আমরা রোজগার করে যেই টাকা কামাই করি তাহলে সেগুলি কি করবো? আর এই টাকা গুলি হালাল করবো কিভাবে?
বাঁচার উপায় হল এই - যখন একজন মুসলমানের সামনে দুইটি খারাপ কাজ/হারাম কাজের মধ্যে যেকোনো একটিকে বেছে নেওয়ার অপশন আসে তখন যেটা কম হারাম বা কম ক্ষতিকর সেটাকে গ্রহন করতে হবে। একে বলা হয় "দারুরাহ"। কাগজের টাকা বোগাস। একে সমর্থন করা মানে জালিয়াতি, জোচ্চুরি ও জুলুমকে সমর্থন করা। ইসলামবিরোধী এজেন্ডাকে সমর্থন করা। ইহুদি খ্রিস্টানদের খোদাদ্রোহীতাকে সমর্থন করা। কাগজের মুদ্রায় যে রিবা বা সুদি লেনদেন রয়েছে তাতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়া। কাগজের মুদ্রায় কাল্পনিক ভ্যালু দেওয়া এবং সুন্নাহ মুদ্রাকে হারাম ঘোষণা করে একে হালাল বলে আইন করার মধ্যে যে শিরক রয়েছে সে শিরকে অংশগ্রহণ করা। এছাড়া কাগজের মুদ্রা বিদআত - নবী রাসূলগন ও তাদের সাহাবীরা স্বর্ণরুপার দিনার ও দিরহাম ব্যবহার করেছেন এবং ইসলামী রাষ্ট্রে এগুলোই ব্যবহৃত হয়েছে। কোরআনে মুদ্রা হিসাবে দিনার ও দিরহামকেই চিহ্নিত করা হয়েছে। কাগজের মুদ্রাকে হালাল বলা এবং একে সমর্থন দেওয়া মানে এই সমস্ত মুনকার এর মধ্যে ডুবে যাওয়া যার প্রত্যেকটা গুনাহই অত্যন্ত মারাত্মক। তাই বাঁচতে হলে যেটা করতে হবে তা হল নিজের একান্ত প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন খরচের জন্য যে অর্থ ব্যয় করতে হয় তা ব্যতীত অবশিষ্ট সমস্ত অর্থকে হালাল সম্পদে রূপান্তর করে ফেলা।
...
গোল্ডে রূপান্তর করতে পারলে খুবই ভালো। কারণ কাগজের মুদ্রাব্যবস্থায় শীঘ্রই ধ্বস নামবে। তখন দিনার ও দিরহামই হবে আসল কারেন্সি। যারা লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা ক্যাশ জমা রেখেছে তারা ধরা খেয়ে যাবে, তাদের সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু আপনি বেঁচে যাবেন। আর যদি আপনি টাকা দিয়ে জমি কিনে ফেলেন তাও ভালো। জমি এমন একটা রিয়েলস্টেট যার মূল্য সময়ের সাথে সাথে ক্ষয় হয় না, বরং জমির দাম বেড়ে গেলে লাভবান হবেন আপনিই। এছাড়া বিজনেসে ইনভেস্ট করে রাখতে পারেন - যেমন খামারের বিজনেস। কেননা রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, ""if you have land - hold on to your land; and if you have animals - hold on to your animals . . . ." (হাদিসের রেফারেন্সটা খুঁজে পাচ্ছি না, দুঃখিত। কেউ পেলে আমাকে জানিয়ে সাহায্য করবেন।) আর এই সিস্টেমকে বাইপাস করে ১০০% বেরিয়ে আসা হয়ত সম্ভব না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “মানুষের জন্য অবশ্যই এমন একটি সময় আসবে যখন প্রত্যেকেই সুদ গ্রহণ করবে। আর কেউ যদি সুদ গ্রহণ না করে তাহলে সুদের ধুলা হলেও তার কাছে পৌছবে” (আবু দাঊদ, ইবনে মাজাহ)। তাই দুই হারামের মধ্যে কম খারাপটা গ্রহন করুন। শুধুমাত্র নিজের একান্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনার জন্য যে অর্থ ব্যয় হয় তা ব্যতীত বাকি অর্থ স্বর্ণ-রুপা, জমি, গবাদিপশুতে রাখুন বা পারলে আপনার গোল্ড সিলভারকে দিনার ও দিরহামে মিন্ট করুন। আবু বকর ইবন আবি মরিয়ম হতে বর্ণিত যে তিনি আল্লাহর নবী (সঃ)-কে বলতে শুনেছেন, "মানবজাতির উপর এমন সময় অবশ্যই আসছে যখন দিনার ও দিরহাম ছাড়া ব্যবহার করার মত উপকারী আর কিছুই থাকবে না" (বর্তমান যুগে সারা পৃথিবীজুড়ে যে প্রতারণামূলক অর্থব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে, এই হাদিসে স্পষ্টভাবে তারই পতনের ভবিষৎবাণী রয়েছে) - মুসনাদে আহমাদ। যেহেতু আমাদের মার্কেটে দিনার দিরহাম ব্যবহার করা যায় না, শুধু কাগজের টাকা গ্রহন করা হয়, সেজন্য আমরা এই সিস্টেম থেকে শতভাগ বের হতে পারছি না।
...
পরিশেষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ। যদি পারেন তো হাত দিয়ে অন্যায়কে রুখতে হবে, যদি না পারে তাহলে মুখ দিয়ে এর বিরুদ্ধে বলতে হবে। যদি তা না পারেন তবে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করতে হবে। এটাই ঈমানের দূর্বলতম স্তর। অন্তরদিয়েও যদি ঘৃণা না করেন তাহলে আপনি একে গ্রহন করে নিলেন। যদি সক্ষম হন তো দূরবর্তী গ্রাম অঞ্চলে একটা মার্কেট প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করুন যেখানে লেনদেনের জন্য গোল্ড আর সিলভার ব্যবহার করা হবে। যে নবীজির (সঃ) একটা সুন্নতকে জীবিত করবে সে ১০০ জন শহীদের সমান সওয়াব লাভ করবে। যদি না পারেন তো ইসলামে মুদ্রাব্যবস্থার বিষয়টা স্টাডি করুন, লেকচার দিন, অনলাইনে ব্যাপক লেখালেখি করুন, জনসচেতনতার সৃষ্টি করুন। যদি তাও না পারেন তো অন্তর দিয়ে একে ঘৃণা করুন, হারামকে হারাম জানুন। তাহলে হয়তো হাশরের দিন আপনি আল্লাহকে বলতে পারবেন, "হে আল্লাহ, আমি হারামের মধ্যে ডুবন্ত ছিলাম কিন্তু কখনো এর কাছে নতি স্বীকার করিনি ও একে সমর্থন করিনি"।
"সুতরাং তুমি কাফেরদের আনুগত্য করো না এবং তুমি তার সাহায্যে (কুরআনের সাহায্যে) তাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড সংগ্রাম চালিয়ে যাও" - (সূরা ফুরকানঃ ৫২)।
আল্লাহ সর্বজ্ঞানী। তিনিই ভালো জানেন।
ট্যাগ
|
কাগজের মুদ্রা, কাগজের নোট, দিনার দিরহাম, ইসলামী অর্থনীতি, স্বর্ণমুদ্রা, শেখ ইমরান, রিবা, সুদ, জিহাদ
|