Monday, January 8, 2018

Blog Administrator

একটি নাইন ইলেভেন (৯/১১) ও কয়েকটি লাভের অঙ্ক



প্রথম অঙ্কঃ এরিয়েল শ্যারন ঠান্ডা মাথায় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জেরুজালেমের মসজিদ আল-আকসায় তার উস্কানীমূলক সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আরেকটি রক্তক্ষয়ী ইজরায়েলী নির্যাতন নিপীড়নের অধ্যায়ের সূত্রপাত করে এবং ঐ নিপীড়নের জবাবে আরেকটি বেপরোয়া আরব মুসলিম প্রতিরোধেরও সুচনা হয়। শ্যারনের ঐ সফরের এক বছর পরে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার উপ্রে আক্রমণ পর্যন্ত দুনিয়াবাসী প্রত্যক্ষ করে কিভাবে ইজরায়েল ঐ যুদ্ধকে তীব্রতর করার লক্ষ্যে ইন্ধন যুগিয়েছে, আবার প্রতারণার মাধ্যমে নিজেদেরকেই অবিচারের শিকার হিসেবে প্রচারণা চালিয়েছে। তবে গোটা পৃথিবী ইজরায়েলের নিপীড়নকে ঠিকই সনাক্ত করেছিলো, যার ফলে গণসংযোগের ক্ষেত্রে ইজরায়েলের জন্য বিপর্যয় নেমে আসে, যা আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে দক্ষিন আফ্রিকার ডার্বানে ২০০১ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত বর্ণবাদের উপর বিশ্ব সম্মেলনে সারা পৃথিবী ইজরায়েলের নিন্দায় একজোট হয়েছিলো।
.
আমেরিকার উপর ১১ সেপ্টেম্বরের আক্রমণ ইজরায়েলের ঐ গণসংযোগ বিপর্যয়কে তৎক্ষণাৎ এবং সম্পূর্নরুপে এমনভাবে বদলে দেয় যে হঠাৎ করেই আরব এবং মুসলিমগণ নিজেদেরকে গণসংযোগ বিপর্যয়ের মুখোমুখী দেখতে পায় যা কি না ইজরায়েলের বিপর্যয়ের চেয়ে বহুহুণ তীব্রতর ছিলো। দূরদর্শনের জন্ম সত্যিই সেদিন সার্থকতা লাভ করেছিল, যেদিন বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলো নির্লজ্জভাবে আমেরিকান টিভিকেন্দ্রের সাথে মিডিয়া ক্রুসেডে যোগ দিয়েছিলো, যার ফলে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে আসলে ইসলামের বিরুদ্ধেই শুরু হয়ে গেলো।
.
দ্বিতীয় অঙ্কঃ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা, যা জায়োনিস্ট-ইজরায়েলী সত্যের দাবীকে প্রমাণিত করবে।
নাইন ইলেভেনের false flag হামলা গনসংযোগ বিপর্যয়কে পাল্টে দিয়ে ইজরায়েলকে পূর্ববর্তী নাজুক অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়েছে, এবং তাকে যদৃচ্ছা উস্কানীমূলক ও উত্তরোত্তর তীব্রতরভাবে, আরব এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত সংঘাতের কর্মসূচী বাস্তবায়নের পথ পরিস্কার করে দিয়েছে। এতে তারা মার্কিন সরকার সমেত তামাম দুনিয়ার জাতিসংঘ, হিউম্যান রাইট, এ রাইট, সে রাইট কারো পক্ষ্য থেকেই কোনো প্রকার বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে না। এই সুফলের অঙ্ককে মোটেই ছোটো করে দেখা যায় না।
.
ইসলাম, কুরআন এবং নবী (সাঃ) এর বিরুদ্ধে চলে আসা এই যুদ্ধে ইজরায়েলের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল হচ্ছে একটা চমকপ্রদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা, যাতে মনে হবে যে তৌরাতের "সত্য" প্রমাণিত হলো। ঐরকম একটা প্রদর্শনী যে শুধু অনেক অজ্ঞ মুসলিমের মনোবলই ভেঙ্গে দিবে তাই নয়, বরং অনেক ইহুদিকে এমন নিশ্চয়তা দান করবে যে তারা এখনও আল্লাহর "নির্বাচিত জনগোষ্ঠী" রয়ে গ্যাছে। তারা নিশ্চিত হবে যে ইহুদি ধর্মের ঐ স্বর্ণযুগের প্রত্যাবর্তন সমাসন্ন যখন দাঊদ (আঃ) এর সিংহাসন থেকে মসীহ্ পুরো বিশ্বকে শাসন করবেন। (as like as সুলাইমান আঃ)
.
তৌরাতের এই দাবীর সত্যায়ন সম্ভব চকিত ও চমকপ্রদ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে, যার লক্ষ্য হবে পবিত্র ভূমি জেরুজালেমের (বর্তমানের অবৈধ ইজরায়েল) চারপাশের সমগ্র অঞ্চলকে দখল করা। ঠান্ডা মাথায় পরিচালিত শ্যারনের ঐ উস্কানীমূলক কর্মকান্ডের এটাই ছিলো মূল উদ্দেশ্য। এবং আজ পৃথিবীব্যাপী নানা false flag attack এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রস্তুতি নির্বিঘ্নে এগিয়ে চলছে।
নোটঃ তৌরাতে পবিত্র ভূমির সীমানা উল্লেখ আছে "মিসর নদী থেকে ফোরাত নদী পর্যন্ত। একদিকে সুয়েজ খালের উপ্রে নিয়ন্ত্রণ, অন্যদিকে সৌদি, সিরিয়, ইরাকী, কুয়েতী প্রভৃতি উপসাগরীয় তেলক্ষেত্রের উপ্রে নিয়ন্ত্রণ (Without iran). দূর্ভাগ্যক্রমে সিরিয়ার উপ্রে ইজরায়েলী নিয়ন্ত্রণের প্রধান অন্তরায় হয়ে গেছে বর্তমান আসাদ সরকার।
.
এটা এখন পরিস্কার যে, ১৯৯১ সালের উপসাগর যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো ইরাককে পঙ্গু করে দেওয়া, যার ফলে অন্তত দশ বছরের ভিত্রে ইরাককে গিলে ফেলা যায়। এ উদ্দেশ্য এখন স্পষ্টতই সফল হয়েছে। নাইন ইলেভেন ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে তড়িঘড়ি করে আরব অঞ্চলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামানো গ্যাছে, যাতে ইজরায়েলের সীমানা সম্প্রসারণের ঐ বৃহৎ যুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয়। এছাড়াও আমেরিকাকে ব্যবহার করে পাকিস্তান ও ইরানের পারমানবিক ক্ষেপনাস্ত্রগুলো অকেজো করাও ইজরায়েলের উদ্দেশ্য ছিলো। ইতোমধ্যে ইজরায়েল বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট "stuxnet" ভাইরাস দিয়ে ইরানের পারমানবিক চুল্লীতে আক্রমন চালিয়ে এর অগ্রগতি বছর দশেক পিছিয়ে দিতে সক্ষমও হয়েছে।
.
১১ সেপ্টেম্বরের আগেই পাকিস্তানে একটি সামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলো জায়োনিস্টরা এবং হামলার পরে এই নতজানু সামরিক সরকারকে বাধ্য করা হয়েছিলো ইসলামী আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে (তালেবান) যুদ্ধ করতে। যা ১১ সেপ্টেম্বর না ঘটলে সম্ভব হতো না।
.
তৃতীয় অঙ্কঃ ইজরায়েল যাতে আমেরিকার স্থলে বিশ্বের একমাত্র নিয়ন্তা রাষ্ট্র হতে পারে তার জন্য ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। আল্লাহ্ তায়ালা তৌরাতের মাধ্যমে ইহুদিদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এমন একজন নবী তিনি প্রেরণ করবেন, যিনি ইহুদিদের হয়ে পরাক্রমমালী সুলাইমান (আঃ) এর মতই বিশ্বকে শাসন করবেন। আল্লাহ্ এই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছিলেন ঈসা (আঃ) কে পাঠিয়ে কিন্তু ইহুদিরা তাকে প্রত্যাখ্যান ও হত্যা করার চেষ্টা করে। তারা এখনও তৌরাতের এই প্রতিশ্রুতিকে আকড়ে ধরে মসীহ্ এর অপেক্ষায় আছে। শেষ যুগে দাজ্জাল প্রতারণা করে নিজেকে মসীহ্ হিসেবে পরিচয় দিবে এবং ভন্ড মসীহ্ হিসেবে দাউদ (আঃ) এর আসন থেকে পুরো পৃথিবীর উপর শাসন করবে। দাজ্জাল যাতে ইহুদিরকে মসীহ্ হিসেবে তার পরিচিতি সম্বন্ধে আশ্বস্ত করতে পারে সেজন্য তাকে নিম্মলিখিত কার্যগুলো সমাধা করতে হবেঃ
১. অইহুদি শাসন (মুসলিম শাসন) থেকে পবিত্রভূমিকে (জেরুজালেম) মুক্ত করা,
২. ইহুদি ধর্মের নামে পবিত্রভূমির উপ্রে দাবী পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইহুদিদেরকে সেখানে ফিরিয়ে আনা
৩. ইজরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এবং ইহুদিদেরকে আশ্বস্ত করা যে সেটাই হচ্ছে দাউদ (আঃ) এবং সুলাইমান (আঃ) এর ইজরায়েল,
৪. ঐ ইজরায়েল রাষ্ট্রকে পৃথিবীর নিয়ন্তা রাষ্ট্রে পরিনত করা,
৫. জেরুজালেম থেকে পৃথিবীর উপ্রে শাসন করার জন্য স্ব-শরীরে আবির্ভূত হওয়া।
.
খেয়াল করে, উপরের তিনটি পয়েন্ট ইতোমধ্যেই অর্জিত হয়েছে, চতুর্থটি প্রায় অর্জিত হতে চলেছে এবং পঞ্চমটি বাস্তবায়িত হতে খুউব বেশী সময় নাও লাগতে পারে।
আমেরিকার স্থলে ইজরায়েলকে পৃথিবীর নিয়ন্তা রাষ্ট্র বানাতে হলে এর অর্থনীতি ও মার্কিন ডলারের পতন ঘটাতে হবে। নাইন ইলেভেনের False Flag Attack এ বুশকে মারতে পারলে সেরকম একটা ঘটনা ঘটা অসম্ভব ছিলো না। তবে ইহুদিরা ঠিকই আমেরিকান ডলারের টুটি চেপে ধরে বসে আছে। এখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাধ্যমে ডলারের পতন ঘটিয়ে ইজরায়েলকে বিশ্বের নিয়ন্তা রাষ্ট্রে পরিনত করা সময়ের ব্যাপার।

লিখেছেনঃ Mridul Islam

ট্যাগ
৯/১১, নাইন ইলেভেন, নয় এগারো, বুশ, ইসরাইল, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ইজরায়েল, ইহুদি, পবিত্রভূমি, জেরুজালেম, দাজ্জাল, ফলস ফ্ল্যাগ, জায়নিস্ট, আল আকসা