![]() |
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা দেওয়ার উদ্দেশ্য ও ফলাফল |
মধ্যপ্রাচ্যের খেলা এবার জমে উঠেছে। জায়নিস্টদের প্ল্যান ছিল আইসিস ও সমমনা জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যকে পুরোপুরি অস্থিতিশীল করে ফেলা ও বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে তাদের এই প্ল্যান একেবারে মাঠে মারা গেছে। ফলে এখন আর প্রক্সি যুদ্ধ হবে না। পর্দার আড়ালের মূল খেলোয়াড় আমেরিকা, রাশিয়া, ইসরাইল, তুরস্ক, ইরান ও সৌদি আরবের এখন মুখোমুখি হওয়ার সময়।
.
ইরানের উপর ইসরাইলি হামলাই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা মালহামার সূচনা করার ট্রিগার হতে পারে। ইরানের সাথে যুদ্ধের জন্য মুখীয়ে আছে ইসরাইল। সৌদি আরবের মাধ্যমে তারা চেষ্টা তো করছেই একই সাথে সিরিয়ায় অবস্থানরত ইরানের ইনফ্রাস্ট্রাকচারের উপর হামলার মাধ্যমেও সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখা হচ্ছে। সিরিয়ায় সাম্প্রতিক ইসরাইলি হামলায় নাকি ১২ জন ইরানী মারা গেছে – এমনটাই ফলাও করে প্রচার করছে ইহুদি মিডিয়া। ইরানকে তারা যুদ্ধের জন্য উসকানি দিচ্ছে এটা স্পষ্ট। ইসরাইল এখন পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসতে চায় ও বিশ্বশাসনকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হতে চায়। প্রক্সি যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বরাজনীতিকে যথেষ্ট কব্জা করে ফেলেছে। জায়নিস্টদের তথা ইসরাইলের এখন সেই বড় যুদ্ধটার প্রয়োজন যার মাধ্যমে ইসরাইল দ্রুত তার সীমানাকে বর্ধিত করে ফেলবে এবং পারমাণবিক যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ব পরাশক্তিগুলোকে ধ্বংস করে দেবে, যা তাদের মেসায়াহ দাজ্জালের আসার পথ সুগম করে দেবে। এই চরম স্ট্র্যাটেজিক মুহূর্তে ইসরাইলের প্রয়োজন আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন। ফলে জেরুলজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে ঘোষণা দেওয়া এবং মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে সরিয়ে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার জন্য জায়নিস্টরা হয়ত ওয়াশিংটনের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
.
.
পশ্চিমাদের নিজস্ব নীতি অনুযায়ীই এটা অবৈধ। আমেরিকার একার অধিকার নেই জেরুজালেমকে এভাবে ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার। আন্তর্জাতিক কমিউনিটি এ ব্যাপারে কোন সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহন করেনি। সেক্ষেত্রে সকলের ঘাড়ের উপর ডিঙ্গিয়ে গিয়ে একটা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
.
.
মালহামা বা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ যে অতি নিকটে, এ ঘটনা তারই আরেকটা সিগন্যাল। মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “বাইতুল মাকদিসে বসতি স্থাপন ইয়াসরিবের (মদিনা) বিপর্যয়ের কারণ হবে এবং ইয়াসরিবের বিপর্যয় সংঘাতের কারণ হবে। যুদ্ধের ফলে কুসতুনতীনিয়া (কনস্টান্টিনোপল) বিজিত হবে এবং কুসতুনতীনিয়া বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের আলামত”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৯৪]
.
.
হাদিসে বলা হচ্ছে “উমরানু বাইতিল মাক্বদিস” – অর্থাৎ বাইতুল মুক্বাদ্দাস বা জেরুজালেম যখন উমরান বা সম্বৃদ্ধ থাকবে, প্রাচুর্যময় থাকবে, ক্ষমতা ও শান শওকতে পূর্ণ থাকবে। আজকে জেরুজালেম সেই অবস্থায়ই উপনীত হয়েছে। জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি পেলে তা আরো চরম বাস্তবরূপে দেখা দেবে। জেরুজালেমের পাওয়ার আরো বাড়বে। একসময় জেরুজালেমই পৃথিবীর সেন্টারে পরিণত হবে। তখন কি হবে? হাদিসের পরের অংশ বলছে “খারাবু ইয়াসরিব”। ইয়াসরিব হল মদিনার প্রাক্তন নাম। জেরুজালেমের যখন এই অবস্থা তখন মদিনার অবস্থা হবে একেবারে মন্দা। আজকে বিশ্বরাজনীতি তো দূরে থাক, মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক কোন ক্ষেত্রেই মদিনার কোন ভূমিকা নেই। যখন মদিনার এই অবস্থা তখন হবে “খুরুজুল মালহামা”, মালহামা বা মহাযুদ্ধের সূচনা। তার পরের ঘটনা হল “ফাতহুল কুসতুনতিনিয়া” বা কনস্টান্টিনোপল বিজয় ও “খুরুজুদ দাজ্জাল” অর্থাৎ দাজ্জালের আগমন। আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “মহাযুদ্ধ এবং (কন্সটান্টিনোপল) শহর বিজয়ের মধ্যে ছয় বছরের ব্যবধান হবে। আর সপ্তম বছরে মাসীহ দাজ্জাল আবির্ভূত হবে”। [সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪২৯৬]