![]() |
চতুর্থ অনুচ্ছেদ |
ক্যাথোলিক ও প্রটেস্ট্যান্টদের বিশ্বাস হল ঈসা (আঃ) ইহুদিদের মাঝে জেরুজালেম প্রেরিত হয়েছিলেন তাই ভবিষ্যতে তার আগমন জেরুজালেমে ইহুদিদের মাঝে হবে। ইহুদিরা তার হাতে খ্রিস্টান হয়ে যাবে, তারা হবে প্রায় দেড় লক্ষ। আর যারা খ্রিস্টান হবে না তাদেরকে হত্যা করা হবে। তারপরে ঈসা (আঃ) এর নেতৃত্বে পৃথিবী শাসিত হবে ১ হাজার বছর। এই কারনেই সাধারণ খ্রিস্টানরা জেরুজালেমে ইহুদিদের পত্যাবর্তনকে সমর্থন করে। যদিও জায়নিস্ট খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। বাইবেলের বর্ণনায়-
“দেখো আল্লাহর বান্দাদের কপালে মোহর মারার আগ পর্যন্ত জমিন-সমুদ্রে ক্ষতি হয়, এমন কিছু করো না। যাদের উপর মহর পড়বে, তাদের সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৪ হাজার। এরা বনী ইসরাইলের প্রতিটি গোত্র থেকে।” (দানিয়ালের ভ্রমণ বিশ্লেষণ, নাশিদ হান্না-৬১)
ইহুদি-খ্রিস্টানদের মহাযুদ্ধ নিয়ে বিশ্বাস
তালমুদে আছে- ইহুদিদের শেষ সাম্রাজ্যের প্রথম প্রজন্ম সম্মুখীন হবে এক যুদ্ধের। এ যুদ্ধে দুনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ লোক ধ্বংস হয়ে যাবে। ইহুদিরা বিজয়ের মাধ্যমে যে সকল যুদ্ধাস্ত্র অর্জন করবে, তারা সেগুলোকে সাত বছর পর্যন্ত জ্বালাতে থাকবে।
যুদ্ধ কবে হতে পারে? খুব সহজ উত্তর দিয়েছেন জায়নিস্ট লিডার পেট রবার্টশন-“ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন হওয়াই হল একটি ঘোষণা যে, বিশ্বের সমাপ্তি লগ্ন এসে গেছে। যুদ্ধটি জেরুজালেমে হবে যখন সকল দেশ একত্র হয়ে ইহুদিদের কাছ থেকে জেরুজালেম ছিনিয়ে নিতে চাইবে।”
মালহামা বা মহাযুদ্ধ কে খ্রিস্টানরা আরমাগেডন বলে থাকে আর ইহুদিরা এর মূল শব্দ হারমোগেদডন বলে। ইহুদিরা নিউ টেস্টেমেন্টে বিশ্বাস করেনা আর খ্রিস্টানরা সাধারনত নতুন ও পুরাতন উভয় নিয়মে বিশ্বাস করে। দানিয়াল ও হিযকিল অধ্যায় হল পুরাতন নিয়মের আর রেভেলেশান অধ্যায় হল নতুন নিয়মের।
ইসরাইলে দাজ্জালের সৈন্যরা মিলিত হবে। আর তখন দক্ষিণাঞ্চলের রাজা (উত্তর আফ্রিকা ও আরব) দাজ্জালের সৈন্যদের উপর আক্রমণ করবে। তারপর উত্তরাঞ্চলের রাজা (রাশিয়া ও তার এলিস) উত্তর দিক থেকে সৈন্য পাঠিয়ে ভয়ংকর আক্রমণ করবে দাজ্জালি সৈন্যদের উপর।
“শেষ জামানায়, দক্ষিনের রাজা যুদ্ধে জড়িয়ে পরবে। আর উত্তরের রাজা রথ, অশ্বারোহী ও বৃহৎ জাহাজ নিয়ে ঝড়বেগে তার উপর হামলে পরবে, সে বাধ ভাঙ্গা বন্যার মত করে অনেক দেশে অভিযান চালাবে তছনছ করে দিবে।” (দানিয়াল ১১:৪০)
প্রাচ্যের রাজারা একত্র হয়ে দাজ্জালের সৈন্যদের উপর হামলা করবে। এত বড় আর্মি হবে যা ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি এই আর্মি হবে এশিয়ার কয়েকদেশের মিলিত শক্তি। সৈন্য বাহিনী পশ্চিমের দিকে অগ্রসর হবে মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছে দাজ্জালের পশ্চিমা বাহিনীর সাথে এদের সংঘাত হবে।
![]() |
রেভেলসন ১৬ঃ ১২ |
এরপর ষষ্ঠদূত তার বাটিটি নিয়ে মহানদী ইউফ্রেটিসের ওপর ঢেলে দিলেন। তাতে নদীর জল শুকিয়ে গেল, ও প্রাচ্যের রাজাদের জন্য আসার পথ প্রস্তুত হল। (Revelation 16:12)
দাজ্জাল গোয়েন্দা তথ্য পাবে যে দূর প্রাচ্য ও উত্তর এশিয়ায় সৈন্য একত্র হচ্ছে। প্রাচ্যের রাজার সৈন্য সংখ্যা হবে ২০ কোটি। এই তথ্য পেয়ে সামাজিক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পরবে।
![]() |
রেভেলসন ১৬ঃ ১২-১৬ |
দানিয়াল (৩৬-৪৫) অনুচ্ছেদে উত্তরের রাজা বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে এটা বের করতে রীতি মত বিশাল বিশাল গবেষণা হয়েছে। তাওরাত ও বাইবেল আক্ষরিক অর্থের চেয়ে বেশি রূপক অর্থ প্রকাশ করে। তাই সব সময় বিভিন্ন আলাদা তাবির নিয়ে মতভিন্নতা দেখা দেয়। দানিয়াল ও হিযকিলের কিছু অনুচ্ছেদ খুব গুরুত্বপূর্ণ এটার উপর নির্ভর করে কি হতে যাচ্ছে যেমন, দাজ্জালের সৈন্য কে হবে ক্যাথোলিক না অর্থোডক্স, চিরু শত্রু ইহুদিদের সাথে মিত্রতা করা যাবে কি না। যদি কেউ করে ফেলে তাহলে তাকে ধর্মত্যাগী খ্রিস্টান বলে আখ্যা দেয়া যাবে কিনা। আর ইসরাইলের মিত্রতার কারনেই অর্থোডক্সরা বিশেষ করে আরবের অর্থোডক্সা ক্যাথোলিক দের কে খ্রিস্টান বলেই মনে করে না। George M. Harton, Herman Hoyt, J. Dwight Pentecost, Lehman Strauss, and Leon Wood সহ ক্যাথোলিক ও ব্যাপ্টিস্টদের বেশির ভাগ পেস্তররা বলেন উত্তরের রাজা হল সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থাৎ বর্তমান রাশিয়া। তাদের বিশ্বাস দানিয়াল (৪০-৪৫) এ বলা হয়েছে “দাজ্জাল আরব ও রাশিয়ার সম্মলিত শক্তি কে পরাজিত করবে তারপর জেরুজালেম কে ইহুদি মুক্ত করবে” আরো বলা হয়েছে যে সিরিয়া কে কেন্দ্র করে রাশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যে আগমন হবে।
যাইহোক এখন খ্রিস্টান ও ইহুদি এস্কেটেলোজির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় Ezekiel (যিহিস্কেল) ৩৮-৩৯ অণুচ্ছেদ দেখলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে। সেখানে বলা হয়েছে,
![]() |
ক্যাথোলিকের বিশ্বাস রাশিয়া সিরিয়ায় প্রবেশ করা মানে খ্রিস্টের আগমন সন্নিকটে |
এই অনুচ্ছেদে অনেক গুলো শব্দ দিয়ে রাশিয়াকে বুঝানো হয়েছে, যেমন রুশ (রাশিয়া), মাশক (মস্কো), তুরাল (রাশিয়ার প্রাচীন শহর টবলাস্ক)। পারস্য শব্দকে অনেকে ইরান দিয়ে তাবির করেছে তবে স্পষ্ট ভাবে এখানে দূর পারস্যকে বুঝাচ্ছে যা প্রাচ্যের রাজ্যের সাথে সম্পৃক্ত হবে অর্থাৎ খোরাসান, পাকিস্তান, আফগানিস্তান। কুশ –মানে সুদান (ইথিওপিয়া), পূট- উত্তর আফ্রিকা। অর্থাৎ রাশিয়ার সহযোগি হবে খোরাসান, সুদান, উত্তর আফ্রিকা। অন্যদিকে গোমর বুঝাচ্ছে জার্মানি-ফ্রান্স, গ্লাটিয়া হল তুর্কী। এদিকে তোগমর্মের (ককেশাসের) কুল অন্যদিকে তার সেনাদলও থাকবে অর্থাৎ আরমেনিয়া ও পুরো ন্যাটো মেম্বারা থাকবে। এই ছাড়া পুরো অধ্যায়ে আসুর ও বাবেল এর নাম অর্থাৎ ইরাক এসেছে। ইরাক একদম ধ্বংস হয়ে যাবে বলা হয়েছে।
রাশিয়াকে বিশেষ ভাবে বলা হচ্ছে-
নিজেকে প্রস্তুত কর, তৈরি হও তুমি নিজে এবং তোমার সকল সহযোগী ও জড়ো হও আর তুমি তাদের প্রহরি হয়ে যাও তাদের কে গার্ড কর। (যিহিস্কেল ৩৮: ১১-১৭)
![]() |
ভাল্লুক মধ্যপ্রাচ্যে আসছে আমেরিকা ইসরাইল পতিহত করছে (কাল্পনিক ছবি) |
এখানে সিবা মানে সৌদি আরব, দেদান হল কুয়েত অন্যদিকে রূপক অর্থে ‘তরশিশ ও তরুন সিংহ’ দিয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া কে বুঝাচ্ছে।
লিখেছেনঃ Kaisar Ahmed
ট্যাগ
|
রোমান, রোমক, বাইজেন্টাইন, অর্থোডক্স, রোমান ক্যাথোলিক, সূরা রুম, রোমান এম্পায়ার, ত্রিত্ববাদ, ক্রুসেড, আখেরী জামানা, ইহুদি, মালহামা, ঈসা, কনস্টান্টিনোপল, ইহুদি খ্রিস্টান, রাশিয়া, আরমাগেডন, আর্মাগেডন
|