![]() |
পঞ্চম অনুচ্ছেদ |
রুম শব্দটা শুনেই আমরা বুঝতে পারি যে, ইতালির শহর ‘রোম’ আর এটাই সঠিক তবে একমাত্র সঠিক না কারন ইসলাম ও মুসলমানরা বিভিন্ন সময় রুম বলতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য বা অর্থোডক্সদের বুঝিয়েছিল। আর এটাই আমি দ্বিতীয় অণুচ্ছেদে প্রমান করার চেষ্টা করেছি।
আমরা দুটি খ্রিস্টান সম্প্রদায় দেখতে পাই একটি হল সম্পূর্ণ কুফুরি প্যাগান দের মত তথা ক্যাথোলিকরা আর অন্যটি হল ঈসা (আঃ) এর মূল শিক্ষার সাথে বাতিল মিলিয়ে এক বিকৃত খ্রিস্টান সম্প্রদায় বা অর্থোডক্সরা।
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদি ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।
(সূরা আল-মায়িদাহ-৫১)
কুরআনে কারিমের এই আয়াতে আল্লাহ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে বন্ধুত্ব করতে মানা করেছেন। আর এটা বলা হয়েছে যে তারা একে অপরের বন্ধু। এখানে أَوْلِيَاء (আউলিয়া) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে অর্থাৎ তারা একে অপরের মিত্র সহযোগী। এরা একে অপর কে বিপদে ছেঁড়ে পালিয়ে যায় না। যেমন-“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের (আউলিয়া) সহায়ক” (সুরা তাওবা-৭১)। অন্যদিক বলা হয়েছে “মুনাফেক নর-নারী সবাই একই রকমের” (সুরা তাওবা-৬৭) এখানে আউলিয়া শব্দ ব্যবহার করা হয়নি।
আমরা বুঝতে পারি যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা একে উপরের বন্ধু (আউলিয়া) আর যে সকল ইহুদি-খ্রিস্টানরা একে অপরের সহায়ক তাদেরকে মুসলমানরা বন্ধু রূপে গ্রহন করতে পারবে না। এখানে সকল খ্রিস্টানদের কে বুঝানো হয় নি শুধু তাদের কে বুঝানো হয়েছে যারা ইহুদিদের সাথে বন্ধুত্ব করেছে।
নিম্নের আয়াতের উপরই নির্ভর করছে কারা আমাদের ভবিষ্যতের বন্ধু বা মিত্র হবে-
তুমি অবশ্যই মুসলিমদের প্রতি শত্রুতায় মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা কঠোর পাবে ইহুদিদেরকে এবং সেই সমস্ত লোককে, যারা (প্রকাশ্যে) শিরক করে এবং তুমি মানুষের মধ্যে মুসলিমদের সাথে বন্ধুত্বে সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী পাবে তাদেরকে, যারা নিজেদেরকে নাসার বলে। এর কারন এই যে, তাদের মধ্যে অনেক ইমল-অনুরাগী এবং সংসার-বিরাগী দরবেশ রয়েছে। আরও এক কারণ হল যে, তারা অহংকার করে না। (সূরা মায়িদা-৮২)
খ্রিস্টানদের মধ্যে বহু লোক দুনিয়ার মোহ থেকে মুক্ত। তাই তাদের অন্তরে সত্য গ্রহণের মানসিকতা বেশি। খ্রিস্টানদেরকে যে বন্ধুত্বে মুসলিমদের নিকটবর্তী বলা হয়েছে, তারই একটা ফল ছিল এই যে, মক্কার মুশরিকদের সর্বাত্মক জুলুমে যখন মুসলিমদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন বহু মুসলিম হাবশায় চলে যায় এবং বাদশাহ নাজ্জাশীর আশ্রয় গ্রহন করে। নাজ্জাশী তো বটেই, হাবশার জনগণও তখন তাদের সাথে অত্যন্ত সম্মানজনক ও সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করেছিল।
প্রকাশ থাকে যে, এ স্থলে কেবল সেই সকল খ্রিস্টানদেরকেই মুসলিমদের বন্ধুমনস্ক বলা হয়েছে, যারা নিজ ধর্মের প্রকৃত অনুসারী এবং সেমতে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকে আর অহংকার-অহমিকা থেকে অন্তরকে মুক্ত রাখে।
(আয়াতের অনুবাদ ও তাফসীর সরাসরি- তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন (লেখক- মুফতি তাকী উসমানী দা.বা) থেকে নেয়া হল)
ইউরোপ ও আমেরিকা হল নাস্তিকদের জন্য স্বর্গতুল্য, এই সকল ক্যাথোলিক ও প্রোটেস্টেন্ট খ্রিস্টান দেশে নাস্তিকতা খুব ভালো চোখে দেখা হয় অন্য দিকে রাশিয়া নাস্তিকের অবস্থা খুবই করুন। মাস খানেক আগে চ্যাটে -“কোন স্রষ্টা নেই’ মন্তব্য করার জন্য এক নাস্তিককে রাশিয়ান আদালত ধর্মীয় অনুভূতি তে আঘাত করার দায়ে জেলে প্রেরন করে।
![]() |
৭৪% হোমোসেক্সুয়ালিটির এগেইন্সটে মত দিয়েছে |
এদের মধ্যে শুধু অর্থোডক্স মধ্যেই দেখতে পাই যে তাদের মধ্যে আলেম রয়েছে, এরা দাড়িও রাখে দুনিয়ার মোহ থেকে দূরে থাকে, এরাই দরবেশের মত জীবন যাপন করে, রাষ্ট্র পর্যায়ের সকল সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম কে প্রাধান্য দেই। অন্যদিকে পুরো ক্যাথোলিক দেশে একজন ব্যক্তিও এমন পাওয়া যায় না যারা ধর্মীয় কারনে দাড়ি রেখেছে, এদের সাথে দূর দূর পর্যন্ত নাসার ধর্মের কোণ মিল নেই। ধর্ম যেন বছরের একদিনের আনুষ্ঠানিকতা আর এই দিনেই একজন দাড়ি ওয়ালা লোক আকাশ থেকে নেমে আসে। হুমু শুধু কৃত্তিম স্নেটা ক্লস। আমরা জানি এদের মধ্যে কারা একের পর এক দেশ ও জাতির উপর অহংকার ও দম্ভতা দেখিয়া আক্রমণ করছে। এভাবেই দিনকেদিন পশ্চিমা বিশ্বে মসজিদ পুড়িয়ে ফেলে মুসলিমদের অপদস্থ করা হচ্ছে আর রাশিয়াতে মসজিদের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে।
পুরো সিরিজে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরিছে বন্ধু রুম বলতে অর্থোডক্স খ্রিস্টানের কেন্দ্র বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য কে বুঝানো হত এখন অর্থোডক্স খ্রিস্টানের কেন্দ্র হল রাশিয়া।
বর্তমান অবস্থা
সর্বশেষ, বিশ্বে দুই কেন্দ্রকরন হয়ে গেছে, এক দিকে আমেরিকা-ন্যাটো অন্যদিকে রাশিয়া-চায়না। কাগুজে কলমে মিলিটারি দিক থেকে আমেরিকা-ন্যাটো জোট বেশি শক্তিশালী। অর্থনীতির দিক থেকে IMF কে ট্যাকেল দেওয়ার জন্য রাশিয়া-চীন জোট BRICS গঠন করেছে। রাশিয়া কে কোণঠাসা করে রাখতে রাশিয়ার চারপাশেই মিসাইল বসানো হয়েছে আর দক্ষিণ চীন সাগরেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইন্ডিয়া ইরান এতদিন স্পষ্ট ছিল না কোণ জোটে যাবে। তবে ইরান প্রায় নিশ্চিত আমেরিকান জোটে নাম লিখিয়েছে বিশেষ করে যখন Russia & OPEC (ROPEC) তেল ফ্রিজ করছে যাতে তেলের দাম বাড়ে কিন্তু ইরান রাশিয়ার বিরোধিতা করে একাই ডলারের ধ্বস থামিয়ে রেখেছে পুরো বিশ্বকে তেলে সয়লাব করে। মধ্যপ্রাচ্যে কে আগে সৌদিআরবের মাধ্যমে আমেরিকা নিয়ন্ত্রণ করতো এখন তারা ইরানের দিকে ঝুকে গেছে আর ইয়ামানে শিয়াদের উথান সৌদিকে এক জায়গায় আবদ্ধ করে রেখেছে। ইউরোপিইয় ইউনিয়ন সৌদি’র উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে অন্যদিকে প্রথম বারের মত রাশিয়া থেকে পাকিস্তান অস্ত্র কিনছে। পাকিস্তান (একমাত্র মুসলিম পরমানু অস্ত্রধর) আগেই চীনের সাথে আছে। সেন্ট্রাল এশিয়ার প্রায় সকল দেশ রাশিয়ান জোটের সাথে আছে। ইন্ডিয়া-ইসরাইল এক সাথেই আছে আর ইরানের সাথে ইন্ডিয়ার সম্পর্কের উন্নয়ন হচ্ছে। ক্রামিয়া কে ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে ব্ল্যাক সি সম্পূর্ণ রাশিয়ার দখলে। ক্রামিয়া থেকে কনস্টান্টিনোপল একদম সোজা লাইনে পড়ে। অন্যদিকে ক্যাস্পিয়ান সাগরেও রাশিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেছে।
বি.দ্রঃ আমি শুধু বিষয়টা উপস্থাপন করেছি, কোন উপসংহার চাপিয়ে দিচ্ছি না। আমি এইভাবেই পর্যালোচনা করে আমার ফাইন্ডিংসটা পেয়েছি। পুরো সিরিজ না পড়ে কমেন্টে নিজের মতকে চাপিয়ে দিবেন না। ভিন্ন মত হলে অবশ্যই আমার পয়েন্ট গুলো প্রথমে আপনাকে খণ্ডাতে হবে। বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিস্তারিত লিখতে গেলে একটা আলাদা সিরিজ হয়ে যাবে তাই সংক্ষেপে তুলে ধরলাম। বিশ্ব পরিস্থিতি খুব তারাতারি পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে? কিভাবে অতি দ্রুত অনেক কিছু হয়ে যেতে পারে, যেমন মুসলিম রাশিয়া জোট, ডলারের ধ্বস, বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন।
সূত্রঃ
প্রধানত নেট থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছি। অনেক ওয়েবের সহায়তা নিয়েছি সব গুলো উল্লেখ করা কষ্টসাধ্য। এই সিরিজের সহায়ক গ্রন্থপঞ্জী-
- ইসলামের ইতিহাস- আকবার খান নজিদাবাদী রহ
- বিশ্ব সভ্যতা: প্রাচীন যুগ- এ কে এম শাহনেওয়াজ
- বিশ্ব সভ্যতা: মধ্য যুগ- এ কে এম শাহনেওয়াজ
- ইসলাম প্রচারের ইতিহাস – শাইখ মুহাম্মদ ইসমাইল পানিপথী রহিমাহুল্লাহ
- খৃষ্টধর্মের স্বরূপ- মুফতি ত্বকি উসামানি হাফিজাহুল্লাহ
- মানুষের ইতিহাস (আধুনিক ইউরোপ)- আবদুল হালিম
- ক্রুসেড – শাহাদাত হোসেন খান
- AN INTERPRETATION OF DANIEL -GEORGE M. HARTON
- তৃতীয় সহস্রাব্দের কিয়ামত- ড. আজিজ মোস্তফা কামিল
- A History of Christianity by Paul Johnson
- Is The age of the Antichrist, Martyrdom, Rapture and The Millennial Kingdom Coming? (I), & (II) – Paul C. Jong
- The TABERNACLE: A Detailed Portrait of Jesus Christ (I) & (II)- Paul C. Jong
- The Roman Empire by Isaac Asimov
লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed
ট্যাগ
|
রোমান, রোমক, বাইজেন্টাইন, অর্থোডক্স, রোমান ক্যাথোলিক, সূরা রুম, রোমান এম্পায়ার, ত্রিত্ববাদ, ক্রুসেড, আখেরী জামানা, ইহুদি, মালহামা, ঈসা, কনস্টান্টিনোপল, ইহুদি খ্রিস্টান, রাশিয়া, আরমাগেডন, আর্মাগেডন
|