প্রদীপ মালা) শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে, যারা অর্থ পথ চিনিয়ে দেয় এমন বাতি। তাই যখন একজন জাহাজের অভিজ্ঞ কাপ্টেন নক্ষত্র দেখে পথ চিহ্নিত করতে পারেন, এ ভাবেই জাহাজকে নেভিগেট করা হয়।
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ۗ قَدْ فَصَّلْنَا الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٦:٩٧]
“তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।” (সূরা আনআম-৯৭)
তবে শুধু একটি তারা দেখে পথ নির্ণয় করা যাবে না, পুরো সমষ্টি বা একটি নির্দিষ্ট এরিয়ার সকল তারকাকে একসাথে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এভাবেই তারাদের মধ্যে সংযুক্ত স্থাপন করে, অতীতে বিশেষ করে আরবের লোকেরা পথ পাড়ি দিত।
ইতিহাসের ঘটনাপঞ্জী (ইভেন্টস) ঠিক এমনই। এটা বার বার ফিরে আসে।
وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ
“আর এ দিনগুলোকে আমি মানুষের মধ্যে পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি” (সূরা আল ইমরান-১৪০)
ইতিহাসের ঘটনা গুলো বার বার আবর্তিত হয়। আমাদের শুধু ইতিহাসের ঘটনাগুলোকে মিলিয়ে দেখতে হবে একটির সাথে অন্যটি। একই ভাবে যখন কোণ অনভিজ্ঞ চোখ ইতিহাসের কোন ঘটনাকে দেখে তখন সে শুধু ইতিহাস ও কিছু ঘটনা বিশ্লেষণ করতে পারে কিন্তু প্রকৃত রহস্য উন্মচোন করতে পারে না। যখন একজন এমন ব্যক্তি যার (অন্তরে দৃঢ় ঈমান রয়েছে) তার অভিজ্ঞ চোখ দিয়ে ইতিহাসের ঘটনাকে দেখে তখন সে একটার সাথে একটা মিলিয়ে ভবিষ্যতে কি হতে যাচ্ছে সেই পথ চিহ্নিত করতে পারে। সে কোন (যেমনঃ ২ হাজার বছর পরে ইহুদিদের পবিত্র ভুমি তে ফিরে আসা,খিলাফাহর পতন,বিশ্ব যুদ্ধ,হোলকাস্ট ইত্যাদি) ঘটনা কে বিছিন্ন ভাবে বিশ্লেষণ করে ব্যাখ্যা করে না। সে একটা নির্দিষ্ট এরিয়ার (বা বিষয়ের) নক্ষত্রগুলোকে (বা ইতিহাসের ঘটনা কে) এক সাথে দেখে (‘Connects the dots’ in history) তাই ইতিহাসের ঘটনা তার কাছে শুধু ঘটনা নয় আরো অনেক কিছু। যা তাকে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো অনেক তথ্য দেই। এ ভাবেই সে অনেক বছর আগেই বুঝতে পারে যে ২০১০ এর পরে আরব স্প্রিং ঘটবে, অচিরেই ডলার কলাপ্স করবে, ইতিহাসের অন্তিম ঘড়ি কত দূরে, ফ্লস ফ্ল্যাগ কবে হতে পারে এমন আরো অনেক কিছু সে আগেই বুঝে যায়। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা জ্ঞান দান করেন।
ইতিহাসঃ
ইতিহাস অত্যন্ত বিস্তৃত। ইতিহাস শুধু কোন জাতির উত্থান-পতনের ঘটনা নয়। এটির সাথে জড়িয়ে আছে যুগ যুগ ধরে মানুষের জীবন জীবকার প্রতিটি বিষয়। মানুষ প্রায় ৬ হাজার বছরে গ্রহনযোগ্য ইতিহাস উদ্ধার করতে পেরেছে। আমরা ইতিহাসে অনেক বিষয়ের উত্তর খুব সহজেই পেতে পারি। আমরা ইতিহাসের যত গভীরে প্রবেশ করবো ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তত বেশি সঠিক অনুমান করতে পারবো। আমাদেরকে সকল ঘটনা সমষ্টিকে এক সাথে দেখে, পরস্পর ঘটনা সংযুক্ত করতে হবে। কিন্তু ৬ হাজার বছর আগে থেকে বা ইব্রাহীম (আঃ) এর সময় থেকে বিভিন্ন ঘটনা আলোচনা করে কানেক্ট করা অনেক জটিল তাই এখানে শুধু বিংশ শতাব্দীর ঘটনা গুলোকে তুলে ধরা হয়েছে। অন্যদিকে বিংশ শতাব্দীতে অনেক ঘটনা ঘটেছে আবার প্রতিটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে আরও ঘটনা আবর্তিত হয়েছিল তাই আলোচনার সুবিধার্থে এখানে শুধু ম্যাক্রোলেভেলের ইভেন্টস তুলে ধরছি।
বিংশ শতাব্দীতে মানব জাতি বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহ কিছু অদ্ভুত রহস্যময় পরিবর্তন (Mysterious Transformation) হতে দেখেছে। এমন কিছু পরিবর্তন যা মানবজাতির জীবন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা ইতিহাসে কখনো দেখা যায় নি। এর মধ্যে কিছু এমন পরিবর্তন রয়েছে যা ইতিহাসের সকল জাতি, ধর্ম ও মতাদর্শকে অবজ্ঞা করে, তাদেরকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমরাই জ্ঞান বিজ্ঞানে সবচেয়ে উচ্চ স্থানে আছি তাই তোমাদের সকল ধর্ম, দর্শন ও মতাদর্শ বাতিল।
বছরের ক্রমধারায় কিছু রহস্যময় পরিবর্তন তুলে ধরি-
• ১৮৯৭- জায়নিস্ট নামে এক ইহুদি দলের প্রতিষ্ঠা। প্রায় ১৯০০ বছরে প্রথমবার ইহুদি জেরুজালেম উদ্ধারের জন্য গ্রুপ তৈরি করে। আর প্রথমবার খ্রিষ্টানরা নিজের জন্য নয় শুধু ইহুদিদের জন্য জেরুজালেমকে মুক্ত করতে তাদেরকে সহয়তা করে।
• ১৯১৩- ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেমের প্রতিষ্ঠা হওয়া। স্টালিন পাউন্ডের জায়গা নিতে ডলার মুদ্রার প্রচলন ঘটে।
• ১৯১৪- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। (ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর প্রথম কাজ ঋন দেয়া আর যুদ্ধ সবচেয়ে ভালো উপলক্ষ। যুদ্ধের উদ্দেশ্য- ব্রিটিশকে সরিয়ে আমেরিকার ক্ষমতা দখল, খিলাফতের পতন, আন্তর্জাতিক ব্যাংকারদের পৃষ্ঠপোষকতা ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জার পরিবারকে ক্ষমতাচ্যুত ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে সমাজতান্ত্রিক নাস্তিক সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করা)
• ১৯১৬- শারীফ হোসাইন উসমানীয় খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে হিজাজের স্বাধীনতা ঘোষণা করে। (বিশ্ব যুদ্ধে বিপর্যস্ত সর্বশেষ খিলাফাহর হাত থেকে পবিত্র দুই মসজিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব ছিনিয়ে নেয়া হয়)
• ১৯১৭-ফেব্রুয়ারি রেভুলেসন। দুনিয়ার বুকে প্রথম এক নাস্তিকতাবাদী ভূখণ্ড কায়েম হল। যারা রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত সকল পর্যায়ে থেকে আল্লাহর নীতি বাতিল করে মানব নীতি প্রবর্তন করলো। খ্রিষ্টানদের মধ্যে যে দলে সাধারন ধর্মীয় চেতনা ছিল তাকে ধ্বংস করে দেয়া হল। অর্থোডক্স ও মুসলিমের বিরুদ্ধে চির শত্রুতা তৈরি করা হল। যায়নিস্টদের নিজস্ব এক দেশ কায়েম হল।
• ১৯১৭-প্রায় ১৯০০ বছর পরে বনী ইসরাইল ইহুদিদের পবিত্র ভূমিতে ফিরে এল। ব্যালফোর ঘোষণার মাধ্যমে খ্রিষ্টানদের শেষ ক্রুসেডে ইহুদিদের বিজয়ী হল।
• ১৯২০-ইতিহাসে প্রথমবার নারীকে ভোটাধিকার প্রদান করা হল। এই সময় স্কার্ট তৈরি ও ব্যবহার শুরু হয়। কাপড়ের অবনতির সাথে নারী স্বাধীনতার পজটিভ সম্পর্ক রয়েছে।
• ১৯২৩-জার্মানিতে হাইপার ইনফ্লেইসন অর্থাৎ অতি মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিল। মানব জাতি প্রথম বার কাগুজের মুদ্রার অসারতা প্রত্যক্ষ্ করলো। একটি পত্রিকার দাম ১ মার্ক (জার্মান মুদ্রা) থেকে ৭ কোটি মার্কে গিয়ে পৌঁছল।
• ১৯২৪-পৃথিবীর বুক থেকে সর্বশেষ খিলাফতের পতন ঘটল। সামান্য হলেও ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে পৃথিবীর কোন না কোন ভূখণ্ডে আল্লাহর আইন-নীতি, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আল্লাহর শাসন কায়েম ছিল। আর এই শাসন কায়েম করার জন্য মানুষ (আল্লাহর খলীফা) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল। অন্যদিকে সেকুলার তুর্কীর আত্মপ্রকাশ।
• ১৯২৪- খিলাফত পতনের সাথে সাথে বিশ্বের বুক থেকে মুক্ত ও স্বাধীন বাজার ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটল। কারণ উসমানী খিলাফতের মুদ্রা ছিল সুন্নাহ মুদ্রা কোন ফালতু ব্যাকলেস পেপার মানি নয়।
• ১৯৩০- আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দা। গোল্ড বাদ দিয়ে কাগুজের মুদ্রা ব্যবস্থা কায়েম করার অন্যতম ধাপ।
• ১৯৩৫-ডলারের মুল্যমান হ্রাস পায় তাই ২০ ডলারের নোটের রিডিম ভ্যালু ৩৫ ডলার নির্ধারিত করা হয়। আমেরিকার দারিদ্রতা।
• ১৯৩৫-জার্মান নুমবার্গ আইন (Nuremberg Laws) প্রনয়ন করলো। এই আইন অনুযায়ী ইহুদিদেরকে এক ভিন্ন জাতি হিসেবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ব্রাহ্মণ ও স্লেচ্ছের মত ভাগ করে দেয়া হয়। অন্যদিকে জার্মানরা ইহুদিদেরকে পূর্ণ ভাবে বর্জন করা শুরু করলো।
• ১৯৩৯- হুয়াইট পেপার। ১০ বছরের মধ্যে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটা স্বাধীন স্টেট তৈরি করার জন্য ব্রিটিশ হুয়াইট পেপার ইস্যু করে। এটি সেই ধাত্রী মাতার অধিক ভালোবাসা দেখানো।
• ১৯৩৯-৪৫- দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এখানে অনেক অনেক বড় ঘটনা ঘটেছিল সব উল্লেখ করলে অনেক বড় হয়ে যাবে।

• ১৯৪৪- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
• ১৯৪৫-এই সালে International Monetary Fund (IMF) গঠন করা হয়। মানব ইতিহাসে অর্থনীতির সব চেয়ে বড় প্রতারনা, ফাঁদ, হল এই আই এম এফ এবং বিশ্ব ব্যাংক। ব্রিটেনউড এগ্রিমেন্টকে বাস্তবায়ন ও নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গঠন করা হয়েছিল এটা। এই দুইটি প্রতিষ্ঠান পুরো বিশ্বের অর্থ ব্যবস্থাকে একছত্র ভাবে নিয়ন্ত্রন করে।
• ১৯৪৫-হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এটোমিক বোমার বিস্ফোরণ। বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দেয় কিভাবে এখন কয়েক সেকন্ডে লক্ষাথিক মানুষকে হত্যা করা যায়। আর এভাবেই বিশ্ব ওয়েপন অফ মাস ডিস্ট্রকশনের যুগে প্রবেশ করে।
• ১৯৩৩-৪৫- পর্যন্ত ইহুদিদের নিধন হয়। হোলোকাস্ট যেখানে দাবী করা হয় ৬০ লক্ষ ইহুদিদের কে হত্যা করা হয়েছিল
• ১৯৪৬-জাতিসংঘ গঠন করা হয়। ইতিহাসে প্রথম বার পুরো বিশ্বের প্রায় সকল ভূখণ্ড, জাতি ও সংস্কৃতি যুক্ত করে এক টেবেলি নিয়ে আশা হয় আর প্রথম বার সকল দেশ স্বীকার করে-“পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা কায়েমের জন্য এই Security Council হল সর্বচ্চো ক্ষমতার অধিকারী” (SC charter act-24&25) মানে এখানে তাদের অধিকার আল্লাহর ও তার রাসুল (সা)’র অধিকার থেকেও বেশি। সকল আধুনিক সেকুলার দেশ এই ধারার সাথে সম্মতি দেয়। আর মানব ইতিহাসের প্রথম বার রাষ্ট্রীয় ভাবে আল্লাহকে সরিয়ে জাতিসংঘকে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দেয়া হয়। তারপর শুরু হয় সকল দেশে গণতন্ত্র কায়েম করে ডিকোলোনাইজড। এভাবে তথাকথিত স্বাধীনতা পায়- ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও আসিয়ান দেশগুলো। আর সকল দেশে কালো চামরার যায়নিস্টদের বসিয়ে দেয়া হয় ক্ষমতায়।
• ১৯৪৬- ইউনিসেফ প্রতিষ্ঠা হয়। আর তারা টিকা ও আরো অদ্ভুত সব পলিসি গ্রহন করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস নিশ্চিত করে।
• ১৯৪৬- এই সময় ইতিহাসে মানুষ প্রথম বার জাহিলিয়াতের সব চেয়ে নিম্ন স্তরে গিয়ে সবচেয়ে স্বল্প বসন অর্থাৎ বিকিনি উদ্ভাবন করে এবং এটা সুইমিং ক্লথ হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পজিটিভ রিলেশন হওয়ায় সহজে অনুনেয় যে নারীরা সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা পায় এই সময়ে।
• ১৯৪৮- ইসরাইল দেশের প্রতিষ্ঠা। দাউদ (আঃ) এর বানানো স্টেট অব ইসরাইল আবারো প্রায় ২৮০০ বছর পরে পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে। ধাত্রী ইংল্যান্ড ইসরাইলকে জন্ম দেয়, আর পরে আমেরিকা একে দত্তক নেয়। আমি মনে করি এটাই বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ঘটনা। ২৮০০ বছর পরে আবারো ইসরাইল নামক দেশ কায়েম হল এটা কি এমনি এমনি হয়েছে?
• ১৯৪৯- ন্যাটো গঠিত হয়। চায়নায় কম্যুনিজম কায়েম হয়।
• ১৯৬২- ক্যাথোলিক চার্চের পক্ষ থেকে ২ হাজার বছর ধরে ইসা (আঃ) এর হত্যার জন্য ইহুদিদেরকে যে দোষারোপ করা হচ্ছিল সেটা থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করা হয়। ইসা (আঃ) এর চলে যাওয়ার পর থেকে অর্থাৎ প্রায় ২ হাজার বছর পরে চির বৈরি ধর্মের অনুসারীগণ বন্ধুত্ব স্থাপন করে।

এর পর থেকে প্রায় সকল দেশে পুতুল শাসন ব্যবস্থা বসিয়ে স্বাধীনতা দিয়ে দেয়া হয়। খিলাফতের পতনের পরেই সাইকেস পিকট চুক্তি মাফিক মধ্যপাচ্যকে বিভক্ত করে ইউরোপীয় শক্তিরা বর্ডার নির্মাণ করে আর পরে সকলের মধ্যে তাদের ভিন্ন ভিন্ন জাতিয়তাবাদের বীজ ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এই সময়ে অভিন্ন মুসলিম জাতিকে প্রায় ৫৮ টি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে বিভক্ত করে দেয়া হয়। এর মধ্যেই পুরো পৃথিবীর সকল মানুষকে কার্বনকোপি বানিয়ে দেয়া হল তথাকথিত বিশ্বায়নের নামে। রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থায় যুগ যুগ থেকে চলে আসা ধর্মীয় পদ্ধতিকে বাতিল করে নতুন যেমন জাতীয়তাবাদ, কম্যুনিজম, সোশ্যালিজম, রিপাবলিকানিজম, ন্যাজইজম, ফ্যাসিজম, পুজিবাদ ইত্যাদি রাষ্ট্র ও অর্থ ব্যবস্থার জন্য ধর্মীয় তথা ইসলামের বিকল্প হিসেবে দাড় করিয়ে দেয়া হয়। ১৯৪৫ সালের সময়ে আমেরিকা পুরোপুরি ভাবে ইংল্যান্ডকে রিপেলস করে পুরো বিশ্বের একছত্র নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা নিয়ে নিলো। অন্যদিকে ধীরে ধীরে প্রতিটি দেশের বর্ডার আর ভিসা ব্যবস্থা কায়েম হয়ে গেল। ইতিহাসে প্রথমবার কোন মুসলিম দেশে যেতে হলেও মুসলমানদেরকে ভিসা নিতে হবে এমন কি হজ্জ করতেও বা মক্কা মদিনায় যেতে হলে ভিসা প্রয়োজন।
প্রতিটি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর নামে ধ্বংস করে দেয়া হয় কিন্তু আমাদের চোখে এই সব মতবাদগুলোকে উত্তম সভ্য ও আধুনিক করে উপস্থাপন করা হল। সর্বশেষ রাষ্ট্রীয়, অর্থ ও সামরিক ব্যবস্থাগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার একছত্র অধিকার আমেরিকার কাছে চলে যায়। শুধু বাকি থাকে সামাজিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। তাই প্রতিটি ব্যক্তির চরিত্র ধ্বংস করে, সকলকে পশুতে পরিনত করা, এক আধ্যাত্মিকতা শূন্য যান্ত্রিক জগত নির্মাণ করা আর বিনোদন, অশ্লীলতা, বেহায়পনা, ভোগ আর বিলাসিতায় সকলকে মত্ত করে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে রাখা। আর তাই শুরু হল সামাজিক ও পারিবারিক কাঠামোকে পুরোপরি ধ্বংস করে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। যদিও এখানে আমি শুধু ফেমিনিস্ট আন্দোলন/ নারী অধিকার সম্পর্কিত ঘটনাগুলো এনেছি, কিন্তু আশা করি এই ঘটনা গুলো পুরো সামাজিক ও পারিবারিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ধাপ গুলো চিনাতে পারবে।
• ১৯৫৩- প্রথম প্লে-বয় ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়
• ১৯৬০- ফেমিনিস্ট রেভুলিউশন এই সময় থেকেই পূর্ণ ভাবে আন্দোলনে নেমে যায়। নারীকে সম্পূর্ণ সমান অধিকার দিতে হবে। আর এই সময় সেক্সুয়াল রেভলিউসন আরম্ভ হয়। বিকিনির পর মোনোকিনি, তানকিনি, মাইক্রকিনি, ট্রিকিনি, পাব্লিকিনি ইত্যাদি ধরনের কাপড় অনেক জনপ্রিয়তা লাভ করে।
• ১৯৬৩- এই সময়ে ফার্স্ট ওয়েভ ফেমিনিজম মুভমেন্ট হয়।
• ১৯৬৪- Hippies নামে একটা কাউন্টারকালচার মুভমেন্ট শুরু করে আমেরিকার কিছু উচ্ছৃঙ্খল যবুক যুবতীরা। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সকল প্রকার সংস্কৃতির গোঁড়ামি দূর করে আরো বেশি মুক্ত ও স্বাধীন হতে হবে। মুক্ত সমাজ কায়েম যেখানে ফ্রি ভাবে লাভ করা যাবে যেখানে ভালবাসার ক্ষেত্রে যৌনতার ও সৌন্দর্যকে প্রাধান্য দেয়া হবে। এরা মিউজিক, ড্রাগ, ও অনৈতিক যৌনাচারে জড়িয়ে পরে।
• ১৯৬৭- ৬ দিনের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে মুসলিমের পরাজয় বরন। ফলে প্রায় ২৫০০ বছর পর ইহুদিরা বায়তুল মাকদিস/মাসজিদে আকশা পুনঃ দখল করে। আমেরিকার লালন পালনে শিশু ইসরাইল এইসময়ে বড় অহংকারী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
• ১৯৬৯- প্রথম ব্লু মুভি রিলিজ হয়। আমেরিকার থিয়েটারে ফার্স্ট এরোটিক এডাল্ট ফিল্মের প্রদর্শন।
• ১৯৭১- পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বার গোল্ডকে আস্তাকুরে নিক্ষেপ করে শুধু জুয়েলারি সামগ্রী বানিয়ে দিয়ে বোগাস পেপার মানি ডলারকে পেট্র ডলার হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
• ১৯৭২- প্রথম আন-সেন্সর পর্ণ মুভি রিলিজ হয়
• ১৯৬০-৮০- এই সময়ে প্রচলিত যৌন সম্পর্কের বাহিরে সমকামী, বিষমকামী, লেসবিয়ানিজম গুলো অনেক প্রচারনা পায়। অন্যদিক কন্ত্রাসেপশন পিল, লোকালয়ে নগ্নতা, পর্ণ, প্রাইমারি সেক্স, আর এবরসন, মাষ্টারবেশন, হার্ডকোর পর্ণগ্রাফী ইত্যাদির প্রয়োগ প্রচার ও প্রসার অনেক বেড়ে যায়। প্রথমে পিল শুধু বিবাহিতদের জন্য বৈধ ছিল পরে ১৯৭২ সালে সকলের জন্য বৈধ করে দেয়া হয়। এই দশকেই Lesbian, gay, bisexual, transgender, and queer (LGBTQ) social movements প্রসারতা পায়। ব্যবসায়ে প্রথম বার যৌন স্বাধীনতার ছড়াছড়ি শুরু হয়ে যায় বিজ্ঞাপন মুভি সিরিয়াল সর্বক্ষেত্রে এরোটীক ফেন্টেসি ব্যবহার শুরু হয়। ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণ শেষে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুরো সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আর তারপর ইতিহাস আমরা সবাই নিজের চোখেই দেখছি।
সর্বশেষ শতাব্দীর শুরু হয়েছিল যেভাবে দুটি নির্দিষ্ট ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ভাবে ধ্বংসের মাধ্যমে, শতাব্দীর শেষ হল সেই উভয় ধর্মের উত্থানের মধ্য দিয়ে। আর এই উভয় ধর্ম অর্থাৎ আফগান ও নাস্তিক সোভায়েতের দ্বন্দ্বে সোভায়েত পুরো ভেঙ্গে আবার তাদের ধর্ম অর্থোডক্স খৃষ্টানীটি ফিরে পেয়েছে আর অন্যদিকে যেটা ধ্বংস হয়েছিল ১৯২৪ এ সেটা আবার পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে সঠিক পথ মুসলমানরা ধরতে পেরেছে।
আমাদেরকে এই সকল ইভেন্টসগুলো কানেক্ট করে রহস্যময় পরিবর্তনগুলো বুঝতে হবে। এর পিছনে কারা জড়িত এদের পরিকল্পনাই বাকি তা উদ্ঘাটন করতে হবে। সকলকে আমন্ত্রণ জানাবো জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এইগুলো পর্যবেক্ষণ করুন আর নিজের জিজ্ঞাসার জবাব বের করুন। চিন্তা করতে হবে এইসব ঘটনাগুলো কি এক্সেডিন্টলি বা কাকতালিয়ে ভাবে হয়েছে না কোন পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক বাস্তবায়ন হচ্ছে। অনেক কিছু এমন ঘটেছে যা ইতিহাসে কখনো ঘটে নি এইসব কি কাকতালীয়? ২০০০ বছর পর ইসরাইল নামক দেশ প্রতিষ্ঠা কি কাকতালীয়? খিলাফতের পতন করে ৫৭ টি সেকুলার মুসলিম স্টেট কি কাকতালীয়? ফেমেনিস্ট রেভুলেসন কি কাকতালীয়? পুরো সমাজকে ভোগ লালসা ও বিনোদনের নামে বাস্তবতা থেকে দূরে রাখা কি কাকতালীয়?
(প্রয়োজনে কয়েকবার পড়ুন যাতে একটার সাথে আরেকটার সম্পর্ক বুঝতে পারেন)
“আল্লাহুম্মা আরিনাল আশ’ইয়া'আ কামা হিয়া” (হে আল্লাহ আমাদের প্রত্যেক জিনিসের আসল রূপ দেখাও যাতে বাহিরটা দেখে প্রতারিত না হই)। আমিন।
লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed
ট্যাগ
|
এস্কেটলজি, ইসলামের ইতিহাস, আখেরী জামানা, জায়নিস্ট, জেরুজালেম, দাজ্জাল, খিলাফত
|