Monday, January 1, 2018

Blog Administrator

হাগিয়া সোফিয়া এবং মসজিদুল আকসা


হাগিয়া সোফিয়া
আজকের আলোচনাটি তাদের উদ্দেশ্যে প্রণোদিত যারা এখনো জেদ ধরে আছেন যে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের কেন্দ্রবিন্দু, তাদের কিবলা কনস্টান্টিনোপলের হাগিয়া সোফিয়া যা ছিল ১০০০ বছর ধরে অর্থোডক্স খ্রিস্টান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাথিড্রাল, আমাদের মুসলিমদের অধিকার রয়েছে একে দখল করে একটি মসজিদে রুপান্তর করার। আমার আজকের সকালের আলোচনাটি সেই মুসলিমদের উদ্দেশ্যে যারা এখনো এই মতবাদকে আঁকড়ে ধরে আছেন। তাদের অনেকেই রয়েছেন তুরস্কে, বলকান অঞ্চলে ও পৃথিবীর অন্যান্য প্রান্তে। আমি জিজ্ঞাসা করি - কোন আইনের ভিত্তিতে, কোন ঐশ্বরিক বিধানের ভিত্তিতে আপনারা এই উপসংহারে পৌঁছালেন? তারা সকলে সমস্বরে উত্তর দেয়, “এটা ইসলামে যুদ্ধবিগ্রহের আইন”। এখানে আইন বলতে উনাদের হিসাবে, আমার হিসাবে নয়। তাদের মতে ইসলামের যুদ্ধবিগ্রহের আইন অনুযায়ী যদি যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যাকে আপনারা (তাদেরকে সম্বোধন করে) হক্ব যুদ্ধ বলে মনে করেন এবং আপনারা যখন শত্রুকে পরাজিত করেন, যাকে আপনারা নিজেদের শত্রু বলে মনে করেন তখন শত্রুপক্ষের সাম্রাজ্য দখল করার পর আপনাদের অধিকার রয়েছে শত্রুপক্ষের গির্জা, উপাসনালয়, সিনাগগ যাই হোক না কেন, একে দখল করা এবং মসজিদে রূপান্তর করার – এটাই হল ইসলামের আইন। যদি আপনাদের মতে এটাই সত্য হয়ে থাকে, আমার মতে এটা মিথ্যা, এটা কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক কিন্তু সেটা একটা ভিন্ন বিষয়। কোরআন কি বলে সেটা আমরা এখন আলোচনা করবো না, আমরা আলোচনা করবো আপনারা কি বলেন সেটা নিয়ে, যেটা আপনারা বিশ্বাস করেন - যে আপনাদের ইসলামী আইন আপনাদেরকে সম্মতি দিচ্ছে হাগিয়া সোফিয়াকে দখল করার যা অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাথিড্রাল এবং একে মসজিদে রূপান্তর করার। ভালো। আমি আপনাদের বলতে চাই, যে আপনাদের জন্য অপেক্ষা করছে একটি বিপর্যয় আর আমি আপনাদেরকে এই বিপর্যয়ে সাহায্য করতে পারব না। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল জেরুজালেম ও পবিত্রভূমির বাকি অংশ দখল করে। ইতঃপূর্বে জেরুজালেমের উপর ইসরাইলের কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না। পবিত্রভূমির একটি অংশবিশেষের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছিল কিন্তু ১৯৬৭ সালে তারা সব দখল করে নেয়, পার্থক্য এটাই যে জেরুজালেমের উপর ইসরাইলের আইনগত বৈধতা বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই আইনগত স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। নিরাপত্তা পরিষদ অনুযায়ী জেরুজালেম ইসরাইলের অধিকারভুক্ত নয়। সুতরাং ইসরাইল জেরুজালেমকে নিজের রাজধানী হিসাবে দাবি করতে পারেনি এবং এতে সফল হতে পারেনি। কিন্তু বহু বছর আগে আমেরিকান কংগ্রেস একটি অনুবন্ধ প্রকাশ করে যাতে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। প্রতিটি আমেরিকান প্রেসিডেন্ট এটিকে শুধু স্থগিত করে চলেছিলেন, কিন্তু একে প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করা হয়নি; যতক্ষণ না এলেন একজন স্কুল পড়ুয়া বালক যার নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। যিনি বস্তুতই জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দিয়ে দিলেন। আমার ধারণা, গুয়াতেমালা বলছে আমরাও একই কাজ করবো। আমার বিশ্বাস এটা অপরিহার্য যে মুদ্রাব্যবস্থার উপর তাদের যে নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাকে ব্যবহার করে তারা বহু দেশকে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করবে, এমনকি কোন কোন মুসলিম দেশকেও। যাতে তারা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রসারিত করে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু ইসরাইল যতই তার লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যাবে যা সে চায় অর্থাৎ, ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমের স্বীকৃতি, একপর্যায়ে ইসরাইল বিশ্বকে বলবে যে আমাদের এখন রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমের ব্যাপারে আইনগত স্বীকৃতি রয়েছে। আইনগত বৈধতা অনুযায়ী আমরা এখন জেরুজালেমে যা ইচ্ছা তাই করতে পারি। এটা আমাদের এলাকা, আমরা একে জয় করেছি। সেই সময় আপনাদের ইসলামিক আইন অনুযায়ী ইসরাইল বলবে, আমাদের অধিকার রয়েছে আপনাদের মসজিদুল আকসা দখল করার এবং একে আমাদের উপাসনালয়ে রূপান্তর করার। যারা একগুঁয়েভাবে জেদ ধরে আছেন যে আমাদের করার অধিকার রয়েছে যা আমরা করেছি হাগিয়া সোফিয়া ক্যাথিড্রালের ব্যাপারে, আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করছি, আগামীকাল ইসরাইলের কাছে জেরুজালেমের ব্যাপারে আপনি কি উত্তর দেবেন? সেটাই আপনাদের কাছে আমার প্রশ্ন। আপনার এই মেকী আইন অনুযায়ী ইসরাইলের অধিকার রয়েছে মসজিদুল আকসাকে একটি ইহুদি উপাসনালয়ে রূপান্তর করা এবং ইসরাইল যে অন্যায় করছে সেটা বলার কোন উপায়ই নেই আপনার। হ্যাঁ, সেটাই আপনার ভয়াবহ বিপর্যয়। আপনি বোকার মত নিজেকে কোণায় বন্দি করে ফেলেছেন যার কারণ হল আপনার একগুঁয়েমি। আপনার বিচারবুদ্ধি ও কাণ্ডজ্ঞান থাকা সত্ত্বেও, কোরআন ও সুন্নাহ থাকা সত্ত্বেও আপনি এই ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে হ্যাঁ, আমাদের অধিকার রয়েছে হাগিয়া সোফিয়া দখল করে একে মসজিদে রূপান্তর করার। বিচারদিবসে আপনাকে আল্লাহর কাছে এইজন্য জবাবদিহি করতে হবে। আপনাদের প্রত্যেকেই আমি সাবধান করছি, যারা মুখে ও অন্তরে এই কথা ঘোষণা করেন ও করছেন যে হাগিয়া সোফিয়ার ব্যাপারে এমনটা করার আমাদের অধিকার রয়েছে। আপনাদের বেশিরভাগই রয়েছেন তুরস্কে। এই ক্ষুদ্র দোলন-কেদারার আলোচনা আপনাদের উদ্দেশ্যেই। বাকি মুসলিম বিশ্বের উদ্দেশ্যে নয় যারা এখন জেগে উঠছে। সারা পৃথিবীজুড়ে আমরা জেগে উঠেছি এবং অনুধাবন করতে পারছি যে অটোম্যানরা হাগিয়া সোফিয়াকে মসজিদ বানানোর যে কাজটি করেছে এটি ছিল কলঙ্কজনক ও লজ্জাজনক একটি কাজ এবং একটি গুনাহের কাজ। আমরা অর্থোডক্স খ্রিস্টানদেরকে বলছি, যে যখন আমরা কনস্টান্টিনোপল জয় করবো যা নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষৎবাণী করেছেন, তখন আমরা হাগিয়া সোফিয়া তাদের কাছে ফিরিয়ে দেব। আর আমরা তাদের কাছে (এ ভুলের জন্য) ক্ষমা চাইবো। আমরা রয়েছি সীমান্তের এপারে, সেই ইসলামের, আপনারা নন। অতএব আজকের এই দোলন-কেদারার আলোচনা আপনাদের সতর্ক করার উদ্দেশ্যেই, যে বিচারদিবসের দিন আপনাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। আপনাদের উচিৎ দেরি হওয়ার আগেই তওবা করা। আপনাদের উচিৎ ৬০০ বছরের মগজধোলাই (ব্রেইনওয়াশ) ঝেড়ে ফেলা, তওবা করা সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই; আপনাদের ভাই ইমরান হুসেইন আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছে। আমি আমার অন্তরে বিদ্বেষ ও শত্রুতা নিয়ে কথা বলছি না, আমি আমার অন্তরে অশ্রু নিয়ে আপনাদের উদ্দেশ্যে কথা বলছি। কারণ আপনারা আমার ভাই ও বোন। তওবা করুন। আপনারা যা করেছেন তা ইসলামী আইন দ্বারা অনুমোদিত বলে যে যুক্তি আপনারা দেখান তা এক্ষণই আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে যখন ইসরাইল বলবে, তাদের অধিকার রয়েছে করার যা আপনারা করেছেন। অর্থাৎ মসজিদুল আকসাকে দখল করা এবং একে একটি ইহুদি উপাসনালয়ে রূপান্তর করা। তাই আমি আপনাদের অনুরোধ করছি, অনুগ্রহ করে চিন্তাভাবনা করুন। অনুগ্রহ করে কোরআনে যান, কোরআনের সূরা হজ্বে যান যেখানে আল্লাহ আপনাদের হুকুম দিয়েছেন সমস্ত উপাসনালয়, সমস্ত গির্জা, সমস্ত সিনাগগ, সমস্ত মসজিদকে রক্ষা করতে। সূরা হজ্বে আল্লাহ আপনাকে সংগ্রাম করতে বলেছেন একে রক্ষা করতে। আর আপনারা একটি ক্যাথিড্রালকে মসজিদ বানাচ্ছেন যা কোরআনের সাথে সরাসরিভাবে ও প্রচণ্ডভাবে সাংঘর্ষিক। এখনই আপনাদের জন্য সময় হয়েছে জেগে উঠার, তওবা করার এবং সীমান্তের এপারে আমাদের দলে যোগ দেওয়ার। আমরা, যারা মনে করি এই ঘটনা কলঙ্কজনক, লজ্জাজনক ও গুনাহের কাজ ছিল এবং হাগিয়া সোফিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিৎ। আর যখন আমরা তাদের কাছে ক্ষমা চাইব তখন আপনারা দেখতে পাবেন যা আল্লাহ কোরআনে বলেছেন। “আপনি সবার চাইতে মুসলমানদের সাথে বন্ধুত্বে অধিক নিকটবর্তী তাদেরকে পাবেন, যারা নিজেদেরকে খ্রিস্টান বলে” (৫:৮২)। আপনারা অনেক, অনেক, অনেকবার আমাকে এই আয়াতটি আপনাদের উদ্দেশ্যে পাঠ করতে শুনেছেন। আপনারা চাক্ষুস দেখতে পাবেন, এই অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা ভালোবাসায় আমাদের সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে। যখন এটি সংঘটিত হবে, যখন অর্থোডক্স খ্রিস্টানরা বুঝতে পারবে যে কোরআন এক আল্লাহর বাণী তখন আপনারা লাফ দিয়ে উঠবেন আর বলবেন, “এক্ষুনি শাহাদাৎ গ্রহন করো”। শুধু এতটুকু বিবেকবুদ্ধিই কি আপনাদের রয়েছে? “আলহামদুলিল্লাহ, কোরআন আর মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে আপনার ধারণা আরো ইতিবাচক হয়েছে” – তাদেরকে এই কথা বলার পরিবর্তে, তাদেরকে ধন্যবাদ দেওয়ার পরিবর্তে আপনারা গাধার মত লাফিয়ে উঠেন আর বলতে থাকেন, “শাহাদাৎ গ্রহন করো, শাহাদাৎ গ্রহন করো, শাহাদাৎ গ্রহন করো”। আপনাদের কি বিবেক নেই? আপনাদের কি বিচক্ষণতা নেই? আমি যদি আপনাদের এই পদ্ধতিই অনুসরণ করতাম তাহলে আমাকে কি বেলগ্রেডে অর্থোডক্স খ্রিস্টানদের মাঝে স্বাগত জানানো হত? কিছুটা বিচক্ষণতা অবলম্বন করুন। আর এসব অর্থহীন কথা ছাড়ুন। আমাদের দলে আসুন, আমরা বিচক্ষণতার সাথে কাজ করছি যা আপনারা করছেন না। আমরা উন্নতি করছি, আপনারা করতে পারছেন না। আপনারা এখন ন্যাটোর সাথে জড়িয়ে আছেন। আর যখন ন্যাটো রাশিয়ার সাথে যুদ্ধে জড়াবে তখন আপনারা সবাই গিয়ে ন্যাটোর সাথে যোগ দেবেন রাশিয়ার সাথে যুদ্ধ করার জন্য, আর এটাই আপনারা করবেন, এবং জাহান্নামে যাবেন? (একাজ করলে) আপনাদের পরিণতি হবে জাহান্নাম। তাই আমি বার্মিংহাম থেকে আপনাদের উদ্দেশ্যে এই ক্ষুদ্র ভাষণটি দিলাম, দোলন-কেদারার আলাপ আলোচনা, হাগিয়া সোফিয়া বিষয়ে আপনার মত নিয়ে পুনরায় চিন্তাভাবনা করার জন্য অনুরোধ করতে। কারণ আগামীকাল একটি মুহূর্ত আসবে যখন ইসরাইল বলবে এটা তোমাদের আইন আর আমাদের অধিকার রয়েছে করার যা আমরা করতে চাই, মসজিদুল আকসা দখল করা এবং একে একটি উপাসনালয়ে পরিণত করা। সেদিন আপনাদের আর কিছুই বলার থাকবে না। আমরা দোয়া করি যেন আল্লাহ আপনাদের হেদায়াত করেন, সত্যের পথে পরিচালিত করেন এবং ভুলের উপর বজায় থাকা থেকে রক্ষা করেন।

মূল – শায়েখ ইমরান নযর হোসেন
Hagia sophia & Masjid Al Aqsa লেকচারের অনুবাদ।

ট্যাগ
হাগিয়া সোফিয়া, আয়া সোফিয়া, মসজিদুল আকসা, অর্থোডক্স খ্রিস্টান, অটোম্যান, আখেরী জামানা, জেরুজালেম, ইসরাইল, ইমরান নযর হোসেন