১। আল্লাহপাক বনী ইসরাইলকে পবিত্র ভূমিতে দু'বার শাস্তি দিয়েছিলেন (প্রথমবার তৌরাতের লেখা বদলে ফেলা ও অ-ইহুদিদের সাথে সুদের ব্যবসাকে হালাল করার জন্যে এবং দ্বিতীয়বার নবী-রাসুলগণকে হত্যা করার জন্যে)। তিনি তৃতীয়বার শাস্তি দেওয়ার ভবিষ্যতবাণী করেন কারণ তারা পুনরায় পবিত্র ভূমিতে ফ্যাসাদ করবে (অর্থাৎ বর্তমান ইসরাইল রাস্ট্রের বর্বরতার কথা ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছে):
"আমি বনী ইসরাইলকে কিতাবে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, তোমরা দুইবার ঐ ভূমিতে ফ্যাসাদ (ধ্বংসাত্মক দুর্ণীতি ও ভয়ঙ্কর অত্যাচার) সৃষ্টি করবে এবং শক্তিমদত্ত হয়ে অহংকারী হয়ে উঠবে (এবং দুইবারই শাস্তিপ্রাপ্ত হবে)। অতঃপর যখন প্রতিশ্রুত সেই প্রথম সময়টি এলো [খ্রিস্টপূর্ব ৫৮৭ সনে], তখন আমি তোমাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করলাম আমার কঠোর যোদ্ধা বান্দাদেরকে [বখতে নাসরের নেতৃত্বে ব্যাবিলনীয় বাহিনী] অতঃপর তারা প্রতিটি জনপদের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ল। এ ওয়াদা পূর্ণ হওয়ারই ছিল। অতঃপর আমি তোমাদের জন্যে তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম। তোমরা যদি ভালো কর, তবে নিজেদেরই ভালো করবে আর যদি মন্দ কর, তা-ও নিজেদের জন্যেই। এরপর যখন (অবিচার অনাচারের) দ্বিতীয় সে সময়টি এলো [৭০ খ্রিস্টাব্দে], তখন অন্য বান্দাদেরকে প্রেরণ করলাম [সেনাপতি টাইটাসের নেতৃত্বে রোমান বাহিনী] , যাতে তোমাদের মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয় আর (সুলাইমান আঃ নির্মিত) মসজিদে ঢুকে পড়ে যেমন প্রথমবার (তাদের পূর্বসূরিরা) ঢুকেছিল, এবং যেখানেই ঢুকে, সেখানেই ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। কিন্তু যদি পুনরায় তদ্রুপ কর (অর্থাৎ পবিত্রভূমিতে এসে ফ্যাসাদ কর), তাহলে আমিও পুনরায় তাই করব (অর্থাৎ তোমাদের পূর্বের মত শাস্তি দেব)।" (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:৪-৮)
.
২। দ্বিতীয়বার শাস্তি পাওয়ার পর অর্থাৎ ৭০ খ্রিস্টাব্দে বনী ইসরাইলের উপর জেরুজালেম শহর হারাম হয়ে যায় এবং তারা সারা বিশ্বে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
"আর আমি তাদেরকে (অর্থাৎ ইহুদিদেরকে) বিভক্ত করে দিয়েছি দেশময় বিভিন্ন শ্রেণীতে..." (সুরা আ'রাফ ৭:১৬৮)
.
৩। এত অন্যায় করার পরও আল্লাহপাক তাদেরকে শেষবারের মত সুযোগ দেন এবং আখেরী নবী রাসুলুল্লাহ (সা) কে তাওবার দরজারূপে প্রেরণ করেনঃ
"যারা রাসুলকে অনুসরণ করে, যিনি উম্মী নবী, যার কথা তাদের নিজেদের কিতাবসমূহে অর্থাৎ তাওরাত ও ইঞ্জিলে বর্ণিত আছে, যিনি তাদের সৎকাজে আদেশ ও মন্দকাজে নিষেধ করেন, যিনি তাদের জন্য যা ভালো (এবং খাঁটি) তা হালাল করেন এবং যা মন্দ (এবং ভেজাল) তা হারাম করেন, যিনি তাদের উপর ভারী বোঝা এবং তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া জোয়াল থেকে তাদের মুক্তি দেন। আর তাই, যারা তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, তাঁকে সম্মান করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর কাছে যে আলো (অর্থাৎ কুর'আন) প্রেরণ করা হয়েছে, তা অনুসরণ করে, তারাই মুক্তিলাভ করবে।" (সুরা আ'রাফ ৭:১৫৭)
.
৪। কিন্তু ইহুদিরা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে। ফলে আল্লাহপাক তাদের উপর চূড়ান্ত শাস্তি নির্ধারিত করেন। কিবলা পরিবর্তনের মাধ্যমে আল্লাহপাক তাঁর এই রায়ে স্বাক্ষর করে দেন।
"এখন নির্বোধেরা বলবে, কীসে মুসলমানদেরকে ফিরিয়ে দিল তাদের ঐ কিবলা থেকে, যার উপর তারা ছিল? আপনি বলুন, পূর্ব ও পশ্চিম আল্লাহরই; তিনি যাকে ইচ্ছা সরল পথে চালান।" (সুরা বাক্বারা ২:১৪২)
.
৫। আল্লাহপাক বনী ইসরাইলের উপর চূড়ান্ত শাস্তি হিসেবে দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মাজুজকে মুক্ত করে দেন।
" আর সে সময়ের কথা স্মরণ কর যখন তোমার পালনকর্তা সংবাদ দিয়েছেন যে, অবশ্যই তিনি কেয়ামতের দিন পর্যন্ত তাদের (অর্থাৎ ইহুদিদের) উপর এমন লোক পাঠাতে থাকবেন যারা তাদেরকে নিকৃষ্ট শাস্তি দিতে থাকবে। নিঃসন্দেহে তোমার পালনকর্তা শীঘ্র শাস্তিদানকারী এবং তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।" (সুরা আ'রাফ ৭:১৬৭)।
.
৬। দাজ্জাল ও ইয়াজুজ মাজুজ বনী ইসরাইলকে জেরুজালেমে ফিরিয়ে নিয়ে আসে।
"কিন্তু একটা শহর (অর্থাৎ জেরুজালেম আল কুদস) যা আমরা ধ্বংস করে দিয়েছিলাম, তার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে ঐ শহরের বাসিন্দারা (অর্থাৎ বনী ইসরাইল) সেখানে ফিরে আসবে না, যতক্ষণ না ইয়াজুজ মাজুজ (ইউরোপীয় খাজার ইহুদি ও ইউরোপীয় খাজার খ্রিস্টান) মুক্তি লাভ করবে এবং প্রতিটি উঁচু স্থান থেকে তারা দ্রুত নেমে আসবে অর্থাৎ সবদিকে ছড়িয়ে পড়বে (সমগ্র বিশ্বে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ)।" (সুরা আম্বিয়া ২১:৯৫-৯৬)।
.
৭। তখন থেকে সমগ্র বিশ্ব থেকে ইহুদিরা পবিত্র ভূমিতে এসে মিশ্র জনগোষ্ঠী হিসেবে জড়ো হচ্ছে।
" কিন্ত জেনে রাখ,যখন আখিরাতের ওয়াদা আসবে (অর্থাৎ কিয়ামত নিকটবর্তী হবে), আমি তোমাদেরকে (অর্থাৎ বনী ইসরাইলকে) মিশ্র জনগোষ্ঠী হিসেবে একত্রিত করব।" (সুরা বনী ইসরাইল ১৭:১০৪)
.
*** জায়নিস্টপন্থি ইহুদি ও জায়নিস্টপন্থি খ্রিস্টানরা হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নির্বোধ জাতি। কারণ তাদের উপর শাস্তি আপতিত হলে তারা আনন্দিত হয়। এভাবেই আল্লাহ তাদেরকে তাদের কুফরের মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেন। আল্লাহপাক তাদের উপর শাস্তিস্বরূপ দাজ্জালকে প্রেরণ করেছেন যে তার ইয়াজুজ মাজুজ বাহিনী দ্বারা বাইবেলের ভবিষ্যতবাণীগুলো হুবহু পূরণ করছে তাদেরকে ধোঁকায় নিমজ্জিত রাখার জন্য। আর তারা ভাবছে এটা তাদের উপর আশিরবাদ। এভাবে ভবিষ্যতবাণী পূরণ করতে করতে দাজ্জাল তাদেরকে বোঝাবে যে, সে-ই প্রকৃত মসীহ। তারা তখন তা-ই বিশ্বাস করবে। কিন্তু যখন সত্য মসীহ ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ) লুদের দরজার নিকট দাজ্জালকে হত্যা করবেন, সেদিন তারা বুঝতে পারবে যে, তারা কত বড় গোমরাহীতে নিমজ্জিত ছিল! সেদিন তারা প্রত্যেকে ঈমান আনবে কিন্তু ফেরাউনের ঈমান আনা যেমন তার কোন কাজে লাগেনি, তাদেরও কাজে লাগবে না।
"এবং আহলে কিতাবের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তাঁর উপর (অর্থাৎ নবী ঈসা আঃ এর উপর) তাঁর মৃত্যুর পূর্বে (অর্থাৎ নবী ঈসা আঃ এর মৃত্যুর পূর্বে) বিশ্বাস স্থাপন করতে বাধ্য হবে না এবং শেষ বিচারের দিনে তিনি তাদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী হবেন।" (সুরা নিসা ৪:১৫৯)
লিখেছেনঃ Md Arefin Showrav
ট্যাগ
|
ইসরাইল, বনী ইসরাইল, পবিত্রভূমি, জায়নিস্ট, মসীহ, দাজ্জাল, আহলে কিতাব, ইয়াজুজ মাজুজ, ইহুদি, জেরুজালেম, আখেরী জামানা
|
2 comments
Write commentsমহিলা সাহাবীদের নামের তালিকা দেখুন। ইসলামের সৌভাগ্যবান ৭৯ জন মহিলা সাহাবীদের নাম
Replyhttps://islami-bangla.blogspot.com/2020/02/blog-post_139.html
আমি আপনাদের এই লেখাটুকু বই আকারে ছাপাতে চাই।
Reply