রুম কে ? আমেরিকা কেন্দ্রিক জোট নাকি রাশিয়ান কেন্দ্রিক জোট? এটা এখন সব চেয়ে বড় একট বিবাদের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে, একে কেন্দ্র করে শাইখ ইমরান হোসেন কে খুব মন্দ ভাষায় ব্যঙ্গ করা হয়েছে, ফেইসবুকে যারাও শেষ জামানা নিয়ে স্টাডি করেন তারা এই ইস্যুতে কখনো একমত হয়নি। যাইহোক এটা জানার জন্য অনেক বিষয় গুলো পর্যালোচনা করতে হবে। কুরাআন ও হাদিসে কি আছে, ঐতিহাসিক ঘটনা, খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাস, ক্রুসেড, রাশিয়ার ইতিহাস, বিশেষ করে সোভায়েত রাশিয়ার সাথে ইসলামের বৈরিতা, ইহুদি খ্রিস্টান ধর্মে মালহামার ধারনা, ও সর্বশেষ বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি। এই সকল বিষয় পর্যালোচনা করার পর আমরা চিহ্নিত করতে পারবো হাদিসের রুম, ও কুরআন কারিমায় কোন খ্রিস্টানরা আমাদের মিত্র হবে বলা ধারনা দেয়া হয়েছে তা বুঝা যাবে।
![]() |
প্রথম অনুচ্ছেদ |
বর্তমান খৃষ্ট ধর্মের মূল বিশ্বাস হলো ত্রিত্ববাদ। তিন মিলে অর্থাৎ পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার সমষ্টি হল ঈশ্বর। এখানে পিতা হল মূল, জ্ঞান বা কালাম গুন হল পুত্র এবং পিতা পুত্রের মাঝে যে ভালোবাসার গুন সেটা পবিত্র আত্না। তবে এই সব হল আসলে জগাখিচুড়ি কিছু বিশ্বাস যা অস্পষ্ট। তাই খৃষ্ট পণ্ডিতরা সবাই আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা করেন। আসলে এটা কখনো হতে পারেনা যে, ইসরাইলী ধারায় যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা একটা সঠিক ধর্ম তার মূল বিষয় তাওহীদ কে বাতিল করে দিয়ে নবীকেই আল্লাহর পুত্র বানিয়ে দিবে।
ইহুদিদের বিভিন্ন সময় বলা হয়েছিল যে তোমাদের মাসিহা আসছেন, ইয়াহহিয়া (আঃ) এর আগমন হলে তারা তাকে জিজ্ঞাস করেছিল তুমি কি মাসিহা? তিনি জবাবে বলেছিলেন না তবে যিনি আমার থেকে শক্তিশালী তিনি অচিরেই আগমন করবেন। এর পরে ইহুদিরা ইয়াহিয়া (আঃ) কে মসজিদে শহীদ করে দিল। এর কিছু সময়ে পরেই ঈসা (আঃ) নবুওয়াতের দাবী করলেন। উনার এত মজেজা দেখা সত্ত্বেও ইহুদিরা সোলাইমান (আঃ) এর মত রাজ্য না পাওয়ায় তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করলো এভাবেই আল্লাহ ঈসা (আঃ) কে উঠিয়ে নিলেন।
ঈসা (আঃ) চলে যাওয়ার পর উনার দাওয়াত প্রচার শুরু করলেন উনার সাহাবীরা তাদেরকে হাওয়ারী বলা হত। এদের মধ্যে মোট ১২ জন নির্ভরযোগ্য হাওয়ারির নাম পাওয়া যায়। তারা ঈসা (আঃ) এর শিক্ষা ও বাণী সংরক্ষণ করতেন এদের মধ্যে ৪ জনের, মথি, মার্ক, লূক ও ইউহান্না’র ইনজীলকেই খ্রিস্টানরা ধর্মের মূল হিসেবে বিশ্বাস করে।
অবাক করার বিষয় হল খ্রিস্টানদের মূল বিশ্বাস ত্রিত্ববাদকে বাইবেলের কোন কিতাবেই স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায় না। বর্তমান খ্রিস্টানরা যে মতবাদে বিশ্বাসী আসলে তার প্রবক্তা ঈসা (আঃ) নন বরং সেন্ট পৌল এই নিয়মনীতি তথা ঈসা (আঃ) এর নাম ব্যবহার করে এক নিজস্ব চিন্তা ধারা প্রচার করেন।
ঈসা (আঃ) কে উঠিয়ে নেয়ার পর তার ১২ জন হাওয়ারি খুব অত্যাচার নির্মমতা সহ্য করে দাওয়াত পরিচালনা করছিলেন। এর কিছু বছর পর ইহুদিদের প্রসিদ্ধ রাবি শৌল হটাৎ খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহন করে নিল এবং নাম বদলে নতুন নাম রাখলো পৌল। আসল ঘটনা ছিল পৌল যখন দেখল কোন ভাবেই ঈসা (আঃ) এর এই নতুন ধর্মকে দমানো যাচ্ছে না তাই সে তিন বছরের জন্য আরবে (দক্ষিণ শামে) ভ্রমন করে এক নতুন বিশ্বাস ও চিন্তা চেতনা নিয়ে এলো খৃষ্ট ধর্মকে বিকৃত করার জন্য। এসে সে দাবী করলো যে দামেস্কের রাস্তায় আকাশ থেকে ঈসা (আঃ) নেমে এসে তাকে খ্রিস্টান ধর্মের দীক্ষা দিল। এই ঘটনা সত্ত্বেও ঈসা (আঃ) এর হাওয়ারীরা তাকে বিশ্বাস করলো না তবে এক প্রসিদ্ধ হাওয়ারি বার্নাবাস তাকে মেনে নিল এবং এক সাথে উভয়ে দাওয়াত শুরু করল।
দাওয়াতের কাজ চলছে তবে একসময় খ্রিস্ট ধর্মের নেতা সেজে বসা পল (মূলত ইহুদি) একত্ববাদী খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থ ইঞ্জিলকে বিকৃত করে এতে অযৌক্তিক ত্রিত্ববাদ চালু করায় বিশাল বিরোধ লাগল বার্নাবাস ও পৌলের মধ্যে। পৌল একদম আলাদা এক বিশ্বাস ছড়াচ্ছে, সে ত্রিত্ব নামে এক আজিব আকিদায় বিশ্বাস করে,ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর পুত্র বলে প্রচার করল। তাই বার্নাবাস সহ বাকি সকল হাওয়ারী তার বিরোধিতা করল।
![]() |
উদ্ধার হওয়া বার্নাবাস বাইবেল |
বিরোধ আস্তে আস্তে চরমে পৌঁছল। ইহুদি খ্রিস্টানরা (যারা ইহুদি থেকে খৃস্টান হয়েছে) হাওয়ারীদের পক্ষে ছিল তবে অনেক নতুন খ্রিস্টান তথা ইউরোপীয় খ্রিস্টানরা পৌলের পক্ষে ছিল। এইভাবেই খৃষ্টধর্মের প্রথম তিন শতাব্দীতে পৌলীয় চিন্তাধারার বিরুদ্ধমত ছিল অনেক। চতুর্থ শতাব্দীতে আরিউস ও তার অনুসারীরা ত্রিত্ববাদের বিরুদ্ধে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ফলে পৌলবাদ পুরো দমিয়ে গেল ও গোপনে পালিত হচ্ছিল।
![]() |
প্যাগান রোমের কলসিয়াম স্টেডিয়াম |
![]() |
কলসিয়াম স্টেডিয়ামে খ্রিস্টানদের হত্যাকে দর্শকরা উপভোগ করছে |
![]() |
পিটার মনে করে রোমান গড জুপিটারের পাকে চুমু খাচ্ছে ক্যাথোলিকরা |
![]() |
ইবলিশের কারসাজি তাই রূপ একই নাম ও সংস্কৃতি ভিন্ন |
জার্মানরাও এই সময় পৌলবাদ গ্রহন করল। পোপ এর ক্ষমতা রাজা থেকেও বেশি হওয়ায় কন্সতান্তিন রাজ্য চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলো। এভাবে এক সময় বর্বর জার্মানিদের হাতে পশ্চিম রোমান অনিরাপদ হয়ে গেলে কন্সতান্তিন তার দ্বিতীয় রাজধানী কে কন্সতান্তিনোপল নাম দিয়ে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের প্রারম্ভ করে।
![]() |
অর্থডোক্স, ক্যাথোলিক ও প্রোটেস্টেন্টদের মধ্যে পার্থক্য |
![]() |
বাম দিকে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্য ডান দিকে পূর্ব রোমান বা বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য |
![]() |
বামদিকে প্যাট্রিয়াক ডানদিকে পোপ |
লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed
ট্যাগ
|
রোমান, রোমক, বাইজেন্টাইন, অর্থোডক্স, রোমান ক্যাথোলিক, সূরা রুম, রোমান এম্পায়ার, ত্রিত্ববাদ, ক্রুসেড, আখেরী জামানা, ইহুদি, মালহামা, ঈসা
|